চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকের ১০৩টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এ কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকের মৃত্যু ও অবসরজনিত কারণে এসব পদ শূন্য হয়। রোববার (৭ এপ্রিল) প্রথম আলোর প্রিন্ট সংস্করণে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আটজন শিক্ষার্থী বলে, তাদের ইংরেজি, গণিত, আইসিটি, পদার্থবিজ্ঞানসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ের ক্লাস ভালোভাবে হয় না। শিক্ষক না থাকায় এ সমস্যা হচ্ছে। এতে এসব বিষয়ে তারা পিছিয়ে পড়ছে। পরীক্ষায় কীভাবে উত্তীর্ণ হবে বা ভালো করবে, এ নিয়ে তারা চিন্তিত।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মতলব দক্ষিণের ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পাঁচ শতাধিক পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৭টি পদ চার-পাঁচ বছর ধরে শূন্য। মাধ্যমিক পর্যায়ের ১৪টি মাদরাসায় সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে দেড় শ। এর মধ্যে ৪৬টি পদ প্রায় পাঁচ বছর ধরে খালি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালিয়া, কালিকাপুর ও বরদিয়া উচ্চবিদ্যালয় এবং নারায়ণপুর পপুলার বালিকা উচ্চবিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকের একটি করে চারটি পদ শূন্য। আশ্বিনপুর, কাচিয়ারা বালিকা, দিঘলদী এম এ ছাত্তার ও নওগাঁও উচ্চবিদ্যালয় এবং আদর্শ স্কুলে দুটি করে ১০টি পদ শূন্য। এ ছাড়া মুন্সিরহাট, কাচিয়ারা বালক, লামচরী, পয়ালী কাদিরবক্স, হজরত শাহজালাল ও বহরী উচ্চবিদ্যালয়ে তিনটি করে ১৮টি পদে সহকারী শিক্ষক নেই। আধারা, নায়েরগাঁও, আঁচলছিলা, ধলাইতলী জনতা ও মতলবগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে চারটি করে ২০টি পদ শূন্য। কাশিমপুর পূরণ উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ ৫টি। এসব বিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে ৩টি, ইংরেজির ৮টি, গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞানে ৫টি করে ১০টি, কৃষিবিজ্ঞানের ৭টি, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষায় ৪টি, হিন্দুধর্ম শিক্ষার ২টি, পদার্থবিজ্ঞানের ১০টি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ১৩টি পদ শূন্য।
জানতে চাইলে আধারা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইসহাক গাজী ও হজরত শাহজালাল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাসির তপদার বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষক না থাকলেও বিকল্প ব্যবস্থায় পাঠদান করা হচ্ছে। তবে সব বিষয়ে শিক্ষক থাকা জরুরি। তাঁরা আরও বলেন, এসব সমস্যার কথা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে জানানো হয়েছে।
মাদরাসার মধ্যে মতলব দারুল উলুম ও ধনারপাড় ইসলামিয়ায় একটি করে দুটি পদ শূন্য। খর্গপুর ফাজিল, কাচিয়ারা জমিলা আলিম, কালিকাপুর আদর্শ দাখিল ও পূর্ব ধলাইতলী আবদুল জলিল ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায় দুটি করে আটটি পদ শূন্য। বদরপুর দাখিল, ঘোড়াধারী ইসলামিয়া দাখিল ও কালিয়াইশ ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় তিনটি করে ৯টি পদ খালি। নন্দীখোলা সিনিয়র ফাজিল ও দক্ষিণ করবন্দ আল দাখিল মাদরাসায় চারটি করে আটটি পদ শূন্য রয়েছে। ঘিলাতলী আই এস এ কে ইউ ফাজিল মাদরাসায় পাঁচটি পদ খালি। দিঘলদী ইসলামিয়া জাফরিয়া মাদরাসায় ছয়টি পদ শূন্য। নওগাঁও রাশিদা ফাজিল মাদরাসায় পদ খালি আটটি। এসব মাদরাসায় গণিতের ৩টি, সাধারণ বিজ্ঞানের ১টি, সমাজবিজ্ঞানের ২টি, কৃষিবিজ্ঞানের ৫টি, পদার্থবিজ্ঞানের ৭টি, আইসিটির ১৩টি, আরবির ৩টি ও ইবতেদায়ির ১২টি পদ শূন্য রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার নওগাঁও রাশিদা ফাজিল ও দিঘলদী ইসলামিয়া জাফরিয়া মাদরাসা এবং আধারা ও হজরত শাহজালাল উচ্চবিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকের অভাবে ইংরেজি, গণিত ও আইসিটি বিষয়ের ক্লাস ঠিকমতো হচ্ছে না। এসব বিষয়ের নির্ধারিত ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অন্য বিষয় পড়ানো হচ্ছে।
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুর রহিম খান বলেন, শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। এসব শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
