শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য খাদ্যাভ্যাসে যে পরিবর্তন আনা জরুরি - দৈনিকশিক্ষা

শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য খাদ্যাভ্যাসে যে পরিবর্তন আনা জরুরি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সুস্থ থাকার জন্য খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। পৃথিবীকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে একটি ডায়েট প্রস্তুত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা দিয়ে সামনে দশকগুলোতে একশ' কোটিরও বেশি মানুষকে খাওয়ানো যাবে। আর এটা সম্ভব হবে আমাদের গ্রহের কোন ক্ষতি না করেই।

সামনের দশকগুলোতে কোটি কোটি মানুষের খাদ্য সরবরাহ কিভাবে করা যাবে সেটা নিয়েই এতোদিন গবেষণা করছিলেন বিজ্ঞানীরা। আমরা যেসব খাবারে আমাদের প্লেট ভরিয়ে রাখি, সেখানে বড় ধরণের পরিবর্তন আনা দরকার বলে মনে করেন তারা। অবশেষে তারা একটি উপায় বের করেছেন। আর সেটা হল "দ্য প্লানেটারি হেলথ ডায়েট" অর্থাৎ পৃথিবী সুরক্ষায় স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মাধ্যমে।

এই ডায়েটটি তৈরি করা হয়েছে মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার বাদ না দিয়েই। তবে প্রোটিন চাহিদার একটা বড় অংশ মেটাতে সেখানে বাদাম, বিভিন্ন ধরণের ডাল আর বীজ যুক্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের পরামর্শ হল ডায়েট থেকে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে বিকল্প প্রোটিনের উৎস্য খোঁজা। যেসব পুষ্টিকর খাবার আমরা এড়িয়ে যেতে চাই সেগুলোর প্রতি আগ্রহ জন্মানোর ওপরও তারা জোর দেন।

খাদ্যাভ্যাসে কীধরণের পরিবর্তন আনতে হবে? 

আপনি যদি প্রতিদিন মাংস খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার ডায়েটে বড় ধরণের পরিবর্তন আনা জরুরি। তার মানে এই নয় যে, আর মাংসই খাবেননা। মাংস খাবেন, তবে পরিমিত হারে। যেমন রেড মিটের কোন খাবার যেমন বার্গার যদি খেতেই হয় তাহলে সেটা সপ্তাহে একদিন খাবেন। বড় আকারের স্টেক মাসে একবারের বেশি খাবেননা।
এছাড়া সপ্তাহের অন্য আরেকদিন মাছ বা মুরগির মাংস দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারেন।

আর বাকি দিনগুলোতে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে হবে বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবার খেয়ে। এক্ষেত্রে গবেষকরা প্রতিদিন বাদাম, বীজ বা ডাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া নানা ধরণের ফল এবং সবজি খাওয়া বাড়ানোর কথাও জানান তারা। যেন সেটা প্রতিবেলার খাবার প্লেটের অন্তত অর্ধেক অংশ জুড়ে থাকে। এছাড়া শ্বেতসারযুক্ত খাবার যেমন আলু বা কাসাভাও ডায়েটে যুক্ত করা যেতে পারে। খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরণের শস্য, ডাল ও বীজ যোগ করতে হবে।

ডায়েটের পূর্ণ তালিকা:
আপনি প্রতিদিন কোন কোন খাবার কি পরিমাণে খেতে পারবেন সেটা জেনে নিন।

* বাদাম - দিনে ৫০ গ্রাম।

*  সিমের বিচি, ছোলা, বিভিন্ন ধরণের ডাল- দিনে ৭৫ গ্রাম।

* মাছ - দিনে ২৮ গ্রাম।

* ডিম - প্রতিদিন ১৩ গ্রাম (সপ্তাহে একটি অথবা দুটি ডিমের বেশি নয়)

*  মাংস - লাল মাংস দিনে ১৪ গ্রাম এবং মুরগীর মাংস দিনে ২৯ গ্রাম।

*  কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ শস্যজাতীয় খাবার যেমন রুটি এবং চাল দিনে ২৩২ গ্রাম খাওয়া যাবে। এছাড়া আলুর মতো অন্যান্য শ্বেতসার সবজি দিনে ৫০ গ্রাম।

* ডেইরি বা দুগ্ধজাত খাবার দিনে ২৫০ গ্রাম। যা কিনা এক গ্লাস দুধের সমান।

৮. শাকসবজি - দিনে ৩০০ গ্রাম এবং ফল ২০০ গ্রাম।

এছাড়া এই ডায়েটে চাইলে ৩১ গ্রাম চিনি এবং ৫০ গ্রাম তেল যেমন জলপাই তেল যোগ করা যাবে।

ফল ও সবজি এগুলোর স্বাদ কি অনেক খারাপ হবে?
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ওয়াল্টার উইলেট বলেছেন, না এসব খাবার মানেই যে স্বাদ ভাল নয়, এমনটা ভাবা ঠিক না।

তিনি নিজেও এক সময় তিন বেলা লাল মাংস খেতেন। অথচ এখন তিনি নিজেকে এই স্বাস্থ্যকর ডায়েটের আওতায় নিয়ে এসেছেন। মিস্টার উইলেট বলেন "খাবারের প্রচুর বৈচিত্র্য রয়েছে, আপনি হাজারো উপায়ে একটার সঙ্গে আরেকটা মিশিয়ে ওই খাবারগুলো গ্রহণ করতে পারেন।"

"আমরা কাউকে স্বাদ থেকে বঞ্চিত করতে এই ডায়েট প্রস্তুত করিনি। বরং এমন কিছু তৈরির চেষ্টা করেছি যেটা খাওয়া সহজ এবং উপভোগ্য।"

এই খাদ্যাভ্যাস কেন প্রয়োজন?

ইট-ল্যান্সেট কমিশনের অংশ হিসাবে বিশ্বের প্রায় ৩৭ জন বিজ্ঞানীর একটি দলকে একত্রিত করা হয়। সেখানে কৃষি থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন সেইসঙ্গে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। টানা দুই বছর গবেষণার পর তারা এই ডায়েট তালিকা তৈরি করেছেন, যেটা পরবর্তীতে ল্যানসেটে প্রকাশ করা হয়।

এখন তাদের লক্ষ্য বিভিন্ন দেশের সরকার এবং ডাব্লুএইচও'র মতো সংস্থাগুলোর কাছে এই গবেষণা ফলাফল পাঠানো। যেন সব জায়গায় এই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনা যায়। ২০১১ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭০০ কোটিতে পৌঁছেছে এবং বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৭৭০ কোটি। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা এক হাজার কোটিতে পৌঁছাতে পারে। যা কিনা বাড়তেই থাকবে। এই বাড়তি জনগোষ্ঠীর খাবারের যোগান নিশ্চিত করতে তারা এই গবেষনাটি করেন। মাংস কমিয়ে এই খাবারগুলো বেছে নেয়া যেতে পারে।

এই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন কি জীবন বাঁচাবে?

গবেষকরা বলছেন, যে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে যেসব অসুস্থতা হয়ে থাকে যেমন, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কয়েক ধরণের ক্যান্সার, এগুলো উন্নত দেশের মানুষ মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সেই হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

এই ডায়েট কি পৃথিবীকে রক্ষায় সাহায্য করবে?
গবেষকদের লক্ষ্য হল সামনের দশক-গুলোয় বিশ্বের বাড়তি জনসংখ্যার সবার খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করা সেটা পরিবেশের ক্ষতি না করেই। যেখানে বরং,

*  গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো যাবে।

*  জৈববৈচিত্রের যেসব প্রজাতি বিলুপ্ত যাচ্ছে সেগুলো রক্ষা করা যাবে।

*  কৃষিজমি আর বাড়াতে হবে না।

* পানি সংরক্ষণ করা যাবে।

তবে, শুধু খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনাই যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে খাদ্যের ফলে সৃষ্ট বর্জ্যের হার কমিয়ে আনা সেইসঙ্গে বিদ্যমান জমিতে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো জরুরি।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। এই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন কতটা বাস্তবসম্মত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। 

বিশেষ করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় লাল মাংস খাওয়ার হার ব্যাপকভাবে কমাতে হবে। পূর্ব এশিয়াকে মাছের উপর নির্ভরতা এবং আফ্রিকায় শ্বেতসার সবজির খাওয়ার পরিমাণ কমানো প্রয়োজন।স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টকহোম রেসিলিয়েন্স সেন্টারের পরিচালক লাইন গর্ডন বলেন, " আগে কখনোই এই হারে এবং এই গতিতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়নি।"লাল মাংসের উপর কর বাড়ানো ডায়েটে পরিবর্তন আনার একটা উপায় হতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা।

খাদ্য উৎপাদন গ্রহের জন্য কত খারাপ?

বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের প্রায় এক চতুর্থাংশের জন্য দায়ী খাদ্য উৎপাদন ও বনের জন্য জমি ব্যবহার। এছাড়া বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপন্নের জন্যও যে পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হয় সেটা বিশ্বের সব রেলগাড়ি, উড়োজাহাজ বা অন্যান্য যানবাহনের চাইতেও অনেক বেশি। খাদ্য খাতের পরিবেশগত প্রভাব যদি আরও কাছ থেকে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবারের উৎপাদন পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের প্রায় এক চতুর্থাংশের জন্য দায়ী খাদ্য উৎপাদন বিশ্বব্যাপী, গবাদি পশুর কারণে ১৪% থেকে ১৮% গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হয়ে থাকে।

এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী অন্যান্য গ্যাস যেমন মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইডের নির্গমন সবচেয়ে বেশি হয় কৃষিখাতের কারণে। এছাড়া বায়ু দূষণের একটি প্রধান কারণ এই কৃষিজমি। কেননা এসব খামার থেকে অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। যেটাকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লুএইচও)

একইভাবে পানির ক্ষেত্রেও বড় ধরণের হুমকি এই কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন খাত। কেননা বিশ্বের ৭০% পরিষ্কার পানি ব্যবহার হয়ে যায় কৃষিজমি সেচের কাজে।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064120292663574