শিক্ষকের বেতের আঘাতে চোখের আলো হারালো সেই ছাত্রী - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকের বেতের আঘাতে চোখের আলো হারালো সেই ছাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের বেতের আঘাতে আহত হওয়া হাবিবা আক্তার (৮) নামে সেই ছাত্রীর চোখের দৃষ্টিশক্তি আর ফিরবেনা বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।  রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন হাবিবা। 

হাবিবার চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ জানান, শিশুটির চোখ থেকে লাঠির একটি টুকরো বের করা হয়েছে। আঘাতে তার বাম চোখটি পুরোপুরি আলো হারিয়েছে। এই চোখ দিয়ে আর দেখার সম্ভাবনা নেই। ওর চোখের মনিটি গলে গেছে। ধীরে ধীরে তা শুকিয়ে যাবে। ফলে আর কখনোই দেখতে পাবে না। তবে চোখের স্বাভাবিক সৌন্দর্যের জন্য কিছুদিন পর তার চোখে পাথর লাগানো যাবে। 

হাবিবার মা রুবিনা আক্তার বলেন, ছোট্ট শিশুটির ওপর নেমে আসা এই করুণ পরিণতির বিবরণ। সেদিন বেলা ১১ টার দিকে জানতে পারি, হাবিবাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। তার চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। কোনো কিছু না বুঝেই হাসপাতালে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি মেয়ের এমন অবস্থা।

সহপাঠীরা, দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস চলছিল। ক্লাসের এক শিক্ষার্থীকে আকাশমনি গাছের ডালের একটি লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছিলেন স্কুল শিক্ষক নিরঞ্জন দেবনাথ। হাবিবা ও কয়েক বন্ধু কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো। হঠাৎই শিক্ষক তার হাতের লাঠিটি ওদের দিকে ছুঁড়ে মারেন ও সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। লাঠিটি সরাসরি এসে আঘাত করে হাবিবার বাম চোখে। সাথে সাথে তার চোখ দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে।

রুবিনা জানান, ওই শিক্ষক নিজেই তখন একটি ন্যাকরা দিয়ে হাবিবার চোখ চেপে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যান।

হাবিবার মা বলেন, হাবিবাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা না দিয়েই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন চিকিৎসকরা। আমরা তখন সিলেটে না গিয়ে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিয়ে আসি।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে হাবিবার চোখে অস্ত্রোপচার শুরু করে বিকেল চারটার দিকে শেষ হয়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে তার জ্ঞান ফেরে।

অপারেশনের পর ডাক্তার বলেছেন, হাবিবার বাম চোখের আলো নেই। সে আর কোনোদিন বাম চোখ দিয়ে দেখতে পারবে না। এমনকি চোখ পরিবর্তন করলেও হবে না।

রুবিনা বলেন, আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। মেয়ের চোখ চাই। ও অনেক ছোট, এখন হয়তো ও বুঝতে পারছে না। বড় হলে ওর কি হবে? একটা মেয়ের চোখ না থাকলে তার জীবনটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। কাজেই আমার মেয়ের চোখ কীভাবে ভালো হবে সেটাই আমি জানতে চাই।

ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জানিয়ে রুবিনা বলেন,  তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক সেটাই চাই।

হাবিবা বলে, বাম চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। সারাদিন চশমা পড়ে থাকতে ভালো লাগে না। বিছানায় শুয়ে থাকতেও ভাল লাগে না। চোখটা খুব চুলকায়।

বেত ছুঁড়ে মারা শিক্ষক নিরঞ্জন দেবনাথ বলেন, বড় ভুল হয়ে গেছে। আমার জন্য বাচ্চাটার চোখ নষ্ট হয়ে গেলো। ঘটনার দিন থেকেই হাবিবার সাথে হাসপাতালে আছি। যতদিন থাকতে হয় থাকব। যেখানে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয় সেখানেই নিয়ে যাব। পরিচিত-অপরিচিত সকলের সাথেই কথা বলছি- কোথায় নিয়ে গেলে হাবিবার চোখের ভালো চিকিৎসা হবে। সে আবার চোখ দিয়ে দেখতে পারবে।

হাসপাতালের নার্স আমেনা বেগম বলেন, অপারেশনের পর শিশুটি কথা বলছে, তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে খেলছে। হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করছে। তবে ওষুধ খাওয়াতে বা ইনজেকশন দিতে গেলে হাবিবা জানতে চায়- আমি কি সত্যিই বাম চোখ দিয়ে আর দেখতে পারব না? তার কথার উত্তর দিতে পারি না। শুধু বলি, মন দিয়ে পড়ালেখা কর। অনেক বড় হতে পারবে।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036790370941162