নোয়াখালীর সুবর্ণচরে চর আমানউল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৫ এপ্রিল) সকাল এগারটার দিকে উপজেলার চর আমান উল্যাহ ইউনিয়নের চর আমান উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির প্রথম ঘন্টার পাঠদানকালে শ্রেণিকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শিক্ষক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে তারই এক অনিয়মিত শিক্ষার্থী ও সেই শিক্ষার্থীর বড় বোনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম এবং তার বড় বোনের নাম নুর নাহার। সাইফুল দশম শ্রেণীর মানবিক শাখার ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তারা একই ইউনিয়নের মো: সিরাজ মিয়ার সন্তান।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানায়, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষার পূর্বে চূড়ান্ত নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের আগামী ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর লক্ষ্যে আলাদাভাবে পাঠদান করানো হচ্ছে। সেখানে সাইফুল ইসলাম বিদ্যালয়ে প্রায় অনিয়মিত থাকেন। প্রতিদিনের মত সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দশম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের হাজিরা ডাকেন।
হাজিরা ডাকার এক পর্যায়ে সাইফুল ইসলাম হাজিরা দিলে শিক্ষক অনিয়মিত থাকায় তাকে দাঁড়াতে বলে। সে না দাঁড়িয়ে শিক্ষকের দিকে চোখ রাঙিয়ে উঠে এবং শিক্ষককে গালমন্দ করলে শিক্ষক তাকে অভিভাবক নিয়ে আসতে বলে। অভিভাবক নিয়ে আসতে বলায় সাইফুল শ্রেণিকক্ষ থেকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বেরিয়ে যায়। সে বেরিয়ে যাওয়া পরপর তার বড় বোন নুর নাহার পাঠদান চলাকালীন সময় শ্রেণিকক্ষে ঢুকে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সামনে জুতা খুলে এলোপাতাড়ি মারধর ও গালমন্দ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বেঞ্চ থেকে বেরিয়ে সাইফুল ও তার বোন নুর নাহারকে ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বখাটে সাইফুল ও তার বোন নুর নাহার এর বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে এবং শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে। অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও শ্রেণিকক্ষের তালা না খোলার ঘোষণা দেয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মো: আবু ওয়াদুদ অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার করার ঘোষনা দিলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুপুর আড়াইটার দিকে সহকারি প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করেন।
বিক্ষোভরত দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাব্বী ও নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন জানায়, আমাদের চোখের সামনে আমাদের প্রিয় শিক্ষককে মারধর করা হলেও শিক্ষকের অনুরোধে আমরা অপরাধীদের কিছুই করতে পারিনি। এ ঘটনায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সুবর্ণচর শাখার সভাপতি মো: সামচ্ছুজ্জামান নিজাম ও সাধারাণ সম্পাদক মো: গোফরান উদ্দিন বলেন, এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি সুবর্ণচর শাখার পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং উপজেলা প্রশাসনের কাছে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করছি।
জানা যায়, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পন্ন হওয়া এসএসসি পরীক্ষার পূর্বের চূড়ান্ত বাচাই পরীক্ষায় সাইফুল অকৃতকার্য হয়। ফলে এসএসসির ফরম পূরণ করতে না পারায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র দাসকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় সে।
হুমকির ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যন মো: বেলায়েত হোসেন গ্রাম্য আদালতে প্রকাশ্যে সাইফুল ইসলামের বিচার করে তাকে শারীরিক শাস্তি দেয় ও আর্থিক জরিমানা করে।