শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ও তুঘলকি কাণ্ড - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ও তুঘলকি কাণ্ড

তুহিন ওয়াদুদ |

নন-গভর্নমেন্ট টিচার্স রেজিস্ট্রেশন আন্ড সার্টিফিকেশন অথরিটি, সংক্ষেপে এনটিআরসিএ (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) নামক প্রতিষ্ঠানে চলছে তুঘলকি কান্ড। প্রতিষ্ঠানটির অদক্ষতা আর স্বেচ্ছাচারিতায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দেশের লাখ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী মানুষ। এনটিআরসিএ মূলত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন করে। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে এ পর্যন্ত একটি বিশেষ পরীক্ষাসহ মোট ১৫টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হয়েছে। স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এনটিআরসিএ দেড় শতাধিক মামলায় পড়েছিল। পরে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সবগুলো পরীক্ষায় উর্ত্তীণ চাকরিপ্রার্থীদের একটি সম্মিলিত মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। উত্তীর্ণদের যাঁদের বয়স ৩৫ এর মধ্যে আছে, তাঁরাই শুধু আবেদন করতে পারছেন। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব পরীক্ষা অভিন্ন পদ্ধতিতে এবং অভন্ন নীতিমালায় অনুষ্ঠিত হয়নি। কখনো সারা দেশে শূন্য পদ সাপেক্ষে নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল, কখনো বলা হয়েছিল উপজেলাভিত্তিক পদ শূন্য সাপেক্ষে। ফলে কখনো কম নম্বর পেয়েও উত্তীর্ণ হয়েছিল, কখনো অনেক নম্বর পেয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি।  

পরীক্ষা পদ্ধতিতেও ছিল ভিন্নতা । ১৫ নিবন্ধন পরীক্ষায় কখনো শুধু লিখিত পরীক্ষা হয়েছ। কখনো প্রাথমিক বাছাই, লিখিত ও  মৌখিক পরীক্ষা তিনটিই হয়েছে। কোনো নিবন্ধন পরীক্ষায়  পাস করানো হয়েছে অনেক, কখনো সামান্যই। কোনো বছর পাসের হার ছিল ৫২ শতাংশ, কোন বছর ২ শতাংশের কম। এনটিআরসিএর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারণে চাকরিপ্রার্থীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

এনটিআরসিএ এমপিও, নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন আচেদন প্রগণ করছে। বিনা বেতনে চাকরি এবং বেতনে চাকরি এ দুটি কখনোই এক হতে পারে না। যতটি পদ শূন্য আছে, ততটি পদের জন্য আলাদা আবেদন করার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। উত্তীর্ণ প্রার্থী যতটি পদের জন্য আবেদন করেবেন, ততটি পদের জন্য প্রার্থীকে বিবেচনা করা হবে। একেকটি পদের বিপরীতে আবেদনকৃত ব্যক্তিদের মেধাক্রম বিচার করে নিয়োগের সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ।

উত্তীর্ণ প্রার্থীরা যতটি শিক্ষপ্রতিষ্ঠান পছন্দক্রমে উল্লেখ করবেন,তাঁকে প্রতিটির জন্য ১৮০ টাকা ফি দিতে হবে। যদি তিনি কোনো দোকান থেকে কাজটি করতে চান, তাহলে প্রতিটি আবেদনের জন্য আরও ৩০-৪০ টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থী একবার ৩৫০ টাকা ফি প্রদান সাপেক্ষে আবেদন করেছিলন। এরপর তাঁদের প্রাথমিক বাছাই, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাঁরা এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে পছন্দক্রম চাওয়া হয়েছে। এই পছন্দক্রম অনুযায়ী কাজ করার জন্য এ প্রতিষ্ঠানের এক টাকাও অতিরিক্ত প্রয়োজন নেই। তরপরও এই টাকা ফি ধার্য করাটা বেকাদের ওপর জুলুম। দেশের সব চাকরিতে বেকারদের বিনা টাকায় আবেদন করার সুযোগটাই এখন জুরুরি হয়ে পড়েছে। প্রতি মাসে একজন বেকারের চাকরির আবেদনের জন্য মোটা অঙ্কের টাকার ব্যাংক ড্রাফট করতে হয়। এই টাকা বেকারের পক্ষে সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন। 

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া একজন বেকারকে রীতিমতো লটারির টিকিট কিনে ভাগ্য যাচাইয়ের মতো অবস্থায় ফেলা হয়েছে। একজন চাকরিপ্রার্থী পছন্দক্রমে ৫০ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করলে প্রয়োজন হবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। আমাদের দেশে একজন বেকার চাকরিপ্রার্থীর পক্ষে কি এত টাকা দিয়ে চাকরির আবেদন করা সম্ভব? নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কাছ থেকে টাকা কিংবা পছন্দক্রম কোনোটি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। প্রথমে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ফল মেধাক্রম অনুযায়ী প্রকাশ করতে পারত এনটিআরসিএ। এতে যে পদগুলো শূন্য থাকত, সেই অবশিষ্ট পদে নিয়োগের জন্য আবারও নতুন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করত। এভাবে যখন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ শেষ হতো, তখন একইভাবে নন-এমপিও পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যেত। পাবলিক সার্ভিস কমিশন এক আবেদনে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাডারে, নন-ক্যাডারে, এমনকি মাধ্যমিক প্রাথমিক স্কুলেও নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে।

পিএসসি যদি এক আবেদনে হাজার হাজার পদ উম্মুক্ত রাখতে পারে প্রতিযোগিতার জন্য তাহলে বিষভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য আলাদা আবেদন করতে বলা প্রহসনই বটে। ধরা যাক, ইংরেজি বিভাগরে একজন প্রার্থী দেশের যেকোনো এলাকায় চাকরি করতে চান। ইংরেজি বিভাগে পদ শূন্য আছে ৫০০টি। তাঁর মেধাক্রম ৫০০তম। তিনি কি তাহলে ৫০০টি প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করবেন? এটা কি হয় কখনো? এনটিআরসিএ গত ডিসেম্বর মাসে ৩৯ হাজার ৫৩৫ টি পদে কলেজ-স্কুল পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধনধারীদের কাছ থেকে পছন্দক্রম ঠিক করে আবেদনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আবেদন জমা পড়ে প্রায় ৩১ লাখ। প্রতিটি পদের বিপরীতে প্রায় ৭৮টি। সেই হিসাব করলে এনটিআরসিএ প্রায় ৫৬ কোটি টাকা আয় করছে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখে এসব সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এনটিআরসিএ কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কিংবা লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়। এটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সেই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যে অন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তা বন্ধ হওয়া জুরুরি।


তুহিন ওয়াদুদ, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক এবং রিভারাইন পিপলের পরিচালক 

সূত্র: প্রথম আলো

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045919418334961