মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো: শাহেদুল খবিরকে স্বপদে বহাল রেখেই চলছে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নিয়োগে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত। শাহেদুল শিক্ষা ক্যাডারে নেতা আর তদন্তকারীদের দুজন শিক্ষা ক্যাডারের জুনিয়র। এতে তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভিকারুননিসার শিক্ষক ও অভিভাবকরা। একাধিক শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাকে জানান, অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী এবং ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসী বেগমের বিরুদ্ধে নিয়োগ পরীক্ষায় গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তদন্ত শুরু হয়েছে। তাদের স্বপদে রেখেই তদন্ত চলছে। তাই তদন্ত আসলে সুষ্ঠু হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তদন্ত কমিটিতে মাউশির পরিচালকের (কলেজ ও প্রশাসন) নিচের পদমর্যাদার শিক্ষা ক্যাডারের দুই কর্মকর্তার অন্তর্ভুক্তি নিয়েও আপত্তি রয়েছে অনেকের।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেয়াদোত্তীর্ণ গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, নিয়োগ নিয়ে নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটিয়েছে নিয়োগ কমিটি। গভর্নিং বডির সভায় ত্রুটিপূর্ণ এ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন তিনি। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এখনও তার কোনো বক্তব্য নেয়নি।
তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুন অর রশীদের দাবি, সবার মতামত নেওয়া হয়েছে। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চলছে দাবি করে এই কর্মকর্তা বলেন, শিগগিরই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। প্রতিবেদন প্রকাশ পেলেই সবকিছু স্পষ্ট হবে।
জানা যায়, লিখিত পরীক্ষায় ৩০ নম্বরের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৩ পাওয়া একজন প্রার্থীকে অনিয়মের মাধ্যমে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিতে গিয়ে বিদায়ী গভর্নিং বডি এই জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই নিয়োগ বোর্ডে শাহেদুল খবির ছিলেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিত রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি বিষয়টি তদন্ত করছে।
জানা যায়, নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকায় শিক্ষকদের মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনিয়মের অভিযোগে আটকে আছে পূর্ণকালীন অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া। এদিকে ৩ মে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির মেয়াদও ফুরিয়েছে। এরপর থেকে গত ১০ দিন ধরে কমিটি ছাড়াই চলছে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠানটিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে নানামুখী সংকট।
এদিকে মেয়াদ ফুরানোর এক মাস আগেই অভিভাবক সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যকতা রয়েছে পরিচালনা কমিটির। কিন্তু সদ্য বিদায়ী কমিটি সেই নিয়ম পালন করেনি। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগেই কমিটির মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে ছয় মাসের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বোর্ডের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই গত ১০ দিন ধরে ভিকারুননিসা স্কুলে আইনিভাবে নেই কোনো ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও।
এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. হারুন অর রশীদ বলেন, সর্বশেষ কমিটি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাব করা হয়। ভিকারুননিসা থেকে কোনো নামের প্রস্তাব না আসায় বোর্ড থেকেও কোনো আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা যায়নি।
আহ্বায়ক কমিটির জন্য নাম না পাঠানোর জন্য ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দায়ী করেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা।