লেজেগোবরে এমপিওভুক্তি : মন্ত্রী-সাংসদদের একের পর এক ডিও - দৈনিকশিক্ষা

লেজেগোবরে এমপিওভুক্তি : মন্ত্রী-সাংসদদের একের পর এক ডিও

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর যাচাইবাছাই শেষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু প্রায় ৩৬৫ দিনের যাচাই শেষে গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এমপিওভুক্তির প্রকাশিত তালিকায় খোদ সরকার দলের সংসদ সদস্যরাই ব্যাপক আপত্তি তুলেছেন। এরফলে পুরো বিষয়টি নিয়ে হ য ব র ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এরকম ত্রুটিপূর্ণ এমপিওভুক্তির তালিকা দেখে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা শুরু থেকেই নাখোশ ছিলেন। নতুন করে যুক্ত হয়েছেন সরকার দলের সংসদ সংসদরা। তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন। একইসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীকে একের পর এক ‘ডিও’ লেটার দিচ্ছেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কেলেঙ্কারিযুক্ত এমপিওর তালিকা নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে রয়েছেন। সংসদ সদস্যদের চিঠিকে তারা আমলেই নিচ্ছেন না।

এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা ঘোষণার পর নতুন করে তথ্য যাচাইয়ে নেমেছে শিক্ষাবোর্ড। এরফলে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিরা আনন্দের পরিবর্তে ফাইল ‘বগলদাবা’ করে শিক্ষাবোর্ডে দৌড়াচ্ছেন। এতে শিক্ষকদের হয়রানি বাড়ছে। এতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এমপিওর তালিকা প্রকাশের পরও যদি প্রতিষ্ঠান যাচাইবাছাই করতে হয় তাহলে এরআগে বছরজুড়ে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ আমলারা কি করেছেন?

একদিকে নতুন করে যাচাইবাছাই চলছে। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী এমপিওভুক্তির তালিকায় কেলেঙ্কারি মানতে নারাজ। তার মতে, ২,৭০০ বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন এমপিও হয়েছে। সেখানে দুয়েকটি এদিক-সেদিক হতেই পারে। এটাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখা উদ্দেশ্যমূলক। তবে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরাই যে ‘ডিও’ লেটার দিয়ে বলেছেন, ঠিকমতো এমপিও হয়নি। সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান এমপিও হয়েছে। এখানে কার কী বাদ গেল এটা দেখা হয়নি।

তবে যতদিন যাচ্ছে ততই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে আমলাদের হরেক রকম ভুলের খতিয়ান বের হয়ে আসছে। বিশেষ করে তালিকা ঘোষণার পর যাচাইবাছাই করায় অসন্তোষ আরো বেড়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে আবেদন নিয়ে তাহলে কি করলেন কর্মকর্তারা?

নতুন এমপিও পেয়েও তারা জানেন না কবে বেতনভাতা পাওয়া শুরু করবেন?

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন এমপিওভুক্ত করতে পারা ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বড় কাজ। কর্মকর্তারা নাওয়া-খাওয়া ভুলে এই কাজ করেছেন। এখন যদি তাদের এই পরিশ্রমের কাজ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে তাহলে এই কর্মকর্তাদের নিয়ে ভবিষ্যতে বড় কোনো কাজ করানো কঠিন হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রায় অস্তিত্বহীন, মাছবাজারের মধ্যে ও ভুঁইফোঁড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এরপরই বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে ডিও দিয়েছেন। নীতিমালার দোহাই দিয়ে এমপিও করতে গিয়ে বেশ কিছু অযোগ্য প্রতিষ্ঠান যেমন এমপিও পেয়েছে তেমনি বাদ পড়েছে যোগ্য প্রতিষ্ঠানও। তাই এখন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিরা যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন।

ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, চর জাংগালিয়া হাইস্কুল এন্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখা এমপিওভুক্ত নয়। ২০১৮ সালে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার ৮৮.১০ এবং চলতি বছর পাসের হার ছিল ৮৫.৭১ শতাংশ। তবু প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়নি। এরকম পরিস্থিতিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটিকে এমপিওভুক্ত করতে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটিকে এমপিওভুক্ত করা তার নির্বাচনী ওয়াদা ছিল।

দিনাজপুর-১ এর সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল তার চিঠিতে লিখেছেন, তার নির্বাচনী এলাকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত না হয়ে অন্যগুলো হয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটা বেদনার।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ডিও লেটার দিয়ে ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করে তার নির্বাচনী এলাকা রাজশাহী-৬ এর বাঘা উপজেলার ‘আলহাজ এরশাদ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ’-এর ডিগ্রি স্তরকে এমপিওভুক্তি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবেদন করেছেন।

দিনাজপুর ৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক তার চিঠিতে তুলে ধরেছেন কীভাবে যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এমপিও পাওয়া এবং বাদ পড়া দুটি প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন তার চিঠিতে। গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার তার চিঠিতে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী নারী শিক্ষায় অনগ্রসর নিভৃত পল্লী অঞ্চলে অবস্থিত ‘পাবনাপুর মহিলা কলেজ’ বিশেষ বিবেচনায় এমপিও দেয়ার জোর সুপারিশ করেন। কক্সবাজার-৩ এর সংসদ সদস্য আলহাজ সাইমুম সরওয়ার কমল শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে তার নির্বাচনী এলাকার ‘আল-গিফারি (রা.) আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা দীর্ঘ ২৯ বছরেও এমপিও পায়নি। এজন্য তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির পুনঃবিবেচনা করার জন্য। সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ও পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ডিও লেটার দিয়ে ইন্দুরকানী উপজেলার ‘পাড়েরহাট আর এল (রাজলক্ষী) মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ’-এর উচ্চ মাধ্যমিক স্তর এমপিও পুনঃবিবেচনার অনুরোধ করেছেন। টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য মো. জোয়াহেরুল ইসলাম ডিও দিয়ে বলেছেন, তার নির্বাচনী এলাকার ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পুনঃবিবেচনার করার জন্য।

অভিজিৎ ভট্টাচার্য 

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045640468597412