শিক্ষকদের অন্তরে কালবোশেখি-হৃদয়ে  কষ্টের সাগর - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকদের অন্তরে কালবোশেখি-হৃদয়ে কষ্টের সাগর

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

পুরো একটা বছর ধৈর্য্য আর প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করেছেন দেশের পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী । এক বোশেখ থেকে আরেক বোশেখ । একটা দৃঢ় বিশ্বাষ ছিল , তারা বাঙ্গালী বলে বোশেখি ভাতা থেকে বাদ যেতে পারেন না । এটি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের এক বড় স্মারক । শিক্ষকদের জন্য সেটি অনন্য সম্মাননা স্মারক ও বটে । শিক্ষক দেশ ও জাতির নমস্য । তাই অন্তত তাদের বোশেখি ভাতা দিতে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয় । কিন্তু, তারপর ও শংকা ছিল । এ শ্রেণির শিক্ষক-কর্মচারীদের টকাতে অনেকে বেশ মজা পায় । শেষাবধি শংকা আর বাস্তবের মাঝে মাত্র হাতে গুনা ক’টা দিন । সর্বশেষ তারা বোশেখি ভাতা না পাবার আশংকা ও বেদনায় যেমন মর্মাহত , তেমন ক্ষুব্ধ । পহেলা বোশেখ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তাদের মনোকষ্ট বেড়ে চলেছে । এখন হৃদয়ে তাদের কষ্টের একটা বড় সাগর ।

ইতোমধ্যে প্রকৃতিতে  কালবোশেখি ঝড় নিজের  আগমন জানান দিতে শুরু করেছে। প্রতি বছর এ সময়টাতে এমনি হয় । বোশেখ আসতে না আসতে কালবোশেখি ঝড়ের আগমন । প্রকৃতির সে কী ভয়ংকর রুপ ! এ ঝড় গোটা পৃথিবীকে যেন দুমড়ে-মোচড়ে দিতে চায় । কিন্তু, কেন ?  কী তার কষ্ট ? কী তার দুঃখ ? নিশ্চয় কোন না কোন কষ্ট আছে তার । কেউ হয়তো বা টকিয়েছে তাকে । অধিকার থেকে বঞ্চিত কারো কষ্টের পাহাড় ভেঙ্গে পড়ার গর্জন । কালবোশেখি ঝড়ের শাঁ শাঁ শব্দে কেবলি ফুটে ওঠে সে বেদনা ও কষ্টের সুর । শিলা বৃষ্টি আর বজ্রপাত যেন কালবোশেখের সে না পাওয়ার বেদনার এক মূর্ত প্রতিবাদ । এক একটা বজ্রপাতের শব্দে পৃথিবী চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দেবার প্রয়াস । আসমান-জমিন যেন চুরমার হয়ে যায় । সে কোন অজানা এক না পাওয়ার বেদনায় অভিনব প্রতিবাদ । বিদ্যুতের চমকে সারা দুনিয়া জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে চায় ।

সে কালবোশেখি ঝড়ের ঘনঘটা আজ দেশের পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার-পরিজনের অন্তরে। প্রতিবাদের বহ্নিশিখা  তাদের হৃদয় ও মনে ।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী মানে অনেক না পাওয়া আর অধিকার থেকে বঞ্চিত এক শ্রেণির মানুষ গড়ার কারিগর , যাদের ভাষাগত তোষণ নিয়েই তুষ্ট থাকার নিত্য চেষ্টা । দেশ ও জাতি ভাল করে জানেনা তাদের কষ্টের কথা । জানেনা তাদের বঞ্চনার ইতিহাস । কেবলি সংগ্রাম করে করে আজকের এ অবস্থান । পঞ্চাশ শতাংশ থেকে আন্দোলন আর দেন দরবারের মাধ্যমে পাঁচ-দশ শতাংশ করে করে আজ শুধু শতভাগ বেতন স্কেলটা তাদের । বাড়ি ভাড়া আর চিকিৎসা ভাতা হাস্যকর । উৎসব-আনন্দে ফুর্তি করার অধিকারটুকু জিম্মি । বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে ভাবার গরজ নেই কারো । এ করে করে জাতির লাভ না লোকসান-সে যোগ বিয়োগটা ও আজ কেউ করে দেখেনি । সেটিও করার কেউ নেই। বোশেখি ভাতা – সে তো  জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যার একান্ত নিজস্ব উদ্ভাবন । স্বকীয় চিন্তা-ভাবনার ফসল । এটি তার মনজ সন্তান । তার অসামান্য চিন্তা-চেতনা ও জাতীয়তাবাদী মনোভাব এবং সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর রক্তের প্রবাহটি একান্ত ভাবে ফুটে ওঠে বোশেখি ভাতা চালুর মাধ্যমে । বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে চির উজ্জীবিত রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এ উদ্ভাবনটি বিতর্কিত করার জন্য এমপিও শিক্ষকদের বোশেখি ভাতা থেকে বঞ্চিত করে রাখা ।

মানুষ ঠকায় মানুষকে । মানুষের হাতে প্রতারিত হয় মানুষ । সারা দুনিয়া জুড়ে শোষণ আর বঞ্চনা। আমাদের জাতির জনকের সে উপলব্ধি জাতিসংঘে তার প্রদত্ত এক ভাষণে এ ভাবে ফুটে ওঠে- “বিশ্ব আজ দু’টি শিবিরে বিভক্ত। একদল শোষক আর একদল শোষিত । আমি শোষিতের পক্ষে।” বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ  হয়ত এ দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ এ রকম ভাবে শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হতেন না ।

এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বোশেখি ভাতা দিয়ে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে বিতর্কের উর্ধাসনে নিয়ে যাওয়ার সময়টা একদম ফুরিয়ে আসছে । সামনে মাত্র একটি সপ্তাহ । শিক্ষকদের বেলায় সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য কিছুটা হলে ও হ্রাসের সুবর্ণ সুযোগটি কাজে লাগানো একান্ত আবশ্যক । এমপিও শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে শিক্ষার মান বাড়ানো অতীব জরুরী একটি কাজ । প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রিকে বিষয়টি অবগত করা দরকার । এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রি একটি দিক নির্দেশনা দিতে পারেন । শিক্ষকদের হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই কাজটি করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়কে দোষ দিয়ে দিয়ে নিজেদের দায় এড়ানোর সুযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেই ।

বৈষম্য থেকে তিক্ততা । তিক্ততা নষ্ট করে সম্পর্ক । এ থেকে কোন সুফল আশা করা যায় না । তাই, বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা গঠনের এখনই উপযুক্ত সময় । এ বোশেখটা পেরিয়ে গেলে তিক্ততা আরো বাড়বে এবং সম্পর্কের ক্রমাবনতি ঘটবে । আমরা কেউ এ চাইনে ।

মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038270950317383