শিক্ষা আর জীবন আলাদা হতে পারে না - Dainikshiksha

শিক্ষা আর জীবন আলাদা হতে পারে না

ড. আতিউর রহমান |

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে দিয়েই শুরু করি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বরাবরই মনে করতেন, শিক্ষা আর জীবন আলাদা হতে পারে না। ‘এখানে নোটের নুড়ি কুড়াইয়া ডিগ্রির বস্তা বোঝাই করিয়া’ জীবনের খাদ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সৃজনশীল ও উদ্যমী জীবনের জন্য শিক্ষাকে তাই প্রাণস্পর্শী করার পক্ষে ছিলেন তিনি। তিনি মনে করতেন, বৃহৎ মানবসমাজই হতে পারে মানুষ গড়ার বড় পাঠক্রম। চিত্তের গতি অনুসারেই শিক্ষার পথনির্দেশ করার পক্ষে ছিলেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস ছিল, ‘নানা লোকের নানা চেষ্টার সমবায়ে আপনিই সহজ পথটি অঙ্কিত হইতে থাকে।’ স্বদেশি শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে আপন করে নেওয়ার জন্য শিশুকাল থেকেই সর্বতোভাবে আনুকূল্য দেওয়ার পক্ষে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

শিশুদের এমনভাবে গড়ে তোলার শিক্ষা তিনি দিতে চাইতেন, যাতে বিশ্বজগতের সঙ্গে তার নৈতিক যোগাযোগ ঘটে। মনুষ্যত্বের বিকাশই ছিল তাঁর শিক্ষা-ভাবনার মূলে। সৃষ্টিশীল ভাবনার মুক্তির জন্য তিনি এমন শিক্ষা চাইতেন। কেননা তিনি মনে করতেন যে ‘সুশিক্ষার লক্ষণ এই যে, তাহা মানুষকে অভিভূত করে না, তাহা মানুষকে রুচির পক্ষে, মাত্রাজ্ঞানের পক্ষে, নীতি-নৈতিকতার পক্ষে, মূল্যবোধ ও চিন্তার আভিজাত্যের পক্ষে।’ তিনি আরো ভাবতেন যে শিক্ষার সঙ্গে হৃদয়বৃত্তির, মনুষ্যত্ববোধের ও ভালোবাসার চর্চা দরকার। কেননা ভাবের পণ্য বোঝাই করাই যে শিক্ষার কাজ। জাতি-ধর্ম-গোত্র-শ্রেণি-পেশা-নির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ জীবনাচরণের শক্তি দেবে শিক্ষা—এই সত্যে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। ‘শিক্ষার পরিমাণ শুধু সংখ্যায় নয়, তার সম্পূর্ণতায়, তার প্রবলতায়।

কোনো মানুষই যাতে নিঃসহায় ও নিষ্কর্মা হয়ে না থাকে।’ (‘রাশিয়ার চিঠি’, রবীন্দ্র রচনাবলী, দশম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৫) সে জন্য রাষ্ট্রকে বিপুল উদ্যোগ নিতে হবে বলে তিনি অনুভব করতেন। তাই তাঁর কাছে শিক্ষা কোনো জীবনবিচ্ছিন্ন প্রস্তাব ছিল না। তিনি জানতেন, ‘আমরা কী হইব এবং কী শিখিব এই দু’টো কথা একেবারে গায়ে গায়ে সংলগ্ন। পাত্র যত বড়ো জল তাহার চেয়ে বেশি ধরে না।’ তাই আশা করার ক্ষমতা বড় হলেই মানুষের শক্তিও বাড়ে। আশাবাদী সমাজ গড়ার তাগিদেই তিনি পূর্ব বাংলায় জমিদারি করতে এসে বালিকা বিদ্যালয়সহ নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। শিলাইদহে কৃষি উন্নয়নের জন্য গবেষণা খামার গড়ে তুলেছেন। শ্রীনিকেতনে কুটির শিল্পের প্রসার ঘটিয়েছেন। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিদ্যালয় এবং পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন। উদ্দেশ্য একটাই, এ দেশের মানুষের মনোজগতে শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়ে আশার ক্ষেত্র বড় করা। ভালো মানুষ সৃষ্টি করা।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা-ভাবনারও মূলে ছিল মানুষ। তিনিও ছিলেন রবীন্দ্র-নজরুলভক্ত এক সৃজনশীল দেশপ্রেমিক। মানুষের কল্যাণ-ভাবনা তাঁকে আজীবন তাড়িত করেছে। সেই ছোটবেলায় তিনি গরিব-দুঃখী ছাত্রদের পড়াশোনার জন্য মুষ্টি চাল সংগ্রহ করার মানবিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর সুকন্যা মাননীয় প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা তাই লিখেছেন—

‘...ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত হৃদয়বান ছিলেন। তখনকার দিনে ছেলেদের পড়াশোনার তেমন সুযোগ ছিল না। অনেকে বিভিন্ন বাড়িতে জায়গির থেকে পড়াশোনা করত। চার-পাঁচ মাইল পথ হেঁটে স্কুলে আসতে হতো। সকালে ভাত খেয়ে স্কুলে আসত। আর সারা দিন অভুক্ত অবস্থায় অনেক দূরে হেঁটে তাদের ফিরতে হতো। যেহেতু আমাদের বাড়িটা ছিল ব্যাংকপাড়ায়, আব্বা তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। স্কুল থেকে ফিরে দুধ-ভাত খাবার অভ্যাস ছিল এবং সকলকে নিয়েই তিনি খাবার খেতেন। দাদির কাছে শুনেছি, আব্বার জন্য মাসে কয়েকটি ছাতা কিনতে হতো। কারণ আর কিছুই নয়, কোনো ছেলে গরিব, ছাতা কিনতে পারে না, দূরের পথ, রোদ বা বৃষ্টিতে কষ্ট হবে দেখে তাকে ছাতা দিয়ে দিতেন। এমনকি পড়ার বইও মাঝে মাঝে দিয়ে আসতেন।...আমার দাদা-দাদি অত্যন্ত উদার প্রকৃতির ছিলেন। আমার আব্বা যখন কাউকে কিছু দান করতেন তখন কোনো দিনই তাকে বকাঝকা করতেন না, বরং উৎসাহ দিতেন।...আব্বার একজন স্কুল মাস্টার ছোট্ট একটা সংগঠন গড়ে তুলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ধান, টাকা, চাল জোগাড় করে গরিব মেধাবী ছেলেদের সাহায্য করতেন। অন্যতম সক্রিয় কর্মী হিসেবে তিনি তার সঙ্গে কাজ করতেন এবং অন্যদের উৎসাহ দিতেন।’ (দ্র. শেখ হাসিনা, ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, বিচিত্রা, ১৬ আগস্ট, ১৯৯৬, পৃ. ৩৫)


সেই যে তাঁর শিক্ষাপ্রীতির শুরু, সেটি আজীবন তিনি বয়ে বেড়িয়েছেন। শিক্ষকদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধ ছিল কিংবদন্তিতুল্য। জীবনের একটা বড় অংশ তিনি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় ছাত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা পরবর্তী সময়ে তাঁর রাজনৈতিক বিকাশে বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। তা ছাড়া দেশ পরিচালনার সময়ও শিক্ষার উন্নয়নে ছিল তাঁর বিরাট আগ্রহ। এ সময় তিনি শিক্ষকদের নীতি নির্ধারণে যুক্ত করেছিলেন। বিজ্ঞানীদের নানা ধরনের সৃজনশীল উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে সদস্যসচিব, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরীকে ইউজিসির চেয়ারম্যান ও পরবর্তী সময়ে শিক্ষামন্ত্রী, অধ্যাপক এ আর মল্লিককে অর্থমন্ত্রী, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান, মুশাররফ হোসেন ও আনিসুর রহমানকে পরিকল্পনা কমিশনে নিযুক্ত করা ছাড়া অসংখ্য জ্ঞানী-গুণীকে তিনি দেশ গড়ার কাজে যুক্ত করেছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে আইন প্রণয়ন করা ছাড়া অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তির বিকাশে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি অসংখ্য নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত একটি দেশকে ছাই-ভস্ম থেকে সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিষয়টিও তাঁর নজর এড়ায়নি। অবশ্য সত্তরের নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগে জাতির উদ্দেশে যে নির্বাচনী অঙ্গীকার তিনি দিয়েছিলেন, সেখানেও শিক্ষা কাঙ্ক্ষিত গুরুত্ব পেয়েছিল। নির্বাচনের আগে দেওয়া অঙ্গীকার পূরণের জন্য শিল্প-সংস্কৃতির চেতনাসম্পন্ন উপযুক্ত নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত সর্বজনীন শিক্ষা প্রসারে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দেই বঙ্গবন্ধু ‘কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করেন। এই কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনও তিনি অতি দ্রুতই গ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধু সবার জন্য শিক্ষার অধিকারে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাতীয়করণে তিনি দ্বিধা করেননি। অন্যান্য ধাপেও শিক্ষার প্রসারে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি প্রশাসনসহ সমাজের এলিটদের মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি যে সাধারণ মানুষের অর্থেই তাঁরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পেরেছেন। তাই তাঁদের ওপর রয়েছে এক সুবিশাল সামাজিক দায়িত্ব। শিক্ষিতজনদের উদ্দেশে তাই তিনি বলেছেন, ‘দুঃখের বিষয় আজ আমরা শুধু বলি, আমরা কী পেলাম। তোমরা কী পেয়েছ? তোমরা পেয়েছ শিক্ষার আলো, সে শিক্ষা দিয়েছে বাংলার জনগণের টাকায়। তুমি কী ফেরত দিয়েছ বাংলার দুঃখী মানুষকে, যে দুঃখী মানুষ না খেয়ে মরে যাবে? যে মানুষের কাপড় নাই, যে মানুষ বন্ধু খুঁজে পায় না, যার বস্ত্র নাই, শার্ট নাই, বুকের হাড়গুলো পর্যন্ত দেখা যায়, তাকে আজকে তোমরা কী দিয়েছ?’ (দ্র. আতিউর রহমান, শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম, ২০১৮, আলোঘর প্রকাশনী, পৃ. ৩৯১) একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ শ্রদ্ধাবোধ। আর ছিল শিক্ষিতজনদের প্রতি যৌক্তিক সংশয়। তাই তিনি মন থেকেই উচ্চারণ করেছেন যে ‘করাপশন আমার বাংলার কৃষকরা করে না। করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ।’ (দ্র. প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৯১)


সেই সাধারণ মানুষের সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার যে দায়িত্ব সংবিধান রাষ্ট্রকে দিয়েছে, তা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যার সরকার ছাড়া অন্য সরকারগুলো সেভাবে গ্রহণ করেনি। বিশেষ করে দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো দক্ষ জনশক্তি তৈরির যে বিশাল চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান, তা মোকাবেলার সৎসাহস বঙ্গবন্ধুকন্যা নয়া শিক্ষানীতি (২০১০) গ্রহণ করে যেভাবে মোকাবেলা করে চলেছেন, তা প্রশংসার দাবিদার। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার অংশ হিসেবেই শিক্ষার প্রতিটি পর্যায়েই তিনি প্রযুক্তির প্রাসঙ্গিক ব্যবহার উৎসাহিত করে চলেছেন। অ্যাপভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের তিনি যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন, তা আগের কোনো সরকারপ্রধানের কাছ থেকে জাতি পায়নি।

শুধু সার্টিফিকেট দেওয়ার উচ্চশিক্ষা থেকে সরে এসে ‘জীবনের খাদ্য’ হিসেবে এই শিক্ষা দেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জনের এক বিশাল চ্যালেঞ্জের আমরা মুখোমুখি। বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে শিক্ষিত তরুণদের উপযুক্ত জনশক্তিতে রূপান্তরে আমরা মনোযোগী না হলে একদিকে কষ্টার্জিত সম্পদের অপচয় হবে, অন্যদিকে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন আমাদের অধরাই থেকে যাবে। তবে আশার কথা এই যে ১০ বছর আগেও যেখানে মাত্র ১ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করত, সেই অঙ্ক বর্তমানে ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ইউজিসির প্রত্যাশা, ২০২১ খ্রিস্টাব্দে এ অঙ্ক ২০ শতাংশেরও বেশি হবে। এ সংখ্যা আরো বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই কারিগরি শিক্ষার (যেমন তথ্য-প্রযুক্তি) পাঠক্রমের নিয়মিত আধুনিকায়ন সেভাবে হচ্ছে না বলে বাস্তবে কিছু ধারার কারিগরি স্নাতকদের কর্মসংস্থান সেভাবে হচ্ছে না। হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ সীমিত বলেই এমনটি ঘটছে বলে মনে হয়। তা ছাড়া বাজারের চাহিদার কথা মাথায় রেখেও উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটছে না; যেমন—বস্ত্র খাতে মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপক ও প্রকৌশলীদের চাহিদা বিপুল। আর সে কারণেই টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের প্রায় সবাই নিয়োগ পাচ্ছে।

অথচ এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা সীমিত। সবাই এমবিএ, বিবিএ তৈরি করতে আগ্রহী, অথচ তাদের বাজারে চাহিদা এখন খুবই সীমিত। তবু ব্যক্তি খাতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এদিকেই ঝুঁকে বসে আছে। মুনাফাই একমাত্র আকর্ষণ বলে এমনটি ঘটছে। অথচ শিক্ষা যে পণ্য নয়, এ কথাটা শিক্ষা উদ্যোক্তারা ভুলেই বসে আছেন। অন্যদিকে আমাদের প্রায় এক কোটি তরুণ মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা দেশে কর্মরত। তারা বছরে মাত্র ১৪ থেকে ১৫ বিলিয়ন রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। তাদের ইংরেজি ভাষাসহ সামান্য দক্ষ করে দিতে পারলে তারা এর দ্বিগুণ রেমিট্যান্স আনতে পারবে। ফিলিপাইন ও ভারত পারছে। আমরা কেন পারব না? এখানে পলিটেকনিকগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষার দিকে যদি আমরা অষ্টম শ্রেণি থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের ধাবিত করতে পারি, তাহলে আমাদের রেমিট্যান্স অর্জনকারী জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া দেশের শিল্পায়নেও তারা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। সরকার দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অচিরেই একটি দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলার ভাবনা সরকারের রয়েছে বলে আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানতে পেরেছি। এই কর্তৃপক্ষ যত তাড়াতাড়ি গড়ে ওঠে ততই ভালো।

কেননা শিক্ষাব্যবস্থার মূলধারায় দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে যুক্ত না করা গেলে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করা মুশকিল হবে। গত ৬ অক্টোবর ২০১৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যথার্থই বলেছেন যে ‘গুণগত মান সমুন্নত রেখে দেশের চাহিদা ও বিশ্বের জনশক্তিবাজারের কথা বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের সম্প্রসারণ করতে হবে।’ ওই একই অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা হওয়া উচিত পিরামিডের মতো। এর ভিত্তি হবে চওড়া, উচ্চশিক্ষা হবে তার চূড়া। সবাই যাতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করতে পারে, তা সর্বাগ্রে দেখা দরকার।...উচ্চশিক্ষা স্বয়ম্ভু নয়। এর ভিত্তি আগের দুই স্তরের শিক্ষা।’ সমন্বিত এই শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমাদের অপূর্ণতার দিকটিও তিনি তুলে ধরেন। বিশেষ করে একই দেশে আর্থিক সচ্ছলতা-অসচ্ছলতার নিরিখে নানা মানের শিক্ষার কারণে সমাজ যেভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ছে, তিনি সেদিকটার ওপরও আলো ফেলেছেন। তাই জীবনের চাহিদামতো সমুচিত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

২০৪১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে উন্নত মানুষ গড়া ছাড়া তা সম্ভব নয়। বর্তমানে শুধু গতানুগতিক পাঠদান নয়, আমাদের শিক্ষকদের বিদেশের মতো উচ্চ বেতন ও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত স্বাধীনতা ও অর্থায়ন নিশ্চিত করার কৌশল ঠিক করতে হবে। বিশেষ করে সিনিয়র শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরে রেখে তাঁদের সঙ্গে তরুণ শিক্ষক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের গবেষণায় যুক্ত রাখার শিক্ষা-সংস্কৃতি আমরা এখন পর্যন্ত গড়ে তুলতে পারিনি। সম্প্রতি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে সরকার সহায়তা দেবে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য বাজেট থেকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া প্রত্যাশা করছি, করপোরেটগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণা ও উদ্ভাবনে প্রয়োজনীয় আর্থিক সমর্থন দিতে এগিয়ে আসবে। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা কমিশন ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে গভীর অংশীদারি গড়ে তুলতে হবে। আমাদের উচ্চশিক্ষাকে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করতে হলে নিঃসন্দেহে শিক্ষা, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বর্তমানে মোট বাজেটের মাত্র ১৩ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়। এই হার ন্যূনতম ২০ শতাংশ হওয়া উচিত—ইউজিসির চেয়ারম্যান স্বয়ং এমনটি মনে করেন। বর্তমানে জিডিপির মাত্র ০.৪ শতাংশ গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা হয়। গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ অন্তত জিডিপির ২ শতাংশ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

সব শেষে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, ‘...উচ্চশিক্ষা নিছক চাকরির জন্যই নয়, মূল উদ্দেশ্য মানবিক ও উদার হওয়া।...মনুষ্যত্ব বিকাশই শিক্ষার লক্ষ্য।’ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন ২০১৮-এ প্রদত্ত ভাষণ থেকে নেওয়া) আমাদের সামাজিক শান্তি, সাংস্কৃতিক গতিময়তা, উদার জীবনাচারের জন্যই চাই এমন ধারার শিক্ষা।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043840408325195