শাস্তি নয়, বদলি আতঙ্কে শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা - দৈনিকশিক্ষা

শাস্তি নয়, বদলি আতঙ্কে শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অন্যায়-অনিয়ম করলে শাস্তি পেতে হয় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের– এ কথা যেন ভুলতেই বসেছেন শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে আসীন শিক্ষা ক্যাডারের কয়েকজন কর্মকর্তা। শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সম্মান ভূলুন্ঠিত করে, শিক্ষা প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরিসহ নানা অপরাধে কোনো শাস্তি না পেয়ে শুধুই বদলি হয়েছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। একইভাবে শিক্ষা অধিদপ্তর ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তাকেও বদলি করা হয়েছে। সরকারি চাকরির সাধারণ প্রক্রিয়া বদলি, কিন্তু এতেই আতঙ্কিত বোধ করছেন কতিপয় কর্মকর্তা।

আরো জনা পঞ্চাশেক বদলি হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। বাস্তবে এদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার প্রচুর উপাদান রয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আরও কয়েকজন বদলি হতে পারেন বলে একাধিক সূত্র দৈনিকশিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন এক সপ্তাহ দেশের বাইরে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বদলির নতুন তালিকায় আছেন শিক্ষামন্ত্রীর পিএস নাজমুল হক খানের ভগ্নিপতি মনিরুল ইসলামসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী। অতি গোপনে তৈরিকৃত তালিকাটি চলতি সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের মাঝে শুরু হবে শুদ্ধি অভিযান।

কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষা প্রশাসনে শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক এপিএসএর সিন্ডিকেট ছিল অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে এই কর্মকর্তাকে ও এসডি করার জন্য সরকারের উচ্চমহল থেকে বলা হলেও তাকে ‘প্রাইজ পোস্টিং’ দিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক পদে বদলি করা হয়। এক সময়ে মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির হাট বসানো এই কর্মকর্তা বোর্ডে এসেও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার সূত্র মতে, দ্বিতীয় ধাপ বদলির তালিকায় আছেন শিক্ষামন্ত্রীর পিএসের ভগ্নিপতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রধান হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবীর চৌধুরী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার, মাউশির মনিটরিং ও ইভ্যুলয়েশন উইং-এর উপ-পরিচালক ড. মাহবুবা ইসলাম, মাধ্যমিক শাখার উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান, সেসিপ প্রকল্পের কয়েকজন উপ-পরিচালকসহ মোট সাত জন। যারা ৯ থেকে ১৮ বছর ধরে এখানে কর্মরত।

পদোন্নতি পেয়েও ডিআইএতে নিম্নপদে কর্মরত এমন কয়েকজনকে পদায়ন দেয়া হতে পারে বলেও জানা গেছে।

শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক সহকারি পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) এটিএম ফাত্তাহকে কে বা কারা এটুইআইয়ের অধীনস্ত একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পদায়ন দিয়েছে তা খুজঁছে একটি সংস্থা। ফাত্তাহকে বদলি করা হতে পারে। অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখার সাবেক উপ-পরিচালক হেমায়েত উদ্দিন হাওলাদার ১২ বছর যাবত ঘুরে ফিরে ঢাকায় রয়েছেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি প্রকল্পে ঘাপটি মেরে রয়েছেন।

তবে, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারা যাতে বদলির খড়গে না পড়েন সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যও শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। শিক্ষা ক্যাডারের ড্যাম্পিং স্টেশন হিসেবে পরিচিত জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। প্রথম দফায় আট জনের পর দ্বিতীয় দফায় সবচেয়ে বেশি বদলি করা হচ্ছে এখান থেকেই। দ্বিতীয় তালিকায় এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহাও রয়েছেন। এনসিটিবিতে চেয়ারম্যানের বাইরে আরেকটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন প্রধান হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। বিতর্কিত এই কর্মকর্তা শিক্ষামন্ত্রীর পিএস নাজমুল হক খানের ভগ্নিপতি। সে প্রভাবে তার পা মাটিতে পড়ে না বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা দৈনিকশিক্ষাকে জানিয়েছেন। জানুয়ারি মাসে তার স্ত্রী তৌফিকা আক্তার এনসিটিবিতে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ওএসডি হয়েছেন।

মনিরুল ও তা স্ত্রীর কমিশন বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। কমিশন না দিলে কোনো প্রিন্টার্সের বিল ছাড়েন না মনিরুল। এনসিটিবিতে সবাই তাকে জরিমানা মনিরুল বলে ডাকে। বই ছাপার প্রতিটি ধাপে তাকে ম্যানেজ করতে হয়। গত বছর তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান পিএ প্রিন্টার্সকে কাজ দিয়ে বিপাকে পড়ে এনসিটিবি। এই প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাগজ ছাপিয়ে উপজেলায় বিতরণ করার পর তা ধরা পড়ে। ইন্সপেকশন টিম ও এনসিটিবির অনুমোদন না দিয়ে বই ডেলিভারি করার পিএ প্রিন্টার্সকে শোকজ করা হয়। মনিরুল প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি তদন্ত সংস্থা জেনে গেলে পিছু হটেন মনিরুল। এরপর প্রতিষ্ঠানটির কাজ বাতিল করে অন্যদের দিয়ে বই ছাপার কাজ করানো হয়। চলতি বছর আবার এ প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন তিনি।

তার প্রভাবে অতিষ্ঠ মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা মনিরুলকে এনসিটিবিকে সরিয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু কাজ হয়নি। বহাল তবিয়তে থাকা প্রভাবশালী এই কর্মকর্তাকে বদলি করা হচ্ছে বলে সূত্রের দাবি। একাধিক মুদ্রণ ব্যবসায়ীর অভিযোগ, পুরো এনসিটিবিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন মনিরুল ও তার স্ত্রী। জানুয়ারি মাসে চা দিতে দেরি করায় মনিরুলের স্ত্রী অফিস সহকারীকে পেটান। এর প্রতিবাদ করায় ওই সংস্থার আরো পাঁচ কর্মকর্তাকে পেটান তিনি। এই ঘটনা ঘটনোর সময় সংস্থার চেয়ারম্যান-সদস্যসহ কারো অনুরোধই শোনেননি। এমন কাণ্ড ঘটানোর কারণে একপর্যায়ে এনসিটিবির সব ক্যাডার কর্মকর্তা ধর্মঘটে যান। ঘটনার প্রেক্ষিতে তৌফিকাকে ওএসডি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বড় ভাই শিক্ষামন্ত্রীর পিএস আর সেই জোরেই তিনি এনসিটিবিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। প্রায় হরহামেশাই যার-তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। এর আগে আরো একাধিকবার তিনি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার চেয়ে এক ব্যাচ সিনিয়র এক কর্মকর্তাকে দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পান। এরপর জোর দেখিয়ে বদলি করে দেয়ার ভয়ও দেখান ওই কর্মকর্তাকে। বই ছাপার কাজে কমিশন নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের মোখলেছুর রহমান, মোছাব্বির হোসেন, মনির হোসেনসহ আরো ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, কয়েকটি তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনের আলোকে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৮৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১৩ জন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আরো একটি বদলি আদেশ প্রকাশ করবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।

জানকে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর মাহাবুবুর রহমান বলেন, বদলি চলমান প্রক্রিয়া। এটি চলতে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যেভাবে চেয়েছে সেইভাবেই অ্যাকশন হবে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038461685180664