আদালতের রায় এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ কিছুই মানছেন না পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিলাল সিকদার। শিক্ষা কর্মকর্তার দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা না দেয়ায় আটক আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ফেরদৌসি বেগমের বকেয়া বেতন-ভাতা। অপরাধ না করেও ৩০ বছর চাকরি করে চাকরিচ্যুত ওই শিক্ষিকা তার ন্যায্য দাবি আদায়ে কেটেছে ৮ বছর।
শিক্ষা অফিসের হয়রানি এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন এই শিক্ষিকার পরিবার। জেলার দুমকি উপজলার ঝাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদ কর্মরত ছিলেন ফেরদৌসি বেগম। জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি শিক্ষিকা মোসা. ফেরদৌসি বেগমের মেয়ে নাঈমা তানজীম (২৪) মারা যায়। মেয়ের অকাল মৃত্যুর খবর করে। ওই সময় অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি বিদ্যালয় পাঠদান অব্যাহত রাখেন।
সন্তান হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই তিনি পুনরায় স্ট্রোক করে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পর ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে ছুটির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিস তার আবেদন গোপন করে তার বিরুদ্ধে পটুয়াখালীর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অনুপস্থিতিজনিত অপরাধের প্রতিবেদন পাঠায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মচারীর (বিশেষ বিধান) অধ্যাদশ-১৯৭৯ অনুযায়ী ২০১০ সালের ১৭ আগস্ট ৪৫৮ এবং ২৫ নভেম্বর ১৫২৭নং স্মারক ভুল ঠিকানায় দুটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। ফেরদৌসি বেগমের সার্ভিস বুক, যোগদানের চিঠি ও পিটিআই সনদ ঠিকানার সঙ্গে কারণ দর্শানোর নোটিশের ঠিকানার কোনো মিল নেই।
শিক্ষককে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার বিধান থাকলেও ফেরদৌসি বেগমের ক্ষেত্রে তাও মানা হয়নি। সবকিছুই হয় ফেরদৌসি বেগমের অগোচরে। শারীরিক জটিল অসুস্থতার পর ২০১১ সালের ২৮ জুলাই তিনি মেডিকেল সার্টিফিকেট যোগদান করতে গেলে বেরিয়ে আসে ষড়যন্ত্রের মূল রহস্য। অনুপস্থিতির কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে এমনটাই তাকে জানানো হয়। কোনো উপায় না পেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন ওই শিক্ষিকা।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে প্রমাণিত হয় তার বরখাস্ত বিধিবহির্ভূত ও ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে। একই সঙ্গে মহাপরিচালক ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর তাকে বাধ্যতামূলক অবসরের চিঠি প্রদান করন। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফেরদৌসি বেগম প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল মামলা দায়ের করলে আদালত ২০১৮ সালের ২৪ মে তার বকেয়া বেতন-ভাতাদিসহ চাকরিত ভূতাপেক্ষভাব পুনর্বহাল করে অবসর প্রদান করতে সব প্রতিপক্ষকে নির্দেশ দেন।
ওই রায় বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর পটুয়াখালীর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ডিপিইও ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর এক স্মারকে ফেরদৗসি বেগমকে ভূতাপেক্ষভাব চাকরি পুনর্বহালসহ রায় বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিলাল সিকদারকে নির্দেশ দেন।
মনিলাল এ নির্দেশ অনুসারে যোগদানপত্র গ্রহণ করেন। পরে বকেয়া বেতনের হিসাব করে মনিলাল পাঁচ লাখ টাকা ছাড়া তা ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন। শিক্ষিকা তাতে অস্বীকৃতি জানালে তার অবসরের বয়স পার হয়ে গেলেও তাকে জোড় করে অফিস করাচ্ছেন মনিলাল। উপায় না পেয়ে এসব বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক বরাবর আবেদন করেন শিক্ষিকা।
উপ-পরিচালক ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মনিলালকে শোকজ করেন।এ ব্যাপার মনিলাল সিকদার জানান, আদালতের রায় কঠিন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সম্পর্কে আমি কিছুই বুঝি না। ‘আমার বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ সত্য নয়।’