রোববার (২২ এপ্রিল) নোয়াখালী সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জনসভা। জনসভায় যোগ দিতে ইউনিয়নের নয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডেকে নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। স্কুলগুলোতে এখন প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে। শিক্ষা তবে কর্মকর্তা প্রয়োজনে পরীক্ষার সময়সূচি এগিয়ে আনতে বলেছেন। শিক্ষা কর্মকর্তার ডাকে বৈঠকে যোগ দেয়া একাধিক প্রধান শিক্ষক এমন অভিযোগ করেছেন।
নেয়াজপুর ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব বিদ্যালয়ে দুই শিফটে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে। বুধবার (১৮ এপ্রিল) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সবক’টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ফোন করে জরুরি মিটিংয়ে ডাকা হয়। মিটিংয়ে প্রধান শিক্ষকরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন শেখ, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লাভলি ইয়াছমিন, সাহাব উদ্দিন, মহি উদ্দিন প্রমুখ। সভায় প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়, ২২ এপ্রিল নেয়াজপুর হাইস্কুল-সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জনসভায় সব শিক্ষককে যোগ দিতে হবে। ওইদিনের পরীক্ষা দুপুর ১২ থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রথম শিফটের পরীক্ষা ২ ঘণ্টা এগিয়ে সকাল ৮টায় শুরু করতে হবে।
সভায় একাধিক প্রধান শিক্ষক এমন নির্দেশনায় আপত্তি জানান। সরকারি কর্মচারী হিসেবে দলীয় জনসভায় অংশগ্রহণ সঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন। তাছাড়া সেদিন দুই শিফটেই প্রথম, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা।
শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সে সভায় উপস্থিত থাকা এক শিক্ষক জানান, আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগদানের নির্দেশনার সমালোচনার জবাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, যোগ দেয়া না দেয়া যার যার ইচ্ছা। তিনি কাউকে জবরদস্তি করবেন না। তবে শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষা কর্মকর্তা এভাবে নির্দেশ দেয়ার পর না গেলে পরে সমস্যা হতে পারে।
শিক্ষকদের রাজনৈতিক জনসভায় যোগ দিতে নির্দেশ দেয়ার কথা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) জসিম উদ্দিন শেখ বলেন, জনসভাকে কেন্দ্র করে সকালের পরীক্ষার সময় এগিয়ে নেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হলেও চূড়ান্ত হয়নি। তবে যে বিদ্যালয়ের মাঠে জনসভার ভেনু করা হয়েছে, সেখানে সকাল ৮টায় পরীক্ষা নিতে হতে পারে। রাজনৈতিক জনসভায় যোগ দিতে শিক্ষকদের নির্দেশ দিতে পারেন কিনা, জানতে চাইলে টিও বলেন, শিক্ষকদের জনসভায় থাকতে আমি কোনো নির্দেশ দেইনি। তবে অনেক শিক্ষক আমাকে বলেছেন রাজনৈতিক নেতারা নাকি তাদের জনসভায় থাকার জন্য চাপাচাপি করছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের আমি বলেছি, কেউ যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে যাবেন, না থাকলে যাবেন না।
এদিকে পরীক্ষা চলাকালে বিদ্যালয়ের মাঠে জনসভা আহ্বান ও শিক্ষকদের যোগ দিতে বাধ্য করার ব্যাপারে জানতে চাইলে নেয়াজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আকবর হোসেন কচি বলেন, জনসভায় যোগ দিতে শিক্ষকদের কোনো চাপ আমরা দেইনি। আর যে স্কুলের মাঠে জনসভা করা হবে, সেখানে মূলত বেলা ৩টা থেকে লোকসমাগম শুরু হবে আর মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকাল ৫টা থেকে। সুতরাং ক্লাস পরীক্ষার কোনো ক্ষতি হবে না।