শিক্ষকের মান নিয়ে ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থীর অসন্তোষ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকের মান নিয়ে ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থীর অসন্তোষ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষায় পাঠদানরত শিক্ষকদের মানের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে অনেক বছর ধরেই। এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে খোদ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও, যার ব্যতিক্রম নয় কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের এক সাম্প্রতিক গবেষণায়ও দেখা গিয়েছে এর প্রতিফলন। গবেষণায় উঠে আসে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ৯২ শতাংশই তাদের শিক্ষকদের মান নিয়ে অসন্তুষ্ট। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট) কোর্সের মান যাচাই ও বাজার উপযোগী করার লক্ষ্যে একটি গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। গবেষণাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় ঢাবির ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চকে। গবেষণার অংশ হিসেবে দেশের ২৮টি জেলার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরিপ চালায় গবেষক দল। জরিপে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও চাকরিদাতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ‘আ ট্রেসার স্টাডি ফর মেকিং এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট) কোর্স মোর মার্কেট রেসপনসিভ অ্যান্ড প্র্যাকটিক্যাল ওরিয়েন্টেড’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স জরিপে পাস করে বের হওয়া ৫৮৪ জনের কাছে শিক্ষকদের মান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাদের মধ্যে ৯২ দশমিক ৫ শতাংশই শিক্ষকের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, শিক্ষকের মান খুব খারাপ। ৩৯ শতাংশ বলেছেন শিক্ষকদের মান খারাপ। এছাড়া শিক্ষকের মান মোটামুটি বলে মত দিয়েছেন ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর শিক্ষকদের মান ভালো বলে মত দিয়েছেন মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। খুব ভালো বলে মত দিয়েছেন শূন্য দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার গুণগত মান অনেকাংশেই নির্ভর করে শিক্ষকের যোগ্যতার ওপর। যদিও শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে নিয়োগে অনিয়ম ও নিয়মিত প্রশিক্ষণের অভাবে তাদের সে যোগ্যতা ও দক্ষতা হয়ে পড়ছে প্রশ্নবিদ্ধ।

কারিগরি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের মান নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটিতে এরই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জরিপে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে শিক্ষকদের কারিগরি দক্ষতা বিষয়ে জানতে চাইলেও উঠে এসেছে বেশ হতাশাব্যঞ্জক চিত্র। স্কিল লেভেল নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, শিক্ষকদের দক্ষতার মান খুবই খারাপ। ৪২ দশমিক ১ শতাংশের মতে শিক্ষকদের দক্ষতার মান খারাপ। এ দক্ষতার মান মোটামুটি বলে অভিমত দিয়েছেন ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ভালো বলে মত দিয়েছেন মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। শিক্ষকদের কারিগরি দক্ষতা খুব ভালো বলে মনে করছেন শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।

শিক্ষকের আচরণেরও নেতিবাচক মূল্যায়ন করেছেন পাস করা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ। এক্ষেত্রে ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে, শিক্ষকদের আচরণ খুব খারাপ। শুধু খারাপ বলে মনে করছেন ৩৯ শতাংশ। শিক্ষকদের আচরণ মোটামুটি বলে মত দিয়েছেন ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া শিক্ষকদের আচরণ ভালো বলেছেন মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। খুব ভালো বলে মত দিয়েছেন শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ।

গবেষণাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষকের মান ও আচরণ নিয়ে জরিপের ফল খুবই ভয়াবহ। গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ড. মোহাম্মাদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সাধারণ কোর্সের বাইরে কারিগরি কোর্সের মূল উদ্দেশ্য ছিল দক্ষ জনবল তৈরি। তবে সময়ের আবর্তনে দেখা গেছে, সাধারণ কোর্স করা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কারিগরি কোর্স করা শিক্ষার্থীদের দক্ষতার মাত্রাই আলাদা করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ লক্ষ্য ভালো থাকলেও কারিগরি কোর্স করা শিক্ষার্থীদের সে লক্ষ্য অনুযায়ী গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এর মূলত দুটি কারণ। একটি হচ্ছে, মানসম্মত শিক্ষকের অনুপস্থিতি ও পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব। শিক্ষকের মানের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যা বলেছেন, তা সত্যিই ভয়াবহ। আর গবেষণার কাজে পরিদর্শনে গিয়ে অবকাঠামোর যে চিত্র দেখেছি, সেটি আরো ভয়াবহ। এমন ল্যাব রয়েছে, যেখানে একটি কম্পিউটারও সচল নেই। অভিযোগ রয়েছে, শুধু অবকাঠামো সাজানোর জন্যই নষ্ট কম্পিউটার এনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

শিক্ষকের জ্ঞানগত দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরাও দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে পারছেন না। চাকরির বাজারে গিয়ে তাদের বেশকিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব, কম্পিউটার জ্ঞানের অভাব, গণিত ও ইংরেজিতে অদক্ষতা, উপস্থাপনায় দুর্বলতা, কারিগরি দক্ষতায় ঘাটতি ও অভিজ্ঞতা না থাকা ইত্যাদি। চাকরির বাজার উপযোগী করে গড়ে তুলতে না পারায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স করেও শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই বেকার থাকছেন। জরিপে ২০১৪ সালে কোর্স সম্পন্ন করে বের হওয়া পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, তাদের ৮৪ শতাংশই এখনো বেকার।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উপপরিচালক (গবেষণা) রাজু মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, গবেষণায় কোর্সটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। পাশাপাশি সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ করেছে গবেষক দল। শিগগিরই এসব সুপারিশের আলোকে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সব অংশীজনের সঙ্গে বসা হবে। পাশাপাশি পরিকল্পনার আলোকে সেগুলো বাস্তবায়নও শুরু হবে।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00724196434021