শিক্ষকের চেয়ার ও আচরণের ব্যাকরণ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকের চেয়ার ও আচরণের ব্যাকরণ

মোস্তাফিজুর রহমান শামীম |

কবি কুসুমকুমারী দাশ‘র “আদর্শ ছেলে” কবিতার প্রথম দুটি চরন- ‘’আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’’ শৈশবে পড়েছিলাম। কথা ও কাজ -দুইয়ের সাথেই ভদ্রতা ও অভদ্রতা শব্দদুটি জড়িত । ভদ্রতার আভিধানিক অর্থ ভদ্র ভাব বা আচরণ। মানুষের আলাপচারিতা, আচরণ ও ব্যবহারের ইতিবাচক ধরণ ‘ভদ্রতা’। এই ভদ্রতাই সামাজিক-নৈতিক শিক্ষা, যা বিভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে প্রয়োগযোগ্য। পরিবার, সমাজ, দেশ ও কালের বিবর্তনের সাথে সাথে বদলে যায় আমাদের সৎ- বিনয়ী ও সুন্দর মানুসিকতার প্রকাশ বা ভদ্রতা। ভদ্রতা আমাদের আচার- ব্যবহারের সমষ্টিগত রুপ, যেমন কোন একটি কাজ বা কাজ সম্পাদনের পদ্ধতি যা পরিবার, সমাজ, দেশ সাধারণ স্বীকৃতি দেয়। এর বিপরীতে যা ঘটে তা অভদ্রতা। যা অনৈতিক, অসামাজিক এমনকি দেশদ্রোহিতাও হতে পারে। অর্থাৎ সাধরনভাবে ভদ্র ব্যক্তি তাকেই বলা যেতে পারে, যিনি অন্যের সাথে কখনোই নেতিবাচক বা অভদ্র আচরণ করেন না বা সহজে করতে চান না। 

একজন মানুষকে ভদ্রতা জ্ঞানে শিক্ষিত করার জন্য সমাজ তথা দেশে যার অবদান অসীম, তিনি একজন শিক্ষক। শৈশবে শিক্ষকের পাশাপাশি মা-বাবা আমাদের ভদ্রতা, শিষ্টাচার, বড়দের সন্মান দেয়া, ছোটদের স্নেহ করা শিখিয়েছেন। বাবা –মা’ই শিখিয়েছেন শিক্ষকদের সম্মান করা। এই নিয়ম সূতোয় বোনা আমাদের জীবন। সমাজে চলাফেরার ক্ষেত্রে অনেককেই সম্মান করতে হয়। কেউ কেউ সম্মান করেন না, কেউ সামনে সম্মান জানিয়ে পেছনে সরে গিয়ে মনে মনে গালিও দেন। বড় বিচিত্র আমরা !

সমাজে অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি আছেন, আছেন অনেক সরকারি-বেসরকারি কর্মকতা এবং আমলা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে সাধরণ মানুষ তাদের শরনাপন্ন হন। কেউ উপকার করেন, কেউ করেন না, কেউ শুধু দুর্ব্যবহার ছাড়া আর কিছুই করেন না। যাই হোক সবার তো মন- মানসিকতা এক না ! কোনও কোনও ব্যক্তির আচরণ দেখলে মনের অজান্তেই তার প্রতি শ্রদ্ধা চলে আসে। বেশ কিছুদিন আগে দৈনিকশিক্ষায় দেখেছি সাবেক শিক্ষা সচিব মো: নজরুল ইসলাম খান মহোদয়কে দেখেছি  তার স্কুল জীবনের শিক্ষক, তার বাসায় আসলে তিনি সেই শিক্ষা গুরুর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন। শ্রদ্ধা জানাই তাকে। কিন্তু এই দৃশ্য আমার মনকে খুব একটা নাড়া দেয়নি। কারণ এটাতো অস্বাভাবিক কিছু না। ছাত্র শিক্ষককে সম্মান দেখাবেন, শিক্ষক ছাত্রকে স্নেহ করবেন, এটাইতো ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক। ছাত্র যদি দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধান মন্ত্রী হন, শিক্ষক ছাত্রের সম্পর্ক কি ছিন্ন হয়ে যাবে?! যত বড় মাপের ব্যক্তিই হোন না কেন, কেউ কখনও বলতে পারবেন না, আপনি কোন শিক্ষকের ছাত্র না। যাই হোক আমি মনেকরি  শিক্ষকদের সম্মান জানানো  ভদ্রতার প্রথম ধাপ।

স্কুল জীবনে দেখেছি বিভিন্ন সময়ে স্কুল পরিদর্শক, সরকারি আমলা স্কুল পরিদর্শনে এসেছেন। তারা ক্লাসে যেয়ে আমাদের সাথে কথা বলেছেন, সুবিধা- অসুবিধার কথা শুনেছেন। স্কুল ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখেছেন। কিন্তু তিনি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও কখনো হেড স্যারের চেয়ারে বসেননি। তিনি হেডস্যারের টেবিলের সামনে অতিথিদের চেয়ারেই বসেছেন।

আমি জানি না, চেয়ারে বসা নিয়ে কোন নিয়ম- নীতিমালা আছে কি না ! বড় বাবুদের চেয়ার অষ্ট ধাতুর তৈরি কিনা তাও আমার জানা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে মফঃস্বল এলাকার অনেক স্কুল- কলেজে দেখছি সরকারি কর্মকর্তারা কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের চেয়ারে চরম প্রশান্তিতে বসে আছেন । আর প্রতিষ্ঠান প্রধান তার সামনে অথিতির চেয়ারে বসে আছেন।

আমার প্রশ্ন একটাই, এই কর্মকর্তা কি তার নিজের স্কুল বা কলেজের প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে পারবেন? নিয়ম অনুযায়ী এটা কি ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না? এখানে কি ব্যক্তিত্ব্যের প্রশ্ন আসতে পারে না? ব্যক্তি এবং ব্যক্তিত্ব দুটোই আমার কাছে ভিন্ন মনে হয়। ব্যক্তি সবাই হতে পারে কিন্তু ব্যক্তিত্বের অধিকারী সবাই হতে পারে না। আবার এটাও সত্য, ব্যক্তি ছাড়া ব্যক্তিত্ব্যের অধিকারী অন্য কোন প্রানী হয় না। আমি কোন জনপ্রতিনিধি, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের কখনও দেখিনি,  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের চেয়ারে বসতে। কারণ তারা তাদের শিক্ষকদের মন থেকে মুছে ফেলেননি। অনেক সরকারি প্রসাশনিক কর্মকর্তাকে দেখেছি তারা তাদের অধীনস্থদের চেয়ারে বসেন না। আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে তাদেরকে রুচিশীল ও ব্যক্তিত্ববান মনে হয়েছে।মন থেকে শ্রদ্ধা জানাই আপনাদের প্রতি। মনের আবেগে অনেক কিছুই লিখে ফেললাম। উদ্দেশ্য একটাই শিক্ষকদের সম্মানী যাই হোক, সম্মানটুকু যথাযথ চাই।

 

লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান শামীম, প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, ভেড়ামারা কলেজ, কুষ্টিয়া।        

 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043108463287354