এমপিওর দাবিতে অনশনে অংশ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষকদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া মোনাজাত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে অসুস্থ শিক্ষকদের জন্য দোয়া মোনাজাতে সহস্রাধিক শিক্ষক অংশ নেন।
এদিকে, শিক্ষকদের দাবি আদায়ের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
গত রোববার (৩১ ডিসেম্বর) থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন শুরু করেন শিক্ষকরা। এর আগে একই দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। শীতের রাতেও শিক্ষকরা ফুটপাতে অবস্থান করছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) অনশনের পঞ্জম দিন পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরমধ্যে অনেকে সুস্থ্ হয়ে ফের অনশনে অংশ নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার আমরণ অনশন কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে দীর্ঘ সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে অবস্থান করে সংহতি জানান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুশান্ত দাস। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিকক্ষ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তামজিদ উদ্দিন,সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক হামিদুল হক এবং এ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোর্শিদা সুলতানা।
এছাড়া সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তারা সবাই শিক্ষকদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষকদের দাবি মেনে নিতে।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহামুদুন্নবী ডলার বলেন, আজ বৃহস্পতিবারও কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যত অসুস্থ হচ্ছে, অনশন তত বেগবান হচ্ছে।অনেকে সুস্থ হয়ে আবার অনশনে ফিরছেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয় ভূষণ বলেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে আমরা সেই ২০১২ সাল থেকে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। কোনো কাজ হয়নি। তিনি শুধুই সময়ক্ষেপণ করেছেন। তাই আমরা আর কাউকেই বিশ্বাস করছি না। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী আমাদের কিছু বলুক। তিনি নিশ্চয় আমাদের দুঃখ বুঝবেন।
সরকার স্বীকৃত সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবিতেই শিক্ষকদের এ আন্দোলন। স্বীকৃতি পেলেও নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। সারাদেশে এমন নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। অন্যদিকে বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৪ লাখের বেশি। সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, সরকারি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষরা এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন ২০১৩ সালে। ওই বছরের ১০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশ পিপার স্প্রে ব্যবহার করে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর একই বছরের ১৫ জানুয়ারি ন্যাম ভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি করতে গেলে মানিক মিয়া এভিনিউর পশ্চিম পাশে পুলিশ বাধা দেয়। সেই বাধা থেকে শুরু হয় হাতাহাতি। একপর্যায়ে পিছু হটেন শিক্ষকরা। সোবহানবাগের প্রিন্স প্লাজার সামনে অবস্থান করতে চাইলে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এরপর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসে অবস্থান করে। শিক্ষামন্ত্রী এই ঘটনার পর শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ৩ মাসের মধ্যে এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন।এই আশ্বাসে পেরিয়ে যায় দুই বছর।
এরপর ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রথমে শহীদ মিনারে সমাবেশ এবং পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন পালন করে ‘নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন’। সমাবেশ থেকে বলা হয়, সুস্পষ্ট ঘোষণা না এলে এই আন্দোলন চলবে। সরকার আবারও এমপিওভুক্তির আশ্বাস দেয়। ওই আশ্বাসের পর কেটে যায় একবছর। এরপর ২০১৬ সালে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আবার রাজপথে নামেন শিক্ষকরা। ওই সময় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অন্তর্ভুক্তি হওয়ার আশ্বাস দেয় সরকার। ওই আশ্বাসের পর শিক্ষকরা ২০১৭ সালের জানুয়ারি আবার অবস্থান নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। প্রায় ২৮ দিন অবস্থান করার পর শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তারা ফিরে যান বিদ্যালয়ে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও এমপিও প্রসঙ্গ না আসার প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা।