শিক্ষক মানব সভ্যতার কেবল অগ্রনায়ক নন, মহানায়কও বটে। জাতি গঠনের সত্যিকারের কারিগর। পৃথিবীর অনেক দেশে শিক্ষকই প্রথম ভিআইপি। কোন কোন দেশের আদালতে পর্যন্ত শিক্ষকের জন্য আলাদা আসন চিহ্নিত থাকে। আর আমাদের দেশে? এখানে কেবল বক্তৃতা, ভাষণ আর কথনে শিক্ষকের যত সম্মান!
শিক্ষকের হাত ধরে মানব সভ্যতার সুত্রপাত। সভ্যতার লালন-পালন ও পোষণ সবই শিক্ষকের হাতে। শিক্ষক আছেন বলে সভ্যতা আছে। মানব জাতিকে একদিন অমানিশার ঘোর অন্ধকার থেকে টেনে আলোর পথে এনেছেন শিক্ষক । শিক্ষক এক অতি নিবেদিত প্রাণ মহামানবের প্রতিচ্ছবি। নিজের সন্তানের কথা ভুলে যিনি পরের সন্তানকে নিজের মনে করে অতিশয় যত্ন সহকারে বড় করেন, তিনিই শিক্ষক। মানুষের একটু সম্মান আর খানিকটা ভালবাসা পেলেই সব কষ্ট ভুলে যান। বিশেষ কিছু পাওয়ার জন্যে নয়, কেবলি এক অন্য নেশায় পড়ে শিক্ষকতার জালে আটকে পড়া। সে এক মনের টানে কতজনে বছরের পর বছর কেবলই শিক্ষকতা করে জীবন কাটিয়ে দেন।নিজের কিংবা পরিবার-পরিজনের দুর্দশার দিকে একটিবার ও ফিরে থাকাবার সময় জোটে না। মনের এক ভিন্ন আনন্দে শিক্ষকতার মহান ব্রতে আবদ্ধ করে ফেলেন নিজেকে। যুগে যুগে আর দেশে দেশে শিক্ষক সম্মান ও মর্যাদার শিখরে। কিন্তু, আমাদের এখানে? শিক্ষার মান আর শিক্ষকের মর্যাদা দু’টোই যেন নিম্নগামী হতে হতে এখন সর্বনিম্ন স্তরে এসে ঠেকেছে ।
আজকাল বিএ-এমএ পাস করে ও অনেকে শুদ্ধভাবে চারটে লাইন নিজে থেকে লিখতে পারে না। পরীক্ষায় পাসের হার প্রায় শত ভাগের কাছাকাছি। এ যেন শিক্ষায় মুদ্রাস্ফীতির মতো । এ ক’বছরে জিপিএ-৫ এ দেশ ভরে গেছে । কিন্তু, খুঁজে পাওয়া যায় না এদের। কোথায় যেন ওরা হেরে যায়। এ ক’ বছরে কয়েক লক্ষ জিপিএ-৫ আমরা পেয়েছি । কিন্তু, এদের মধ্য থেকে ক’জন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ভাল শিক্ষক আমরা পেয়েছি ?
আমাদের সিলেবাস ,কারিকুলাম, পাঠ্যপুস্তক, পাঠদান পদ্ধতি, পরীক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি নানা মৌলিক বিষয়ে বিতর্ক লেগে আছে । এ সবের নেতিবাচক ফল এখন আমাদের শিক্ষায় ।
সবচে’ বড় কথা – দেশে শিক্ষকদের আজকাল তেমন একটা মুল্যায়ন নেই। পৃথিবীর বহুদেশে যেখানে শিক্ষকদের মর্যাদা সবার ওপরে , সেখানে আমাদের দেশে মর্যাদা পেতে শিক্ষকদের সংগ্রাম করতে হয়। নিজেদের জন্য নয়, জাতিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষকদের সে লড়াই চালিয়ে যেতে হয় ।
শিক্ষকদের মর্যাদার সে লড়াইয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দেশে অগ্রসেনানীর ভুমিকা পালন করছেন দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক ও শিক্ষা বিশ্লেষক সিদ্দিকুর রহমান খান ও তার সম্পাদনায় প্রকাশিত দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র অনলাইন জাতীয় পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম। শিক্ষার মান ও শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সম্পাদক ও তাঁর পত্রিকার ভূমিকা প্রশংসনীয়ভাবে আপোষহীন । বিশেষ করে এ দেশের বেসরকারি শিক্ষকদের বোশেখি ভাতা, ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, যৌক্তিক বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, পুর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা এবং সর্বোপরি জাতীয়করণের আন্দোলনে এ সম্পাদক ও তাঁর পত্রিকাটি নিরলস ভুমিকায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ই মে বুধবার ‘শিক্ষকদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা ও মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ’ নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএননিউজ’র শিক্ষা বিষয়ক টকশো’র আলোচনায় দেশবরেণ্য শিক্ষা বিশ্লেষক ও সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান খান ‘শিক্ষদের বেতন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের চেয়ে বেশী হওয়া উচিত’ বলে দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষকের মর্যাদার বিষয় ও মনের একান্ত গোপন কথাটি এক কথায় ফুটিয়ে তুলে ধরেছেন । এ কেবল টাকার বিচারে নয়, মর্যাদার প্রশ্নে কথাটি উঠে এসেছে । একান্ত সময়োপযোগী ও নির্ভেজাল এক খাঁটি সত্য কথার বহিঃপ্রকাশ ।
এ সাহসী উচ্চারণের জন্য দেশের আপামর শিক্ষকদের পক্ষ থেকে নির্ভীক সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান খানকে লাল গোলাপের শুভেচ্ছা জানাতেই হয় । হাজার বছর বেঁচে থাকুন শিক্ষকদের হৃদয়ে একান্ত আপন প্রিয় জনের মতো । আপনার কথাটি একদিন না একদিন সত্যি হবেই ।