যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ তেজারতের ঘুষ বাণিজ্যের অডিও ফাঁস হয়েছে। ফেসবুকে এই অডিও ফাঁস হওয়ার পর থেকে উপজেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।
ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়, উপজেলার করিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক মোস্তফা কামাল সম্প্রতি বিএড স্কেলের বেতন পাওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ তেজারতকে ফোন করেন। এ সময় তাঁর কাছে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করলে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘স্যার, আমি গরিব মানুষ, এত টাকা নেই।’ জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘এত দিন শিক্ষকতা করে যদি গরিব হন, তাহলে চলে?’ একপর্যায়ে প্রথমে দুই হাজার পরে চার হাজার টাকা দিতে চাইলে ওই কর্মকর্তা ফোন কেটে দেন।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষকদের এমপিও, টাইম স্কেল, নিয়োগ প্রক্রিয়াসংক্রান্ত সব কাজেই ঘুষ দিতে হয় এই কর্মকর্তাকে। ঘুষ লেনদেনের পরিমাণ ও ঘুষ আদায়ে তিনি নানা কৌশল অবলম্বন করেন। ফাইল আটকে রেখে ভুক্তভোগীকে ফোন করে অফিসে ডেকে আনেন। যারা ঘুষ না দিয়ে এড়িয়ে চলে, তাদের ফাইল আটকে রাখার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দাবি করেন। এমপিওভুক্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়াও নাম, বয়সসহ নানা বিষয় সংশোধন পেতে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় এই কর্মকর্তাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, ‘এই কর্মকর্তাকে সব কাজে টাকা দিতে হয়। কাগজপত্রে সামান্য ঘাটতি থাকলেই ঘুষের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে কোনো কাজ হয় না। হয়রানির ভয়ে ধারদেনা করে ঘুষের টাকা দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে আমাদের।’
সরেজমিন অনুসন্ধান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নূর মোহাম্মদ তেজারত নিয়মিত অফিস করেন না। অফিসে এলে বেশির ভাগ সময় কাটে তাঁর রেস্টরুমে। সেখানে বসেই ঘুষ লেনদেন করেন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে বাঘারপাড়ায় যোগদানের পর থেকে প্রতিনিয়ত ঘুষ আর অনিয়মের মাধ্যমে অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। এনসিটিবির পুরনো বই রাতের আঁধারে বিক্রি, মা সমাবেশ ও বিজ্ঞান মেলার টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে একাধিক পত্রিকায় নানা অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় একাধিক তদন্ত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তবে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ তেজারত দাবি করেন, ‘আমার পেছনে যারা লেগেছে তারাই এসব করাচ্ছে।’ ফাঁস হওয়া ঘুষ বাণিজ্যের অডিও বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেমন শুনছেন, দেখছেন, আমিও তেমনই শুনছি, দেখছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আফরোজ বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একজন শিক্ষকের তোলা অভিযোগের বিষয়টি ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।