শিক্ষকদের দুটো দাবি ও আরেকটু কথা - Dainikshiksha

শিক্ষকদের দুটো দাবি ও আরেকটু কথা

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিকদের তুমুল মাতামাতির মধ্যেই একটি বেসরকারি শিক্ষক সংগঠন জাতীয়করণের বিষয়টি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার জোরালো দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির নেতাদের নিজস্ব একটি সভায় উত্থাপিত এমন দাবি শুনে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীরা পুলকিত হয়েছেন। দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রকাশিত এ সংবাদটি অনেকে বার বার পড়েছেন। শেয়ারও করেছেন কেউ কেউ। আমার কাছে শিক্ষকদের দাবিটি 'মামা বাড়ির আবদার' ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি। আমার প্রশ্ন, যারা আবদারটি করেছেন, তাদের এত আস্থা বিশ্বাস কী করে হলো যে, দাবিটি নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত হলেই কাজ হাসিল হয়ে যাবে? যারা দাবিটি জানিয়েছেন তাদের জন্য আমার কেবল করুণাই হচ্ছে।

একটা বৈশাখ গত হলে আরেক বৈশাখের জন্য কী দীর্ঘ প্রতীক্ষায় একেকটা বছর কেটেছে এ দেশের পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার-পরিজনের! এমন করে একটা কিংবা দু'টো নয়-তিন তিনটি অপেক্ষার বছর কেটেছে। অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কেউ বলেছেন-আগে জানতাম না। কেউ বলেছেন-দিয়ে দেয়া উচিত। কেউ বলেছেন, আমাদের কাছে কোনওদিন কেউ চায়নি। কেউ বলেছেন, আগামী বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে।  আবার কেউ বলেছেন, এই অর্থ বছরেই দিয়ে দেয়া হবে। নানা জনের নানা কথা। এক গুচ্ছ সুখবরের আশা দিয়ে কেউ কেউ ঘুম পাড়িয়ে রাখার ফন্দি করেছেন। 

প্রিয় পাঠক, আমি আপনাদের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বহু কাঙ্খিত কষ্টের বৈশাখী ভাতার কথাই বলছিলাম। আজ তাদের ইনক্রিমেন্ট নিয়ে ও অন্য দিনের মত আপনাদের সামান্য আরেকটু কথা বলবো। 

সর্বশেষ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণ আশা করেছিলেন অন্তত সরকারের শেষ সময়ে এসে হলেও বৈশাখী ভাতা ও পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট তারা পাবেন। দীর্ঘদিন থেকে তাদের মনে এ বিশ্বাসটুকু জন্মেছিল যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সরকারের শেষ উপহারস্বরূপ এ দু'টো দাবির বিষয়ে সকলকে সারপ্রাইজ দেবেন। এমন একটি সুপ্ত প্রত্যাশা নিয়ে সবাই ধৈর্য ধরে বসেছিলেন। মুখোশধারী কোনও কোনও শিক্ষক নেতা ও সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের এ রকম একটি মিথ্যে আশ্বাসে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলেন। আমার ইদানিং কেন জানি কেবল শিক্ষক নেতাদের নয় সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদেরও দোষ দিতে মন চায়। নেতারা তাদের নিজেদের আখের গোছাবার জন্য সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের 'মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান, ধর্মঘট, মহাসমাবেশ, অনশন' ইত্যাদিতে ব্যবহার করেছেন এবং 'যেমনি নাচাও, তেমনি নাচি' ভাবে মিথ্যা আশ্বাসের স্রোতে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীরাও কেবল ভেসে বেড়িয়েছেন। কোন বাছ-বিচার না করে যে যা বলেছেন কেবল তা বিশ্বাস করেছেন।

এখন কিছুই নেই। কেবল ঘোড়ার ডিম। নেতারা এখন ঘুমিয়ে। কেউ কেউ আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে ব্যস্ত, মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সাধারণ শিক্ষকদের দোষ দেই এজন্য যে, তারা নিজেরা সংগঠিত না হয়ে যখন যে ডাক দিল তখন তার পেছনে দে ছুট। মতলববাজ শিক্ষক নেতারা সাধারণ শিক্ষকদের ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়। যার যার দলের নেতার গুণকীর্তনে সাধারণ শিক্ষকরা লেগে পড়েন। ভাগাভাগিতে আন্দোলন মাঠে মারা যায়। এই যেমন কাছাকাছি বছরগুলোতে হয়েছে।                                 

গত সপ্তাহে বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপনী দিবসেও এ নিয়ে কেউ টু শব্দটি ও করেননি। কারো কোনও গরজ ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় এ নিয়ে চাইলে দু'টো কথা বলতে পারতেন। একটু সান্ত্বনার বাণী শোনাতে পারতেন। আমাকে প্রায় সময়ই অনেকে বলে থাকেন, বাদ দেন এসব লেখালেখি। লেখায় তো কোন কাজ হয়না। বৈশাখি ভাতা আর ইনক্রিমেন্ট নিয়ে তো অনেক লিখলেন। আপনার লেখা সম্ভবতঃ কেউ পড়ে না। তাদের সবিনয়ে বলি, আমি আমার বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে লিখে যাই। কেউ পড়লো কি পড়ল না সে ভাবনায় কেউ লেখেন না। আমিও না। যে কোনও লেখকের অনেক দায়বদ্ধতা। সামাজিক দায়বদ্ধতা না থাকলে কেউ লিখতে পারে না। কেউ কিছু দিল কি দিল না-সে আমার দেখার বিষয় নয়। সেটি তাদের বিষয়। তাদের দায়-দায়িত্বের ব্যাপার। আমার দেখার বিষয়-দাবিটি যৌক্তিক না অযৌক্তিক? বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট যে কোনও কর্মজীবী মানুষের একান্ত একটি মৌলিক ও মানবিক অধিকার।

বছরে বছরে যে কোনও কর্মজীবী মানুষের অভিজ্ঞতা বাড়ে আর সে অভিজ্ঞতার মুল্যায়ন করা হয় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি তথা ইনক্রিমেন্ট প্রদান করে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মজীবীর কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায়। নিজের কাজের প্রতি আন্তরিকতা ও আত্মপ্রত্যয় জন্মে। ফলে ভোক্তার চেয়ে উদ্যোক্তার বেশি লাভবান হয়। অনুরূপ, বাংলা নববর্ষ ভাতা বাংলা ভাষাভাষী যে কোনও কর্ম ও পেশাজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার। এটি কাউকে না দেয়া মানে জাতিসত্তার অপমান। জাতীয়তার মূলে কুঠারাঘাত। জাতি ও জাতীয়তাকে চরম অবজ্ঞার শামিল। জাতিকে দ্বিখন্ডিত করে রাখার এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। দুনিয়ার আর কোথাও নববর্ষ ভাতা চালু আছে কিনা আমার জানা নেই। বাংলাদেশে এ ভাতাটি চালু করে বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পেয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা না দিয়ে মাটি করে দেয়া হয়েছে তাদের আনন্দ।                              

সব স্কুল-কলেজ এক সাথে জাতীয়করণ করা আজ একটি চূড়ান্ত দাবি। এর আগে শিক্ষক-কর্মচারীর ন্যায্য দু'টি পাওনা ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা পরিশোধ করা একান্ত অপরিহার্য কাজ। উন্নয়নের মহাসড়কে অদম্য বাংলাদেশ। উন্নয়ন ও সৃজনে অদ্বিতীয় আমরা। এসব কেবল মুখে মুখে বললে হবে না। সুর্য যখন ওঠে তখন ঢাকঢোল পিটিয়ে জানাতে হয় না। সারা দুনিয়া তখন নিজে থেকে অপার বিস্ময়ে দেখে সুর্যোদয়ের অনিন্দ্যসুন্দর অসীম সৌন্দর্যমণ্ডিত রুপ। পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে উন্নয়নে বাংলাদেশের অদম্য গতি দেখছে বটে কিন্তু চাঁদের কলংক ও তাদের চোখকে ফাঁকি দিতে পারছে না। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সৃজনের কলঙ্ক মোচনে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট দেয়ার বিষয়ে বিলম্ব আর মোটেও ঠিক হবে না।নির্বাচনের আগে কাজটি সেরে গেলে ভাল হয়।

 

লেখক: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।                                                   

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077571868896484