চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত পুষ্টি বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে বিদেশে যেতে চেয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ ড. গোলাম ফারুক। নিয়মানুযায়ী তার ফাইলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। বিগত বছরে কতবার কোন কোন দেশ সফর করেছিলেন তারও একটা তালিকা সংযুক্ত করা ছিলো। গতমাসে পাঠানো ওই ফাইলে কড়া মন্তব্য লেখেন শেখ হাসিনা। তিনি লেখেন, ‘১২ মাসে ৬ বার বিদেশ সফর করলে কাজ সমাপ্ত হবে কিভাবে?’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি পুষ্টি নীতিমালা ও পুষ্টি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করছে ইউনিসেফ। সম্প্রতি পুষ্টি নীতিমালা ও পুষ্টি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কাজে সম্প্রতি ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো অধ্যাপক সৈয়দ ড. গোলাম ফারুককে। ইউনিসেফ আয়োজিত সফরে যোগ দিতে আগ্রহীও ছিলেন মহাপরিচালক। তবে, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন না পাওয়ায় তিনি যেতে পারেননি। পরে অন্য একজন পরিচালককে পাঠানো হয়।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৪শ ব্যাচের কর্মকর্তা গোলাম ফারুক ১০ শতাংশ কোটায় সরাসরি অধ্যাপক হয়েছেন। একই ব্যাচের শত শত কর্মকর্তা এখনও সহযোগী অধ্যাপক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাতপন্থী অধ্যাপক ও সমিতির নেতা সরোয়ার আলমের অধীনে পিএইচডি করেছেন তিনি। গত কয়েকমাস ধরে মহাপরিচালক ব্যস্ত শুধু তিনি কীভাবে ১ নং গ্রেড পাবেন তা নিয়ে। আর তার কলেজ শাখার পরিচালক ব্যস্ত সমিতির ব্যানার নিয়ে কীভাবে ওই পদে টিকে থাকবেন। বেহুদা হিসেবে পরিচিত বিশেষ শাখা ও প্রশাসন শাখার কর্তাদের সঙ্গে আরেকজন পরিচালকের সিন্ডিকেট সমানে বদলিবাণিজ্য করছেন। আর শিবিরপন্থী শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের দিয়ে কয়েক ডজন কমিটি গঠন করেছেন কলেজ শাখার বিতর্কিত পরিচালক। সব মিলে মুখ থুবড়ে পড়েছে অধিদপ্তরের সব উন্নয়ন কাজ। চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার উন্নয়নের শেখ হাসিনার ভিশন ও মিশন বাস্তবায়ন।
জানা যায়, কলেজ শাখার পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত সিন্ডিকেটের ইচ্ছায় সদ্য সরকারিকৃত কলেজ ও স্কুল শিক্ষকদের পদসৃজন ও এডহক নিয়োগ আটকে রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষকদের উচচতর গ্রেডসহ কয়েকডজন বিষয় সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক বদলিতে রয়েছে সিন্ডিকেটের প্রভাব।
জানা যায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা এক আদেশে অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুককে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়। বিএনপি-জামাত আমলে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ১০ শতাংশ কোটায় অধ্যাপক পদ বাগান। সৌদি আরবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে লিয়েনে কাটান আট বছরেরও বেশি। দেশে ফিরে এসেই একে একে শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রশাসনের সবচাইতে বড় পদটিও বাগান ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে।
জানা যায়, মহাপরিচালক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামন নাহিদের পছন্দেই প্রথমে নায়েম ও পরে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদ পান। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। তবে, নাহিদের বিদায় অনুষ্ঠানে শুধু তিনিই অনুপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: নতুন মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক