ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে '৬৯ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার'-এর খবরে বিভিন্ন পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়টি নতুন করে সামনে এলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বাইরেও শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, পিএসসির পরীক্ষা ও ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় আমরা জালিয়াতির যেসব ঘটনা দেখেছি, তা উদ্বেগজনক। এসব পরীক্ষায় যে অভিনব কায়দায় জালিয়াতি করা হয়েছে, তাও বিস্ময়কর। পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ হলেও জালিয়াতচক্র নানা কৌশলে যেমন জালিয়াতি করছে, একই সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁস, একজনের পরীক্ষা আরেকজন দিয়ে দেয়াসহ বিভিন্নভাবে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযোগের চার্জশিটের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ৬৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। ৭ দিনের মধ্যে তাদের জবাবসাপেক্ষে প্রমাণিত অপরাধীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারই নয়, বরং আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
গত বছরও বিশ্ববিদ্যালয়টি জালিয়াতির অভিযোগে ১৫ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে। এর আগেও অন্যান্য পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে প্রমাণিত অপরাধীকে আদালত ২-৩ বছর তথা বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেন। এরপরও কিন্তু থেমে নেই পরীক্ষায় জালিয়াতি। আমরা মনে করি, অপরাধীকে লঘু নয়, গুরুদণ্ড দিতে হবে। একই সঙ্গে বের করতে হবে জালিয়াতচক্রের হোতাদের।
বিভিন্ন পরীক্ষায় জালিয়াতিতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে বলেই আমাদের বিশ্বাস। এ রকম একটি চক্রের সন্ধান পেলেই হয়তো জালিয়াতির পুরো বিষয়টি উন্মোচিত হবে। অপরাধ সেটা যে ধরনেরই হোক, তা খারাপ ও নিন্দনীয়; কিন্তু পরীক্ষায় জালিয়াতি, প্রশ্নফাঁস ইত্যাদি অপরাধ অত্যন্ত গুরুতর। এগুলো কেবল ব্যক্তিগত অপরাধই নয়; বরং এসব কারণে সমাজ ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসবের সঙ্গে জড়িত অপরাধী ও যারা অন্যায়ভাবে সুবিধা নেয়, তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি কাউন্সেলিংও দরকার।
দেশপ্রেম ও নীতিবোধ জাগ্রত না হলে এসব চলতেই থাকবে। জালিয়াতি বন্ধে আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা যেমন চাই, তেমনি অপরাধ বন্ধে শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও দেখতে চাই।