শিক্ষক সংকট ৩ মাস ধরে বন্ধ স্কুল - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক সংকট ৩ মাস ধরে বন্ধ স্কুল

সাখাওয়াত হোসেন সাখা, উলিপুর থেকে |

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার মেকুরের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ৩ মাস ধরে স্কুল বন্ধ রয়েছে। একজন শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় জুলাই মাস থেকে স্কুলে আসেন না তিনি। এমনটাই দেখা গেছে এই স্কুলে। স্কুলের ২৬৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য নিয়োজিত একমাত্র শিক্ষক ছুটিতে থাকায় ৩ মাস ধরে পাঠদান বন্ধ রয়েছে স্কুলটিতে। স্কুলের এমন বেহাল দশায় হতবাক হয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের সব কক্ষ বন্ধ। স্কুলের মাঝখানে হেলে যাওয়া বাঁশে খুঁটিতে জাতীয় পতাকা উড়ছে। স্কুলের পাশেই খেলছে ২০ থেকে ২৫ জন শিশু। কোথায় পড়ে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানায়, আমরা এই স্কুলে (পাশের মেকুরের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) পড়ি। আজ কেন স্কুলে যাওনি এমন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীরা জানান, স্যার নাই তাই। 

শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে যায় স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে এক ব্যক্তি ছুটে এসে পরিচয় জানতে চান। পরে দৈনিক শিক্ষডটকমের প্রতিবেদক পরিচয় দেয়া হলে তার নাম নুরে আলম সিদ্দিকী রতন ও তিনি স্কুলের প্যারা শিক্ষক বলা জানান ওই ব্যক্তি। পরে তড়িঘড়ি করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষে নিয়ে বাংলা বিষয়ে পাঠদান শুরু করেন প্যারা শিক্ষক রতন।

পরে জানা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাদিকা বেগমের স্বামী প্যারা শিক্ষক রতন। তবে স্কুলটির বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি তিনি। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানায়, ওই স্কুলের শিক্ষক সাদিকা বেগম মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাওয়ার আগে কামাল খামার তেতুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. ইকরামুল হক নামের একজন শিক্ষককে ডেপুটেশন দেয়া হয়েছিল ওই বিদ্যালয়ে। কিন্তু বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করে ডেপুটেশন বন্ধ করেছেন তিনি। পরে আবারো কুনারচর শিশু শিক্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মরত এক মহিলা শিক্ষিকা ওই স্কুলে ডেপুটেশন দেয়া হয়। কিন্তু একই ভাবে স্কুলে না গিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করে ডেপুটেশন বন্ধ করেন এ শিক্ষিকাও।

এদিকে প্রধান শিক্ষক সাদিকা বেগম ছুটিতে থাকলেও কোন শিক্ষক স্কুলে আসেনি। শিক্ষার্থীরা জানায়, যে যার মত স্কুলে এসে শিক্ষক না দেখে বাড়িতে চলে যায়। 

সূত্রে জানাগেছে, নিয়মিত স্কুল ফিডিং বিস্কুট শিক্ষার্থীদের বিতরণ করেন না। স্কুলে লাইব্রেরির টেবিল ও চেয়ার ওই প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে। ফাঁকা রয়েছে লাইব্রেরি, নেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। স্কুলে ২৬৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বিস্কুটের তালিকায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী দেখিয়ে বিস্কুট নেয়ার অভিযোগও রয়েছে স্কুলটির বিরুদ্ধে। এদিকে দুই বার ডেপুটেশনে স্কুলটিতে শিক্ষক দিলেও, মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে শিক্ষা অফিসই তা বন্ধ করে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটির আগ থেকেই চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাদিকা স্কুলে নিয়মিত নন। মাঝে মাঝে স্কুলে আসেন তিনি। বেশির ভাগ সময় না এসেই বিল তুলে নিয়ে যান। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সাদিকা বেগম স্কুল বন্ধ থাকার বিষয়টি স্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমি অসুস্থ। চলতি বছরের জুলাই থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করছি। তাই স্কুলের খোঁজ খবর রাখার আমার বিষয় না। তবে, আমার স্বামীকে প্যারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে শিক্ষা অফিস। অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকায় আগেভাগেই স্কুল ছুটি দেয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নরুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে কোন শিক্ষক থাকতে চান না। তাই পাঠদানে চরম অবহেলিত হচ্ছে। একজন শিক্ষক দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব নয়। যে এক শিক্ষক ছিল তা আবার সরকারি ছুটি নিয়েছে।

উলিপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোজাম্মেল শাহ্ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘স্কুল বন্ধ রাখার প্রশ্নেই ওঠে না। আর অফিস থেকে দুইজন শিক্ষক ডেপুটেশন দিয়েছি। কিন্তু তাঁরা ওই চরাঞ্চলের স্কুলে যেতে চায় না। তাই একজন প্যারা শিক্ষক দিয়েছি। যদি স্কুল বন্ধ থাকে তাহলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, স্কুল বন্ধ থাকার বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। অভিযোগের সত্যতা পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040769577026367