একাডেমিক মানের অবনমন, আবাসিকসহ নানা সমস্যার কারণে ক্রমে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি)। গত সাত বছরে স্নাতকে মাত্র ছয়জন ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে একজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। কিন্তু অতীতে বিদেশ থেকে শিক্ষার্থী পড়তে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে’ সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর একাডেমিক কার্যক্রম চালু হয় ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২৮টি বিভাগের অধীন প্রায় ১০ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। যার মধ্যে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (সিএসই) স্নাতকে তিনজন ও সমাজকর্ম বিভাগের স্নাতকোত্তরে মাত্র একজন বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। সিএসই বিভাগের পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগগুলোতে আগে বিদেশি শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করতে এলেও বর্তমানে এসব বিভাগে তাদের সংখ্যা শূন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্য মতে, বিগত সাত বছরে স্নাতকে ছয়জন ও স্নাতকোত্তরে একজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, যার মধ্যে দুজন নেপাল ও একজন ফিনল্যান্ডের নাগরিক। অন্য চারজন বাংলাদেশি নাগরিক; কিন্তু বিদেশে এইচএসসি সমমান পড়াশোনা করায় তারাও বিদেশি শিক্ষার্থী কোটায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ সেশনে স্নাতকোত্তরে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও দুই বছর ধরে স্নাতকে ভর্তি হয়নি কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও আবাসনের সুব্যবস্থা না থাকায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়তে আসছে না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট সমৃদ্ধ না থাকায় দেশের বাইরে থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানার সুযোগও পাচ্ছে না। নজরকাড়া ডিজাইনে সজ্জিত হলেও ওয়েবসাইটে বিভাগগুলোর বিস্তারিত তথ্য কিংবা নিয়মিত আপডেট নেই। ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারে না। ওয়েবসাইট সমৃদ্ধ না থাকার পেছনে জনসংযোগ দপ্তরের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা প্রধানত দায়ী। তবে বিভাগগুলোর অবহেলাকে কারণ হিসেবে দায়ী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজা সেলিম বলেন, ‘বিভাগগুলোকে প্রয়োজনীয় পাসওয়ার্ড ও ইউজার আইডি সরবরাহ করলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে চরম উদাসীন। যার ফলে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত আপডেটেড নয়।’
অন্যদিকে বাইরের শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে স্যাট স্কোর ১১০০ থেকে ৮০০-তে নামিয়ে আনলেও কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি ২০১৮-১৯ সেশনেও। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে আসা সংশ্লিষ্ট দেশে প্রয়োজনীয় প্রচারণার অভাব রয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে মেঘালয় রাজ্য সিলেট শহরের পাশাপাশি হওয়ায় এ রাজ্যে প্রচারণা চালিয়ে কর্তৃপক্ষ অনেক শিক্ষার্থীই নিয়ে আসতে পারে বলে তাদের মত।
নেপাল থেকে আসা সম্প্রতি স্নাতক পাস করা সিএসসি বিভাগের শিক্ষার্থী নিতেশ খঠকা বর্তমানে নিজ দেশে বাস করছেন। তিনি বলেন, ‘এইচএসসি পর্যায়ে অনেক শিক্ষার্থীই স্যাট পরীক্ষা সম্পর্কে অবগত থাকে না। যার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন বলেন, ‘যখন থেকে বিদেশিদের একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন ভেরিফিকেশন শুরু করেছি, তখন থেকে তাদের সংখ্যা কমে গেছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধা আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। সম্প্রতি একনেকে অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। পড়াশোনার মান নিশ্চিত করতে পারলে তাদের আগ্রহ বাড়বে।’