শিক্ষক সমিতি স্থবির হয়ে গেছে, পরিবর্তন দরকার - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক সমিতি স্থবির হয়ে গেছে, পরিবর্তন দরকার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন। এই নির্বাচনে সভাপতি পদে বিএনপি-সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের পক্ষে প্রার্থী হয়েছেন প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লায়লা নূর ইসলাম। শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এই শিক্ষক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানা যায়। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত-

প্রতিবেদক: আগামীকালের নির্বাচন পর্বটিও কি গতানুগতিক হবে, নাকি ভিন্ন কিছু আশা করেন?

লায়লা নূর: বলেন অনেকেই যে একটা পরিবর্তন আসা উচিত। শিক্ষক সমিতি একেবারে স্থবির হয়ে গেছে। কিন্তু ভোটের দিনে, এটা কেমন প্রতিফলিত হবে, সেটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।

প্রতিবেদক: গত এক দশকের নির্বাচনের ফল কী বলে?

লায়লা নূর: এই সময়ের ব্যবধানে অনেক বেশি বিভাগ খোলা ও প্রয়োজনের চেয়ে ঢের বেশি শিক্ষক নিয়োগ ঘটেছে। আগেও এমনটা একদম হয়নি, তা নয়। কিন্তু এতটা গণহারে আসলে কখনোই হয়নি। দেশে তো অনেক শিক্ষিত বেকার রয়েছেন। তাঁরা চাকরিবাকরি পাচ্ছেন না। এ রকম অবস্থায় যাঁরা নিয়োগ পান, তাঁদের কিছুটা নিয়োগকারীঘেঁষা থাকার একটা প্রবণতা রয়েছে।

প্রতিবেদক: এবার আপনাদের মূল কথাটা কী?

লায়লা নূর: দেখুন, যদি অতীতের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে বিরোধী দলের সমর্থকেরাই আসতেন। তখন দাবিদাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে প্রশাসনের ওপর কার্যকর চাপ বাড়ানো সম্ভব হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতেও একটা ভূমিকা রাখতে দেখা যেত। ইতিহাসে এটা বারবার ঘটেছে। কিন্তু এখন তা অনেকটাই একপেশে বা একদলীয় হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে সরকারি দলের সমর্থক শিক্ষক সমিতি হওয়ার কারণে তাদের কাজের গণ্ডি সীমিত হয়ে পড়েছে। তাই আমরা এটাই বলছি যে সমিতিতে বিরোধীদলীয় নেতৃত্ব এলে ক্ষেত্রবিশেষে চাপটাও প্রয়োগ করা যাবে। অনেকের কাছে এটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, তবে ভোটে কী হবে, সেটা ভোটের পরেই বোঝা যাবে। তবে আমরা আশাবাদী।

প্রতিবেদক: বর্তমান ও তার আগের কমিটিতে সাদা দলের একজন করে ছিলেন, ২০১৭ সালে কেউই জেতেননি। বিএনপি–সমর্থিত সাদা দল থেকে সবশেষ সভাপতি ও সম্পাদক কে কবে হলেন?

লায়লা নূর: ২০১৬ সালে আমরা সহসভাপতি পদ পেয়েছিলাম। ২০১১ সালে সাদা দল থেকে অধ্যাপক মামুন আহমেদ সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক হন। আর অধ্যাপক সদরুল আমিন ২০০৮ সালে সভাপতি হন। এরপর আমরা কখনো সভাপতি পদ পাইনি।

প্রতিবেদক: গত এক দশকে যত শিক্ষক নিয়োগ পান, তার কত শতাংশ শুধুই মেধার বিবেচনায় শিক্ষক হননি বলে আপনার ধারণা? প্রয়োজনের অতিরিক্ত কত?

লায়লা নূর: ছয় শর ওপর শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। তবে অতিরিক্ত কত, তা বলা কঠিন। ধরুন, এটা ২৫ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

প্রতিবেদক: সহ–উপাচার্য সামাদ সাহেবসহ নীল দলের অনেকেই কিছু বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আপনাদের অভিন্ন উদ্বেগগুলো কী?

লায়লা নূর: যেমন ধরুন অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ, মেধার চেয়ে ভিন্নতর বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়ার বিষয়টিও তাঁরা বলেছেন। অবকাঠামো বৃদ্ধি না করে নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। শিক্ষার গুণগত মানের কথা যদি বলেন, তাহলে দেখবেন যে আমরা দিনে দিনে পিছিয়ে যাচ্ছি। বরাদ্দ না থাকা পদের অনুকূলে নিয়োগ দিতে গেলে সব ক্ষেত্রেই সমস্যা হয়। সুতরাং শিক্ষা ও পাঠ্যক্রমের দিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায়।

প্রতিবেদক: বর্তমান উপাচার্য নিয়োগকে শিক্ষক সমিতি কীভাবে দেখল, আর আপনারা কী ভূমিকা রাখলেন?

লায়লা নূর: নির্বাচন সামনে রেখে সরাসরি এই প্রশ্ন আমাকে না করাই ভালো। তবে অনেক কিছুই তো হয়েছিল। সিনেট অধিবেশন বসল, তার আগে দল থেকে প্যানেল হলো, সিনেট তা অবহিত হলো।

প্রতিবেদক: নীল দল তাহলে ভিসি নিয়োগ সমষ্টিগতভাবেই মানল?

লায়লা নূর: আমি তা–ই মনে করি।

প্রথম আলো: শিক্ষকদের এই মুহূর্তে প্রধান সমস্যা ও উদ্বেগগুলো কী?

লায়লা নূর: বিদেশে শিক্ষকেরা যে উচ্চশিক্ষার জন্য যাবেন, সেখানে ছুটিছাটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। যাঁরা সরকার–সমর্থক নন, তেমন অনেক শিক্ষকের পদোন্নতিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হলগুলোতে রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ নিরিখে সহাবস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আবার কেউ নির্দলীয় হলেও অনেক সময় জামায়াত-শিবির লেবেল এঁটে মেরেধরে পুলিশে দেওয়া হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ডাকসুতে তাণ্ডব হলো। ভিপি নুরুল ও তাঁর সহযোগীদের মেরে আহত করা হলো, আর এখন দেখুন নুরুলের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা আনা হচ্ছে। আমাদের পুলিশ এই মামলা নিচ্ছে। বলুন, এটা কেমন কথা? এসবই তো এখন চলছে। শিক্ষক হিসেবে আমাদের এসব অনেক খারাপ লাগে, লজ্জা লাগে। শিক্ষক ও অভিভাবকের দৃষ্টিকোণ থেকে এসব যখন দেখি, তখন খুবই আহত হই।

প্রতিবেদক: ভোটের আগের দিনে কী চান?

লায়লা নূর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। আসলে বিভিন্ন কারণে তাঁদের তরফে সরকারের ওপর একটা চাপ অব্যাহত রাখা দরকার। কিন্তু তার প্রতিফলন কতটা হবে, জানি না। সব সময় মনে হয় তরুণ শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি।

সে কারণে হয়তো আমরা নির্বাচনে ভালো করতে পারিনি। কিন্তু আমি মনে করি, ভোটের এমন ফল দিয়ে সবটুকু বিচার্য নয়। সব শিক্ষক এ রকম নন। ভোটাভুটি সব সময় একটি নাম্বার গেম।

প্রতিবেদক: শিক্ষক সমিতি ভিপি নুরুলের ওপর হামলাকে কীভাবে দেখেছে?

লায়লা নূর: তারা একটি বিবৃতি দিয়েছে। তার আগেই আমরা মানববন্ধন করেছিলাম, কিন্তু কী কারণে জানি না, শিক্ষকদের অধিকাংশই এতে যোগ দেননি। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আমরা মাত্র ৬০–৭০ জন জড়ো হয়েছিলাম। এটা তো কোনো দলীয় ব্যাপার ছিল না। শিক্ষক হিসেবে যদি আমরা এই জায়গাটাতেও কিছু করতে না পারি, তবে তা খুবই হতাশার। আমরা আমাদের নির্বাচিত ভিপিকে সুরক্ষা দিতে পারলাম না। যদি আমরা সব দল ও মতের শিক্ষকেরা মিলে সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম, তাহলে আরও সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারতাম। এই নির্বাচন আমরা আরও সুষ্ঠুভাবে করতে পারতাম। বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষা সার্ভিসগুলো অধিকতর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে দিতে পারত। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিও সম্প্রতি তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।

প্রতিবেদক: শিক্ষক সমিতির প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

লায়লা নূর: আমি মনে করি তাদের দিক থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত ছিল। কিন্তু সেটা হয়েছে বলে জানি না।

প্রতিবেদক: শিক্ষক সমিতি সর্বশেষ কবে কী বিষয়ে শিক্ষকদের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে?

লায়লা নূর: এ রকমটা বলা দুরূহ। এ রকম তথ্য পেতে হলে সত্যিই খুব ঘাঁটতে হবে।

প্রতিবেদক: শিক্ষকদের অনেকে হুমকির সম্মুখীন বা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এখন কী হচ্ছে?

লায়লা নূর: সম্প্রতি হামলার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু হুমকি নেই, তা বলতে পারব না। আসলে এই যে বললাম, শিক্ষকেরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আসেননি। কারণ, তাঁদের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছে। কারণ, তাঁরা হয়তো ভাবছেন যে এখানে উপস্থিত হলে কোনো না কোনোভাবে হয়তো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। কারণ, এখন ভিন্নমত গ্রহণ করা হচ্ছে না।

প্রতিবেদক: ধন্যবাদ।

লায়লা নূর: ধন্যবাদ।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006356954574585