শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কেন প্রয়োজন - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কেন প্রয়োজন

মাছুম বিল্লাহ |

আমরা রাস্তাঘাটে চলার সময় চারদিকে দেখতে পাই ইউনিফর্ম পড়া আনসার, পুলিশ, মাঝে মাঝে বিজিবি এমনকি সেনা সদস্যদের।তারা সকলেই বিশেষ পোশাক পরিহিত এবং তাদের হাতে আছে এক ধরনের আর্মস। তাদের ওই বিশেষ পোশাকটি এবং হাতের আর্মস কিন্তু এমনিতেই দেয়া হয়নি। তারা সবাই বিশেষ এক ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে, প্রশিক্ষণে সাফল্য অর্জন করার পরই তাদের ওই পোশাক পরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং হাতে একটি করে আর্মস দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের পূর্বে তাদের হাঁটাচলা এবং কথাবার্তা বলার ধরন ছিল আলাদা এবং হাত ছিল খালি। প্রশিক্ষণের পর তাদের কথাবার্তায়, হাাঁটাচলায় , চুল কাটায়, পোশাক পরিচ্ছদে পরিবর্তন এসেছে। অর্থাৎ বিশেষ এক ধরনের প্রশিক্ষণ তাদেরকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের এই বিশেষ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। আবার তাদের প্রশিক্ষণের ভেতরেও ভিন্নতা আছে যার ফলে পুলিশের কাজ সেনাবাহিনী দক্ষতার সাথে করতে পারেনা, আবার সেনাবাহিনীর কাজ পুলিশ দক্ষতার সাথে করতে পারেনা। 

আমরা আর একটি বিষয় যদি লক্ষ করি রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি চলে। প্রতিটি গাড়িতেই  একজন করে গাড়ি চালক রয়েছেন, তারা সবাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।প্রশিক্ষণ না নিয়ে, প্রশিক্ষণের সার্টিফিটিকেট না নিয়ে কেউই গাড়ি চালাতে আসেননি। কিন্তু শিক্ষকতার ক্ষেত্রে হয়েছে কী? শিক্ষকতা কি কোন সহজ কাজ যে, ইচ্ছে করলেই যে কেউ তা করতে পারবে? একজন শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়া কিভাবে ডিল করবেন শিক্ষা বিজ্ঞান, শিশুবিজ্ঞান, কিভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহী করবেন, কিভাবে তাদেরকে বিভিন্ন শিক্ষামুলক কাজে অংশগ্রহণ করাবেন ? ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক  কিংবা যে কোনভাবেই হোক জাতি গঠনের স্টিয়ারিং একজন শিক্ষকের হাতে এসে পড়েছে। একজন গাড়িচালক ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক বলতে পারবেন না যে, রাস্তা খারাপ বা তার গাড়ি চালাতে ভাল লাগে না তাই তিনি  অহরহ দুর্ঘটনা ঘটাবেনই। তিনি সামান্যতম দুর্ঘটনা ঘটালে তার পরিস্থিতি , সাথে সাথে তার বিচার জনতা কিভাবে করে আমরা কমবেশি প্রত্যক্ষ করেছি। একজন শিক্ষকের হাতে  কিন্তু জাতির স্টিারিং। তিনি বলতে পারবেন না, রাস্তা খারাপ বা তার এই পেশা ভাল লাগছে না তাই ভালভাবে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। এই পেশায় অনেক সমস্যা আছে তাই আমি এই কাজে মনোনিবেশ করতে পারছি না। এটি বলার উপায় নেই। 

সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় চাকরিতে যোগাদানের ক্ষেত্রে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক নয়। তবে সরকারি শিক্ষকদের বেলায় চাকরিতে যোগদানের পাঁচ বছরের মধ্যে বিএড প্রশিক্ষণ নেয়া বাধ্যতামূক।বিএড প্রশিক্ষণ থাকলে সরকারি শিক্ষকগন দশম গ্রেডে যোগ দিয়ে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পান। আর বেসরকারি শিক্ষকদের বিএড প্রশিক্ষণ থাকলে এগারতম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করার বিধার রয়েছে। সরকার ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা  (এসডিজ-৪) বাস্তবায়নে দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের কথা বললেও শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক নেই। বিএড এবং মাদরাসার ক্ষেত্রে বিএমএড  ও সমমানের প্রশিক্ষণ ছাড়াই বর্তমানে দেশে মাধ্যমিক ও উচচ মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন এক লাখ ৫৮ হাজার ৭২২ জন শিক্ষক অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার এক তৃতীয়ংাশেরও বেশি শিক্ষকের প্রশিক্ষণ নেই। এর মধ্যে ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের হার সবচেয়ে কম। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণের বাইরে থাকা এসব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যোগ্যতা হিসেবে বিএড প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার চিন্তাভাবনা করছে কর্তৃপক্ষ। ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সব শিক্ষকদের এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে যাদের প্রশিক্ষণ নেই, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোতে শিক্ষকরা যাতে প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার পান সে বিষয়েও আলোচনা চলছে। তবে, এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। একবছর মেয়াদি প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের পাঠালে ওই শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে কারা ক্লাস করবেন বা নাকি ক্লাস ফাঁকা যাবে সে বিষয় কিন্তু  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে বাস্তবধর্মী  চিন্তা করতে হবে। 

এমনিতেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকের অভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলছে। আবার বিরাট অংকের শিক্ষক যদি এক বছরের জন্য প্রশিক্ষণে চলে যান তাহলে ক্লাসের কি হবে? একসময় ’ প্রমোট’ নামের একটি প্রজেক্ট ছিল মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য। ওই প্রজেক্ট একটি চমৎকার কাজ করেছিল। যেসব শিক্ষকরা প্রশিক্ষণে আসবেন তাদের বিপরীতে একজন করে খন্ডকালীন/বদলি শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়া হতো এবং তাদের বেতনও ওই প্রজেক্ট থেকেই বহন করা হতো। আর একটি বিষয় টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোতে শিক্ষকরা প্রশিক্ষণে আসতে চান না যদিও প্রশিক্ষণের পরে শিক্ষকদের বেতন স্কেল পরিবর্তন হয়। এর দ্বারা বুঝায় যে, শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে আগ্রহী নন।প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে শিক্ষকরা অনাগ্রহী এটি যেমন সত্য, তেমন টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোতে যে শেখানো হয় তা কতটা বাস্তবমুখী, আধুনিক ও আনন্দদায়ক সেগুলোও ভাবতে হবে। টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোতে দেখলাম শিক্ষকদের হাতে হাতে গাইড বই। কোথায় শিক্ষা? কোথায় পড়াশুনা? সেখানেও শুধু প্রশিক্ষণের সিঁড়ি বাওয়া আর সময় কাটানো। মূল বা মূল জ্ঞানর্জনের সাথে তফাৎ অনেক। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ক্লাসে কি পড়াচ্ছেন, কিভাবে পড়াচ্ছেন, প্রশিক্ষণের পর কোন বাহিনীর মতো শিক্ষকদের পড়ানোর ধরনে, আচার-আচরণে পরিবর্তন এসেছে কিনা তা দেখার কোন ব্যবস্থা নেই। এসব কারণে শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ গ্রহণে খুব একটা আগ্রহ দেখান না। টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোতে আবার চার বছর মেয়াদি অনার্স কোস চালা করেছে কারণ ইন-সার্ভিস শিক্ষকরা প্রশিক্ষণে সেভাবে আসতে চাননা। এটি একটি বাস্তবতা।


টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র (এসডিজি-৪) বাস্তবায়নে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরের শুরুতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের সংখ্যা বাড়াতে বিএড প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেয়া হয়। 

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যানুযায়ী , দেশের সরকারি এবং এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় শিক্ষকসংখ্যা চার লাখ ৩১হাজার ৮২২জন। এর মধ্যে বিএড প্রশিক্ষণ নেই এক লাখ ৫৮ হাজার ৭২২জন। এর মধ্যে রয়েছেন এক লাখ ২৮ হাজার ৪৭৩ জন পুরুষ ও ৩০ হাজার ২৪৯জন নারী শিক্ষক। পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায় ৩০ বছর বয়সী প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকের সংখ্যা চার হাজার ৯৮জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী শিক্ষক ৬০ হাজার ২৮১জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী শিক্ষক ৬১হাজার ৮৭জন ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী শিক্ষক ৩০ হাজার ২৫৬জন। প্রশিক্ষণবিহীন এসব শিক্ষকের মধ্যে বেশিরভাগই মাদরাসা শিক্ষক। দাখিল ও আলিম মিলিয়ে এক লাখের বেশি এমপিওভুক্ত মাদরাসা শিক্ষক রয়েছেন। যাঁদের বেশির ভাগের বিএড বা সমমানের ডিগ্রি নেই। সর্বোচচ দশ হাজার শিক্ষকের বিএড পর্যায়ের ডিগ্রি রয়েছে। কয়েক বছর আগে মাদরাসার শিক্ষা অধিদপ্তর গঠিত হলেও শিক্ষকদের মান উন্নয়নের তারা এখােন কাজ শুরু করতে পারেনি। মন্ত্রণালয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৭২২জন শিক্ষককে বিএড প্রশিক্ষণ দিতে ব্যয় কত হবে, সময় কত লাগবে, প্রতি ব্যাচে কতজন শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহন করবেন, সময়ের দিক থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পদ্ধতি কেমন হবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে সম্প্রতি ব্যানবেইসকে দায়িত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আরও কিছু সিদ্ধান্তের কথা শোনা যাচেছ । যেমন প্রশিক্ষনবিহীন শিক্ষকদের কমপক্ষে এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবে ৫২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষকদের জন্য সংক্ষিপ্ত কোর্সের আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএড বা নূন্যতম এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ এবং ডিগ্রীধারী শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তাব করা হবে। চিন্তাভাবনাগুলো ভাল তবে বাস্তবমুখী হতে হবে। 

শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ না থাকায় যেসব ছোটখাট প্রশিক্ষণ তাঁরা পান তাতে বিষয় ও কৌশল ঠিকমতো আত্মস্থ করতে পারেন না। ফলে শিক্ষার্থীরাও সৃজনশীলে দক্ষ হতে পারছেন না। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে মাধ্যমিক ও উচচশিক্ষা অধিদপ্তরের করা একাডেমিক সুপারভিশনে দেখা যায় যে, ৫৭ দশমিক ২৮শতাংশ শিক্ষক নিজেরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারেন না। আংশিক প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারেন ২৬ দশমিক ২৭শতাংশ শিক্ষক আর বাইরে থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করেন ১৬ দশমিক ৪৫শতাংশ শিক্ষক। অর্থাৎ ৪২শতাংশ শিক্ষক নিজেরা সৃজনশীল প্রশ্ন একেবারেই প্রণয়ন করতে পারেন না। বিভিন্ন প্রকল্প ও মাউশি অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখার আওতায় সৃজনশীল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত কতজন শিক্ষক সৃজনশীল বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তার হিসাব নাকি তাদের কাছে নেই। এটি একটি আশ্চর্য্যজনক বিষয়! তবে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে স্থানীয় প্রশিক্ষণখাতে পরীক্ষা পদ্ধতি উন্নয়ন বিষয়ে দুই লাখ ২৪হাজার শিক্ষকের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৪ থেকে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৬০ হাজার ৭৭০ জন শিক্ষককে সৃজনশীল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রথম দিকে শিক্ষকদের তিনদিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো বর্তমানে তা ছয়দিন করা হয়েছে। ছোটখাট প্রশিক্ষণ কিংবা কোন প্রজেক্টের অধীনে প্রশিক্ষণ মানে টাকার খেলা। আমি লক্ষ্য করেছি এসব প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা আসেন অর্থনৈতিক কিছু সুবিধা প্রাপ্তির জন্য (তবে সবাই না)। প্রজেক্টের টার্গেটও থাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করে ফেলতে হবে এবং কতজন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন সেই সংখ্যাটি দেখালেই যেন কাজ শেষ। শিক্ষকরা কি শিখলেন বা শিখলেন না, প্রশিক্ষণ বাস্তবে কতটা কাজে লাগল বা লাগলো না এ নিয়ে কারুর কোন চিন্তা নেই। 

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বিভিন্ন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রতি বছর ’ গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং ( জিইএম) প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে  যে, প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৫০ শতাংশ। অথচ প্রতিবেশি দেশ নেপাল, মালদ্বীপ, মিয়ানমার ও সিঙ্গাপুরে এই হার ৯০শতাংশেরও বেশি। এছাড়া শ্রীলংকায় প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠদানরত শিক্ষকদের ৮৫শতাংশ, পাকিস্তানের ৮২ ও ভারতের ৭০শতাংশেরই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ রয়েছে।এর বাইরে ভুটান, জর্ডান, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে প্রাথমিক শিক্ষকদের শতভাগই প্রশিক্ষিত। আমরা আসলে কি নিয়ে বড় বড় কথা বলছি? বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী  এ বিষয়ে বলেন, ” বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের আগে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের সনদ নিতে হয়। শুধু প্রাথমিক নয়, শিক্ষার প্রতিটি ধাপেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। নিয়োগের শর্ত হিসেবে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। কেননা আমাদের দেশে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় না। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়েছেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের জন্য এসব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা জরুরি।  এছাড়া প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের জন্য ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে সরকারি-বেসরকারি মিলে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০১টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে  ১কোটি ৭২ লাখ ৫১হাজার ৩৫০ জন। গড়ে একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২৯ জন । প্রতি ১১৯৫জন লোকের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৮৫ লাখ ৮ হাজার ৩৮ ও ছাত্রী সংখ্যা ৮৭লাখ ৪৩ হাজার ৩১২। এ শিক্ষার্থীদের পাঠদানে নিয়োজিত ৬লাখ ২৩ হাজার ৯৬৪জন শিক্ষক। মোট শিক্ষকের ৬২শতাংশই নারী। অর্থাৎ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২৮। এই সংখ্যা এবং অনুপাত পজিটিভই দেখাচেছ  কিন্তু শিক্ষকদের মানোন্নয়নের চিত্র পুরো আলাদা।  প্রাথমিকের মতো মাধ্যমিকের প্রশিক্ষিত শিক্ষকের পেছনের সারিতে বাংলাদেশ। দেশের মাধ্যমিক শিক্ষকদের ৬৬ শতাংশই অপ্রশিক্ষিত। অথাৎ প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিক্ষকই প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদ্যালয়ে পাঠদান করছেন। যদিও পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে এ হার ৯৩ শতাংশ, ব্রুনাইয়ে ৯০ ও নেপালে ৮৯ শতাংশ। আর ভুটান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও জর্ডানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় পাঠদানরত শতাভাগ শিক্ষকই প্রশিক্ষিত। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে হলে শিক্ষক প্রশিক্ষণের এই চিত্র অবশ্যই পাল্টাতে হবে, সেটি শুধু সরকার নয় , শিক্ষকদের নিজেদেরও এগিয়ে আসতে হবে। 

লেখক: শিক্ষা গবেষক ও বিশেষজ্ঞ, বর্তমানে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত।

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031461715698242