শিক্ষক এবং শিক্ষকতা: ড. জাফর ইকবাল - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক এবং শিক্ষকতা: ড. জাফর ইকবাল

ড. জাফর ইকবাল |

ছোট শিশুদের স্কুল দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। সুযোগ পেলেই আমি এ রকম স্কুলে চলে যাই, বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলি।

শহরের বাচ্চাদের চেহারা-ছবি, পোশাক এক রকম, গহিন গ্রামের একটি স্কুলের বাচ্চাদের অন্য রকম; কিন্তু তাদের ভাবনাচিন্তা মোটামুটি একই ধরনের। স্কুলের বাচ্চাদের পেলেই আমি তাদের জিজ্ঞেস করি, ‘তোমরা বড় হয়ে কী হতে চাও?’ বাচ্চাগুলো তখন একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, দেখেই বোঝা যায় বড় হয়ে যে নিজের ইচ্ছামতো কিছু একটা হওয়া যায় ব্যাপারটা তারা জানেই না। আমাকে তখন তাদের সাহায্য করতে হয়, আমি জিজ্ঞেস করি, ‘তোমরা কি বড় হয়ে ডাক্তার হবে, নাকি ইঞ্জিনিয়ার হবে? নাকি বিজ্ঞানী কিংবা পাইলট কিংবা পুলিশ না হলে র‌্যাব হবে? নাকি শিক্ষক কিংবা অফিসার হবে?’
বাচ্চাগুলো তখন নড়েচড়ে বসে এবং একজন সাহস করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট—এ রকম কিছু একটা বলে ফেলে এবং তখন দেখা যায় অন্য সবাইও সেই একই পেশায় যেতে চায়। আমি এখন পর্যন্ত অনেক বাচ্চার সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা অনেক কিছু হতে চেয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে বলতে শুনিনি, সে বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায়!

আমি বাচ্চাদের একটুও দোষ দিই না। তাদের জন্য স্কুল কখনোই আনন্দময় একটা জায়গা নয় এবং সেই স্কুলের দায়িত্বে যে শিক্ষকরা থাকেন সম্ভবত তাঁদের নিয়ে বাচ্চাদের কোনো সুখস্মৃতি নেই। কিংবা তারা হয়তো দেখেছে একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা পুলিশ অফিসার অনেক দাপটে থাকেন, তাঁদের তুলনায় একজন শিক্ষক থাকেন খুবই দুর্বলভাবে কিংবা দীনহীনভাবে। তাই বড় হয়ে তারা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে না।

আমি আমার নিজেকে দিয়েও বিষয়টি চিন্তা করে দেখেছি। ছাত্রজীবনে আমি যে ধরনের শিক্ষকদের দেখেছি তাঁদের কথা মনে করতে চাইলে বিভীষিকাময়, নিষ্ঠুর শিক্ষকদের কথা আগে মনে পড়ে।

তাঁদের নিয়ে আতঙ্কের বিষয়টি এতই ব্যাপকভাবে আসে যে অন্য দু-চারজন ভালো শিক্ষকের স্মৃতি ঢাকা পড়ে যায়। তাঁদের মিষ্টি করে বলা কোনো কথা মনে নেই; কিন্তু যতবার তাঁদের হাতে মার খেয়েছি, প্রতিটি ঘটনার কথা স্পষ্ট মনে আছে। শারীরিক যন্ত্রণার কথা ভুলে যাওয়া যায়; কিন্তু অপমানটার কথা কখনো ভোলা যায় না।
আমাদের দেশে আইন করে স্কুলে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি তুলে দেওয়া হয়েছে। এটি অনেক বড় ঘটনা, যদিও আমরা এখনো পত্রপত্রিকায় স্কুল-মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রী পেটানোর ভয়ংকর ঘটনার কথা মাঝেমধ্যেই দেখতে পাই।

এ ব্যাপারে আমার নিজেরও ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের ইউনিভার্সিটির যে স্কুল, আমি তখন তার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। হঠাৎ একদিন আমার কানে এলো কোনো একজন ছাত্রীর গায়ে কোনো একজন শিক্ষক হাত তুলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই আমি খুবই বিচলিত হয়ে পরদিন সেই ক্লাসে হাজির হয়েছি। যে শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ক্লাসে ঢুকে শিক্ষককে কিছুক্ষণের জন্য আমাকে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে নিরিবিলি কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। শিক্ষক বাইরে চলে গেলে আমি দরজা বন্ধ করে তাদের কাছে জানতে চাইলাম সত্যি সত্যি কোনো শিক্ষক তাদের গায়ে হাত তুলেছেন কি না। প্রথমে সবাই মাথা নিচু করে নিঃশব্দে বসে রইল খানিকক্ষণ, অভয় দেওয়ার পর তারা মুখ খুলল এবং জানতে পারলাম সত্যি সত্যি এ ধরনের ব্যাপার ঘটছে। আমাদের স্কুলজীবনে শিক্ষকরা ছাত্রদের পেটানোর জন্য লম্বা বেত হাতে নিয়ে ক্লাসে ঢুকতেন। এখন সেটি সম্ভব নয়। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের গায়ে হাত তোলার জন্য এখনকার শিক্ষকদের কোনো একটা শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করতে হয়। এই ক্লাসে ধাতব রুলার দিয়ে একাধিক ছাত্রীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই আমি যথেষ্ট বিচলিত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বললাম যে দেশে আইন হয়েছে, শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলতে পারবেন না। কাজেই যদি কোনো শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলে থাকেন, তাহলে তিনি দেশের আইন ভঙ্গ করছেন। দেশের আইন ভঙ্গ করলে শাস্তি হয়। তাই সেই শিক্ষকেরও শাস্তি পাওয়ার কথা। চুরি, ডাকাতি ও খুন যে রকম অপরাধ, ছাত্র-ছাত্রীদের গায়ে হাত তোলাও সে রকম অপরাধ। কাজেই যদি ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা ঘটে, তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকের সঙ্গে কোনো বেয়াদপি না করে যেন শাস্তিটুকু সহ্য করে। এরপর স্কুল ছুটির পর আমার অফিসে এসে যেন আমাকে ঘটনাটি জানায়।

আমি কথা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ক্লাস এমনভাবে আনন্দধ্বনি করে উঠল যে আমি খুব অবাক হলাম এবং আমার মনে হলো হয়তো এ রকম ঘটনা স্কুলে নিয়মিত ঘটছে। আমার তখন মনে হলো যে হয়তো অন্যান্য ক্লাসে গিয়েও আমার ছাত্র-ছাত্রীদের একই কথা বলে আসা উচিত।

আমি তাই একটি একটি করে প্রতিটি ক্লাসে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বলে এলাম, তাদের গায়ে হাত তোলা দেশের আইনে অপরাধ এবং যদি তাদের ওপর এই অপরাধ করা হয়, তাহলে যেন সেটি আমাকে জানানো হয়। প্রতিটি ক্লাসেই আমি বিশাল আনন্দধ্বনি শুনতে পেলাম।

শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের বলেই আমি শেষ করে দিলাম না, আমি সব শিক্ষককে ডেকে তাঁদের বললাম, তাঁরা কোনো অবস্থায়ই কোনো ছাত্র-ছাত্রীর গায়ে হাত তুলতে পারবেন না।

এরপর স্কুলে যেটি ঘটল, আমি তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। কয়েক দিন পর খবর পেলাম পুরো স্কুলে শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই, ছাত্র-ছাত্রীরা চেঁচামেচি-চিৎকার করে সময় কাটায়, শিক্ষকরা ক্লাসে উদাস মুখে বসে থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের নরক গুলজার করতে দেন। হেডমাস্টার শিক্ষকদের ক্লাসের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বললে তাঁরা মুখ ভার করে আমার কথা বলেন, আমি নাকি তাঁদের বলেছি, ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু বলা যাবে না। তাই তাঁরা কিছু বলেন না! এ বয়সের ছেলে-মেয়েদের ক্লাসে পুরো স্বাধীনতা দিয়ে দিলে তারা কী তুলকালাম কাণ্ড করতে পারে সেটি অনুমান করা কঠিন নয়। বাচ্চাদের চিৎকার-চেঁচামেচির কারণে স্কুলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় না, সব শুনে আমি হাসব, না কাঁদব বুঝতে পারছি না। অনেক কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত সেই অবস্থা সামাল দিতে হয়েছিল।

কিছুদিন আগে আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছেন, আপনার বেশ কয়েকটি পরিচয় আছে, লেখালেখি করেন, গবেষণা করেন, শিক্ষকতা করেন, কখনো কখনো নানা রকম আন্দোলনও করেছেন। আপনার কোন পরিচয়টিতে আপনি পরিচিত হতে চান? আমি এক মুহূর্ত দ্বিধা না করে বলেছি, আমি শিক্ষক পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই। আমি মাঝেমধ্যে চিন্তা করে দেখেছি, শিক্ষক না হয়ে অন্য কোন পেশায় যোগ দিলে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম, একটিও খুঁজে পাইনি। আমার ধারণা, আমার মতো যাঁরা শিক্ষক, তাঁরা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকই হোন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই হোন—সবাই আমার কথায় সায় দেবেন।

এর কারণ আমরা যাঁরা শিক্ষক তাঁরা সত্যিকারের মানুষ নিয়ে কাজ করি, আমরা প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের পড়াই, পড়তে না চাইলে ভয়ভীতি দেখাই, তারা ভালো কিছু করলে খুশিতে আটখানা হয়ে যাই, তারা ভুল করলে লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। এক দল ছাত্র পাস করে বের হয়ে যায়, তখন অন্য এক দল ছাত্র এসে ঢোকে। দেশে-বিদেশে হঠাৎ হঠাৎ একজনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, যে বলে, ‘স্যার, আমি আপনার ছাত্র। ’ হয়তো পাশে তার স্ত্রী দাঁড়িয়ে থাকে, কোলে শিশুসন্তান। যে ছাত্রটি প্রায় কিশোর হিসেবে একদিন পড়তে এসেছিল, এখন সে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে, দেখে কী ভালোই না লাগে। শুধু আমরা—শিক্ষকরা, সেই আনন্দটুকু পেতে পারি। আমার মনে হয় না অন্য কোনো পেশার কোনো মানুষ কোনো দিন আমাদের এই আনন্দটুকু উপভোগ করতে পারবে।

তবে লেখাপড়ার জগতে একটি মৌলিক পরিবর্তন হচ্ছে, যেটি আমরা নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি। একটা সময় ছিল, যখন একটি সার্টিফিকেট খুব একটি মূল্যবান বিষয় ছিল। সেই সার্টিফিকেটটি কোন বিষয়ের সার্টিফিকেট সেটি নিয়েও মানুষজন মাথা ঘামাত। শুধু তা-ই নয়, ছাত্র বা ছাত্রীটি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটটি এনেছে, সেটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ধীরে ধীরে সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এখন একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে যাচাই করার একটি মাত্র মাপকাঠি, সেটি হচ্ছে তার যে বিষয়টুকু জানার কথা সে কি সেটি জানে, নাকি জানে না? কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিতে পারেনি, হাতে কোনো সার্টিফিকেট নেই; কিন্তু পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে—এ রকম উদাহরণের এখন আর অভাব নেই।

কাজেই আমাদের শিক্ষকদের একটি নতুন দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝানো, নতুন পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে একটি চকচকে সার্টিফিকেট যথেষ্ট নয়। একজন ছাত্রকে যেটি জানার কথা সেটি জানতে হবে। এর চেয়ে বড় কথা ১০০ বিলিয়ন নিউরন দিয়ে তৈরি মস্তিষ্ক নামের অমূল্য সম্পদটি ব্যবহারের উপযোগী হিসেবে শাণিত করে রাখতে হবে। যখন প্রয়োজন হবে তখন যেন সেটিকে ব্যবহার করা যায়। মুখস্থ করে কিংবা কোচিং ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থী না হয়ে শুধু পরীক্ষার্থী হওয়ার ট্রেনিং নিয়ে নিয়ে তারা যেন নিজেদের মস্তিষ্কটি ভোঁতা করে না ফেলে।

আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াই তারা সবাই একটি বিষয় লক্ষ করেছি। গত কয়েক বছর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা কমে আসছে। অনেক সময়ই মনে হয়, পড়ানোর সময় আমি যেটি বলছি ছাত্র-ছাত্রীরা সেটি শুনছে; কিন্তু বোঝার জন্য মস্তিষ্কটিকে ব্যবহার করতে তাদের ভেতর এক ধরনের অনীহা, এক ধরনের আলস্য। এ নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি, আমার কাছে কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। কিন্তু আমার মনে হয় এটি হচ্ছে ফেসবুকজাতীয় সামাজিক নেটওয়ার্কে বাড়াবাড়ি রকমের আসক্তির ফল। এটি নিশ্চয়ই শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়, সারা পৃথিবীর সমস্যা। আমি একাধিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখেছি মাদকে আসক্তি এবং ফেসবুকে আসক্তির মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।

তবে এ কথাও সত্যি, সারা পৃথিবীতেই সব মানুষ দাবি করে এসেছে, তাদের সময়ে তরুণসমাজ অনেক ভালো ছিল এবং নতুন প্রজন্মের হাজারো সমস্যা! আমি নিশ্চিত, আমি এখন যে তরুণ প্রজন্মের সমালোচনা করছি, তারা যখন বড় হবে তখন তারাও নতুন প্রজন্মের সমালোচনা করে হতাশা প্রকাশ করবে! কাজেই আমরা যাদের পেয়েছি তাদের নিয়ে অভিযোগ না করে যেটুকু এগোতে পারি সেটি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাই।

তবে এ কথা সত্যি, শিক্ষকতাজীবন নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। শিক্ষক হিসেবে আমি খুব সফল নই। আমি জানি আমার ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে যমের মতো ভয় পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা যথেষ্ট বড় এবং তাদের পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মতো বিবেচনা করা উচিত, ক্লাসের বাইরে আমি সেটা করি; কিন্তু ক্লাসের ভেতরে আমি তাদের প্রায় কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চার মতো নজরদারি করি। কোনো রকম ঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ একদিন ক্লাসে আমি যখন পরীক্ষা নিয়ে ফেলি তখন তারা নিশ্চয়ই আমার ওপর খুব বিরক্ত হয়। শুধু তা-ই নয়, আমি ক্লাসে ছেলে-মেয়েদের প্রশ্ন করে করে ক্রমাগত উৎপাত করি। আমার ক্লাসে ছেলে-মেয়েরা নিশ্চয়ই শান্তিতে বসতে পারে না। তাই যদি আমাকে যমের মতো ভয় পায় তাদের দোষ দেওয়া যাবে না।

ক্লাসে ছাত্রদের প্রশ্ন করা নিয়ে একটি ঘটনার কথা বলে শেষ করে দিই। ক্লাসে পড়াতে পড়াতে একদিন একটি ছাত্রকে খুব সোজা একটি প্রশ্ন করেছি, ছাত্রটি প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারল না। আমি খুবই বিরক্ত হয়ে পরের জনকে একই প্রশ্ন করেছি, সে-ও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না। আমি তখন রীতিমতো রেগে উঠে পরের জনকে প্রশ্ন করলাম, সে-ও উত্তর দিতে পারল না। তখন আমি একজন একজন করে সবাইকে প্রশ্ন করতে শুরু করেছি এবং তারা কেউই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না এবং আমি ধীরে ধীরে রেগে উঠতে শুরু করেছি। একজন একজন করে যখন আমি একেবারে শেষ ছাত্রটির কাছে পৌঁছলাম এবং সে-ও আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না, তখন আমার সব রাগ গিয়ে পড়ল সেই ছেলেটির ওপর। তাকে প্রচণ্ড বকাঝকা করে যখন শেষ করেছি তখন ছেলেটি খুবই করুণ গলায় বলল, ‘স্যার, আমি আসলে এই ইউনিভার্সিটির ছাত্র না। আমি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে পড়ি। আপনি কিভাবে ক্লাস নেন সেটি দেখার জন্য এসেছিলাম। ’

পুরো ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়ল এবং আমার সব রাগ মুহূর্তের মধ্যে পানি হয়ে গেল।

শিক্ষকতাজীবনের এ রকম টুকরো টুকরো ঘটনার শেষ নেই এবং আমার ধারণা, শুধু একজন শিক্ষকের জীবনেই এ রকম ঘটনা ঘটা সম্ভব। কারণ আমরা ফাইল নিয়ে কাজ করি না, যন্ত্র নিয়ে কাজ করি না, আমরা কাজ করি রক্ত-মাংসের মানুষ নিয়ে, যাদের চোখে রঙিন চশমা এবং যারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।

(বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০১৭, জাতীয় উদ্‌যাপন কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে পঠিত)

লেখক : অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0078859329223633