বরগুনা সদরের উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ও মনির হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাব-ক্লাষ্টার প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের স্বাক্ষর জাল করে ও ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে বরাদ্দ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এ দুই কর্মকর্তা।
জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জুনের সাব-ক্লাষ্টার প্রশিক্ষণে পিইডিপি-৪ থেকে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ৮০১ জন প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকের খাবার ভাতাসহ উপকরণ, প্রশিক্ষকদের সম্মানী ও আনুষাঙ্গিক খরচের জন্য এ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
স্থানীয় শিক্ষকদের অভিযোগ, দুই কর্মকর্তা জালিয়াতি করে বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নির্ধারিত সময়ে প্রশিক্ষণ করার কথা থাকলেও প্রশিক্ষণ না করিয়ে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের কাছ থেকে বিল ভাউচারে আগাম স্বাক্ষর নিয়েছেন তারা। অনেক প্রশিক্ষণার্থী স্বাক্ষর না করলেও তাদের স্বাক্ষর জাল করে বিল ভাউচারে ২৮০ টাকা প্রাপ্তি দেখিয়েছেন ওই দুই কর্মকর্তা।
প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের খাবার ভাতা ২৮০টাকা এবং প্রশিক্ষণ উপকরণে ৬০ টাকাসহ মোট ৩৪০ টাকা করে প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর জন্য বরাদ্দ ছিল। কিন্তু বিলভাউচারে ২৮০ টাকা দেখিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের দেয়া হয়েছে ২০০ টাকা করে। প্রশিক্ষণার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে অভিযোগ করেন, ‘আমাদের কোন প্রশিক্ষণই হয়নি, কিন্তু প্রশিক্ষণের ২০০ টাকা পেয়েছি। আবার কেউ কেউ বলেন, প্রশিক্ষণ তো হয়নি আর টাকাও পাইনি।’
বরগুনা জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ও মনির হোসেনের দুই ক্লাস্টারের বিল ভাউচারে নিমতলি মাইঠা ও পূর্ব চরকগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে সালিমুল্লাহর ২৮০ টাকা প্রাপ্তির স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু দুই স্বাক্ষরের মধ্যে কোন মিল নেই।
এ ব্যাপারে শিক্ষক সালিমুল্লাহ ও নিমতলী মাইঠা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম বিল ভাউচারে তারা স্বাক্ষর করেননি বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান।
পশ্চিম ডেমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমরা সাব-ক্লাষ্টার প্রশিক্ষণ নেইনি আর টাকাও পাইনি।’বিল ভাউচারে যে স্বাক্ষর রয়েছে ওই স্বাক্ষর তাদের নয় বলে দাবি করেন তারা। শিক্ষকরা আরও জানান,‘বিল ভাউচারের ওই একই শিটে ২৬ জন প্রশিক্ষণার্থীর স্বাক্ষর রয়েছে অথচ কত টাকা তাদের দেয়া হয়েছে তার পরিমান লেখা নেই।’এছাড়াও আরিফুজ্জামানের জমাকৃত বিল ভাউচারের ক্যাশ মেমোতে দেখা যায়, ক্রেতা বিক্রেতার স্বাক্ষর নেই এবং কোন প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে প্রশিক্ষণের উপকরণ ক্রয় করা হয়েছে তার কোন নাম নেই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ও মনির হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,‘সঠিক নিয়মেই সাব-ক্লাষ্টার প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।’অনিয়ম হয়েছে কিনা, বিল ভাউচার ও ক্যাস মেমো দেখে বলতে পারবেন বলে জানান, আরিফুজ্জামান।
বরগুনা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘সাব-ক্লাষ্টার প্রশিক্ষণের সময় আমি এখানে কর্মরত ছিলাম না। বিষয়টি শুনেছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’