দুধ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষকদের গবেষণা প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন। এসময় মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস এম আবদুর রহমান, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক ড. এস এম আবদুর রহমান বলেন, প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপকের গবেষণা নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন সেটা খুবই অপমানজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের গবেষণার ফলকে যাচাই-বাছাই না করে যদি বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়া হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জনস্বার্থে কিভাবে গবেষণা করবেন? তিনি বলেন, ওই শিক্ষকের (অধ্যাপক আ ব ম ফারুক) গবেষণার ফল সত্য না মিথ্যা তা পরীক্ষার জন্য আরেকটি গবেষণা দরকার। তা প্রমাণ না করে কেউ মন্তব্য করতে পারে না। তথ্য-প্রমাণ ছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে সচিবের মন্তব্য করা বিধিসম্মত না।
অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণা হবে কল্যাণকর। জনকল্যাণকর গবেষণা আরও চালিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু সচিব যেভাবে হুমকি দিয়ে কথা বলেছেন তিনি রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করেছেন। আমরা তার বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছি।
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী চয়ন বড়ুয়া বলেন, শিক্ষকদের কাজ হলো গবেষণা করা। কিন্তু তাদের গবেষণাকে নিজেদের স্বার্থে বিতর্কিত করে ঢালাও মন্তব্য করা ঠিক নয়। আমরা অনতিবিলম্বে ওই কর্মকর্তার (কাজী ওয়াছি উদ্দিন) শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, গত ৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়ে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, পিয়ার রিভিউ জার্নালে যদি প্রকাশ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আগামী সাত দিনের মধ্যে তা মন্ত্রণালয়ে হাজির করুন। যদি না করেন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আপনাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। এর আগে গত ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক আ.ব.ম ফারুকসহ ফার্মেসি অনুষদের কয়েকজন শিক্ষক এই গবেষণার ফলাফল সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেন।
কিন্তু এরপর দুই দফা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হলের সঙ্গে এই হলটির সাক্ষাৎকারের তারিখও পেছানো হয়। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার গ্রহণের পর সকল আবাসিক হলের প্রভোস্ট, অনুষদের ডিনদের নিয়ে এক সভায় আসন বরাদ্দের সাক্ষাৎকারের তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরে গত ২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অনিবার্য কারণে সাক্ষাৎকার স্থগিতের বিষয়টি জানিয়েছেন।
আবাসিক হলটিতে সংযুক্তিপ্রাপ্ত লোকপ্রশাসন বিভাগের আকলিমা আক্তার, বাংলা বিভাগের উম্মে হানি ও শাহিনা আক্তার এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের আরিফা আক্তার জানিয়েছেন, হলের প্রভোষ্ট স্যার আমাদের কথা দিয়েছিলেন জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আমরা হলে উঠতে পারবো। এ সিদ্ধান্তের পর এ মাসে আমি বাসা ছেড়ে দিয়েছি, কিন্তু হলের আসন এখনও বরাদ্দ দেয়া হয়নি। বই-খাতা সব এক বান্ধবীর রুমে রেখে অন্যের রুমে ডাব্লিং করে থাকছি। পড়াশোনা করা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী রিক্তা আহমেদ বলেন, ‘১৮ মাস ধরে অন্য হলের গণরুমে থাকছি। সিট বরাদ্দ হচ্ছে হচ্ছে বলে আর হচ্ছে না। ইতোমধ্যে সাক্ষাৎকারের তারিখ দিয়েও তিনবার পেছানো হয়েছে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।’
স্মারকলিপি গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তাদের বিষয়টি নিয়ে মিটিংয়ে বসবো। যত দ্রুত সম্ভব তাদের বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।’রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক আ.ব.ম ফারুকসহ ফার্মেসি অনুষদের কয়েকজন শিক্ষক এই গবেষণার ফলাফল সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেন।