আজ ২৫তম বিশ্ব শিক্ষক দিবস সারা বিশ্বে বিশেষ আয়োজনে পালিত হচ্ছে। বিশ্বে শিক্ষকদের জন্য এ দিবসটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে তৎকালীন মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম. মেয়রঘোষিত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষা ও সভ্যতার ক্রম বিকাশকে পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের জন্য প্রতি বছর পালিত হয় বিভিন্ন দিবস যেমন, বিশ্ব শান্তি দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ইত্যাদি। তেমনিভাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবসও পালিত হয়ে আসছে।
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ খিস্টাব্দে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা মহাসম্পাদক প্রফেসর এম শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রথমবারের মত বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়। এরপর হতে ঢাকা শহর এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষকদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, র্যালি, আলোচনা সভা, মতবিনিময় সভা প্রভৃতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবারের মতো এবারও বাকশিস বিপিসি-র উদ্যোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বাকশিসের প্রয়াত নেতা প্রফেসর এম শরীফুল ইসলামের চিন্তা-চেতনাকে ধরে রেখেই বর্তমান নেতারা শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রফেসর এম শরীফুল ইসলামের অক্লান্ত চেষ্টায় শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে অবসর সুবিধাভাতা প্রবর্তন করা হয়। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রারম্ভিক বেতনের শতভাগ অর্জন হয়। কিন্তু আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা, যেমন বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, প্রমোশন, উৎসব ভাতা প্রভৃতি ব্যাপারে এখনও কোন মর্যাদাপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বর্তমানে যে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে, তাতে শিক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত ত্যাগী মেধাবী শিক্ষকরা দিনদিন নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। একই রকমের শিক্ষাব্যবস্থায় বিমাতাসুলভ আচরণ কোন ভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মধ্যে গুণগত ও মানসম্পন্ন পর্যায়ে পৌঁছানের জন্য সকল স্টক হোল্ডারগণের সমবেত চেষ্টা যেমন প্রয়োজন, তেমনি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তা সম্ভব নয়। এখন চলছে সর্বত্রই শিক্ষক আন্দোলনের প্রস্তুতি যদি তাই হয় তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা বিরাজ করবে এবং ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটবে।
বাকশিস এবং বিপিসি সব সময়ই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে দূরে রাখার জন্য আন্দোলন করে আসছে। কোন অবস্থাতেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। এসএমসি. ও গভর্নিং বডি নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত হতে হবে অথবা সরকারি স্কুলের কলেজের অনুরূপ বেসরকারি স্কুল/কলেজ পরিচালিত হওয়ার বিধান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষক-কর্মচারীদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যথাযথ প্রবর্তন করা একান্ত আবশ্যকীয়। শিক্ষকদের যাতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম ছেড়ে ক্লাসরুম থেকে বাইরে যেতে না হয়, সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। পঁচিশতম শিক্ষা দিবসে শিক্ষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠুক, এই কামনা করছি।
লেখক: শিক্ষক নেতা, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি