শত প্রতিবন্ধতা জয় করেও শঙ্কিত সীমার ভবিষত - দৈনিকশিক্ষা

শত প্রতিবন্ধতা জয় করেও শঙ্কিত সীমার ভবিষত

শামীমা আক্তার লিপি, তালা (সাতক্ষীরা ) থেকে ফিরে |

Simaপডপডপশারীরিক প্রতিবন্ধকতা, হতদরিদ্র বাবার সংসারে অভাব-অনটন, অপর এক প্রতিবন্ধী বোন- কিছুই থামাতে পারেনি তাকে। দরিদ্র পিতা-মাতার সহযোগিতা আর প্রবল ইচ্ছা শক্তিতে লেখাপড়ায় অর্জিত হয়েছে সফলতা।

এর ধারাবাহিকতায় একজন আদর্শ শিক্ষক হবার স্বপ্ন তার (!)। তিনি সীমা আক্তার। বয়স ১৮ বছর। শিশুকালে কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয়ে হারিয়েছেন হাত-পায়ের কর্মকক্ষমতা।

পা’ দুটি অসুস্থ্ থাকায় অন্যের সাহায্য ছাড়া চলা-ফেরা করতে পারেন তিনি। সাথে দুই হাতও। তাই পরনির্ভরশীলতাই তার অবলম্বন। এতো কিছুর পরও কোনো কিছুইতেই দমে যাননি সীমা। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

তালা উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের আবদুল আজিজ গোলদারের কন্যা সীমা। চলতি বছর তালা মহিলা ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় এ গ্রেড (৪.০৮) পেয়েছেন। এসএসসি পরীক্ষায়ও স্থানীয় খলিলনগর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আবদুল আজিজ বলেন, ৩ কন্যা সন্তানের মধ্যে সীমা ছোট। বড় কন্যা রোমেছার বিয়ে হয়েছে পাইকগাছা উপজেলার রহিমপুর। ২ কন্যা সীমা ও রেহানা প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকে সীমা ও রেহেনা উভয়ে সুস্থ্ ছিল, তারা স্কুলে যেত। ৩য় শ্রেনিতে পড়ার সময় কঠিন রোগে রেহেনার দুই হাতের কব্জি এবং দুই পায়ের পাতা বাঁকা হয়ে যেতে থাকে।

একই রোগে আক্রান্ত হয়ে সীমারও হাত ও পা’ বাঁকা হয়ে যায়। তাদের চিকিৎসায় সে সময় বিভিন্ন স্থানে ডাক্তার ও কবিরাজ দেখালেও কোনও লাভ হয়নি। খুলনার এক মিশনে নিয়ে গেলে, ৪ বার অপারেশন করালে সীমা ও রেহেনা সুস্থ্ হয়ে যাবে বলে ডাক্তাররা জানায়।

কিন্তু অর্থের অভাব ও পরিস্থিতির কারণে ভূমিহীন আব্দুল আজিজের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। সীমার বাবা পেশায় একজন নসিমন (ইঞ্জিনভ্যান) চালাক। সম্বল বলতে ভিটে মাটিটুকুই। ৪ সদস্যের পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

সীমার মা’ আছিয়া বেগম জানান, ছোট বেলা থেকে সীমার লেখাপড়ার প্রতি খুব ঝোঁক। সীমা অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ি থেকে তালা মহিলা ডিগ্রী কলেজে যেতে সকলের ভ্যান ভাড়া লাগে ১০ টাকা। কিন্তু সীমা প্রতিবন্ধি হওয়ায় কলেজ পর্যন্ত পৌছতে তার লাগে ১৫ টাকা।

প্রতিদিন আসা যাওয়ায় ৩০ টাকা ভ্যান ভাড়াসহ তার লেখা পড়ার অন্য খরচ যোগানো এবং সংসার চালাতে হিমশীম খেতে হয়- তার স্বামী আজিজ গোলদারকে।
তারপরও লেখাপড়ার প্রবল আগ্রহ’র কারণে কোনও রকম খেয়ে-না খেয়ে সীমার লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে গেছেন।

মেধাবী ছাত্রী সীমা আক্তার জানান, অনেকে কষ্ট করে তার পড়াশোনা করতে হয়। ভ্যান চালক পিতার আয় দিয়ে সংসার ভালোভাবে চলেনা। তার সাথে পড়াশোনার খরচ যোগানো আরো কষ্টসাধ্য ব্যপার।

সীমা আরো জানান, লেখাপড়া ভালো করার কারণে, স্কুল ও তার কলেজের শিক্ষকরা তাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিনা টাকায় প্রাইভেট পড়িয়েছেন। তাছাড়া স্কুল ও কলেজের শিক্ষরাও বিভিন্ন সময় নানাবিধ সুযোগ সুবিধা দেওয়ায় লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করা সীমা জানায়, এইচএসসি পাশ করার পর তালা মহিলা ডিগ্রী কলেজ থেকে এবার রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স করার ইচ্ছা তার। ‘আর লেখাপড়া শেষ করে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবো’।

কিন্তু, বর্তমানে পিতার রোজগার কমে যাওয়ায় এবং সংসারে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া ও শিক্ষক হবার স্বপ্ন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে সীমা।
সীমার পিতা আব্দুল আজিজ গোলদার বলেন, আয় রোজগার কমে যাওয়ায় তার পক্ষ থেকে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া হয়তো আর সম্ভব হবে না। কিন্তু যদি সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা দেয়া হয় তাহলে হয়তো হতভাগ্য সীমার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।

এজন্য তিনি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।

এব্যাপার তালা মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুর রহমান জানান, মেধাবী ছাত্রী সীমা আক্তার শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় খুব কষ্ট করে সে লেখাপড়া করেছে। তার লেখাপড়ার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে সেসময় যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, সীমা মেধাবী এবং খুব ভালো মেয়ে। লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারলে ভবিষ্যতে তার শিক্ষক হবার স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব।

খলিলনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রভাষক প্রণব ঘোষ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। যা এখনও চলমান থাকার কথা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য লিয়াকত গাজী জানান, তার উচ্চ শিক্ষায় আমার সহযোগিতার ইচ্ছা আছে। সীমার গ্রামের অনেকেই এখন সরকারি চাকুরিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আছেন, তাদের সহযোগিতা পেলে সীমার সীমাহীন কষ্টের দিন শেষ হবে।

সীমার গ্রামের মানুষ সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও তালা উপজেলায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদকে শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী গাজী মোমিন উদ্দীন বলেন, মেয়েটিকে সব ধরণের সহযোগিতা করব।

সীমা চায়, ভালোভাবে লেখাপড়া শিখে সে আর সকলের মত দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করবে, মানুষ গড়ার কারিগর হবে।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068559646606445