শিক্ষা জাতীয়করণে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই সহানুভূতিশীল হবেন - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা জাতীয়করণে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই সহানুভূতিশীল হবেন

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ |

দারুণ শীতের কষ্ট, ভাতের কষ্টে অধিকারের আওয়াজ তুলে মানুষ গড়ার কারিগররা যখন তিলোত্তমা রাজধানী ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে আকাশের নীচে আহাজারি করছেন তখন ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ বা মানবতার জননীখ্যাত বঙ্গবন্ধু কন্যা নিরব থাকতে পারেননি। তিনি মানুষের কষ্টের কান্না সবচেয়ে বেশি টের পান। তাঁর কাছে চাইতে হয় না। তাই তো তিনি আন্তরিকভাবে অনশনরত শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মহান জাতীয় সংসদে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এমপিওভুক্তি ও শিক্ষা জাতীয়করণে, নীতিমালার আলোকে আগামি বাজেটে তাঁর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে তাঁর এ বক্তব্য ধন্যবাদযোগ্য। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাঁর প্রতি তাঁর এমন চমৎকার অবস্থানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি তিনি শিক্ষকদেরকে অনন্ত অপেক্ষার মধ্যে রাখবেন না। শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবিও তিনি নিশ্চয়ই অপূর্ণ রাখবেন না।
মানুষের মৌলিক প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানের মতোই ‘শিক্ষা’ মানুষের মৌলিক অধিকার। একটি কল্যাণরাষ্ট্র মানুষের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। আমাদের সরকারও মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাই, সবার প্রত্যাশা ‘এক ঘোষণায় দেশের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা’ অচিরেই জাতীয়করণের যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন শিক্ষক দরদী প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা।

অন্যদিকে, এমপিওভুক্তগণের প্রত্যাশিত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখি ভাতা নিয়ে জিজ্ঞাসার উত্তর মিলছে না! ২০১৫ বেতনস্কেলের নিদের্শনায় রয়েছে নতুন করে পাঁচ বছর অন্তর বেতনস্কেল হবে না। বৎসরান্তে জুলাই মাসে জাতীয় বেতনস্কেলভুক্তরা ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সুবিধা পাবেন, যা চক্রবৃদ্ধি হারে অব্যহত থাকবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে ২০ শতাংশ বৈশাখিভাতা চালু হয়। অথচ জাতীয় বেতনস্কেলভুক্ত সবাই ইতোমধ্যেই সুবিধা দু’টি পেলেও শুধু বঞ্চিত রয়ে গেছেন এমপিওভুক্তরা। বেতনস্কেলে ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সুবিধা যদি এমপিওভুক্তগণ না-ই পান, তবে কি তারা যে স্কেল ও সুবিধা পেয়ে চাকুরিতে যোগ দেবেন শুধু সেটুকু নিয়েই অবসরে যাবেন?
মানুষ গড়ার কারিগরকে এমপিওভুক্তির নামে দেওয়া হয় ‘অনুদান’। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল ও উৎসবভাতা পান না। তারা পদোন্নতি, স্বেচ্ছাঅবসর, বদলি সুবিধাসহ অসংখ্য বঞ্চনার শিকার! তারা পদমর্যাদা অনুযায়ী বাড়িভাড়া পান না। ‘প্রিন্সিপাল থেকে পিওন’ সবাই বাড়িভাড়া পান ১০০০/=, চিকিৎসাভাতা ৫০০/= মাত্র। এ গুলো নিতান্তই অপ্রতুল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন প্রত্যেক উপজেলায় একটি স্কুল ও একটি কলেজ তিনি জাতীয়করণ করবেন। এ লক্ষে কাজও এগিয়েছে বহুদূর। এতেও আমলাতান্ত্রিক ও বহুমাত্রিক বিবেচনার প্রক্রিয়াগত মস্ত মহড়ায়, সমস্ত শিক্ষকসমাজের মধ্যে বৈষম্য, হতাশা, অপমানের তিক্ত অভিজ্ঞতা তৈরি করল শিক্ষা জাতীয়করণ দাবির প্রেক্ষাপট। সারাদেশে এ দাবিতে মানববন্ধন ও অন্যান্য কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আমজনতা সোচ্চার অংশগ্রহণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলো।
অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয়করণ প্রয়াস থেকে বাদ গেলো ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ। মারা গেলেন কলেজ অধ্যাপকসহ দু’জন। ১৯৬৫ সালে গাজীপুর জেলায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর পূর্ণস্পর্শে উদ্বোধনকৃত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের স্মৃতিবিজড়িত কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজও জাতীয়করণের আলো থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেল।
খণ্ডিত জাতীয়করণে ফলে জরিপ, যোগাযোযোগের তৎপরতা নিরবে চললেও এতে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক মান ও গতি। ক্ষেত্রভেদে তথ্যের অতিরঞ্জন বা বিকৃতি, প্রভাব বা শক্তি চর্চার স্বাভাবিক প্রবণতা প্রবল ও সক্রিয়। একই নিয়মে নিয়োগ পাওয়া, একই সিলেবাসে পাঠদানকারী, একই যোগ্যতার কোনো কোনো শিক্ষক জাতীয়করণের সুবাদে পাবেন ১০০ শতাংশ রাষ্ট্রীয় সুবিধা। তারা পাবেন চাকরি নিরাপত্তা ও বিসিএস (!) সমতুল্য সুযোগ। আর কেউ কেউ ভাগ্য ও সরকারের সিদ্ধান্তের বলি হয়ে থেকে যাবেন বঞ্চনা-অবহেলার অচলায়তনে ? কর্মচারীদেরই বা দোষ কী ? বঞ্চিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সন্তান-পরিজনেরই বা কী দোষ ? এ জন্যই প্রয়োজন একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা।
১৯৬৬ প্যারিস সন্মেলন ও ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে আজো আলোর মুখ দেখে নি। অথচ ঐ সব সিদ্ধান্তে শিক্ষক স্বার্থ সমুন্নত রাখবার যে অঙ্গিকার ব্যক্ত হয়েছে ঐ অঙ্গিকারে বাংলাদেশও অঙ্গিকারাবদ্ধ। এ জন্যই পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত বা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর অহঙ্কার: ‘শিক্ষক আমি শ্রেষ্ট সবার’।
‘শিক্ষা জাতির মেরুদ-’ তাই মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। এ জন্যই একটি মাত্র সর্বসন্মত জাতীয় গণদাবি‘এক ঘোষণায় শিক্ষা জাতীয়করণ’। এ দাবি শুধু একজন শিক্ষকের সুখী জীবনযাপনের জন্য নয়। বরং শিক্ষা জাতীয়করণ হলে:

গরিব-দূঃখি সবার সন্তান উন্নততর শিক্ষার সুযোগ পাবে।
গরিবের শিক্ষালাভের সুযোগ বাড়বে এবং ব্যয় কমবে।
গ্রামের মানুষকে শহরে গিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভীড় করতে হবে না। সবার তো শহরে যাওয়ার সামর্থ্যও নেই। এ সমস্যার সমাধান হবে।
বড় বড় শহরে জন-স্ফীতি হ্্রাস পেলে যানজট থাকবে না।
শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন হবে।
মান সম্মত শিক্ষা ও শিক্ষকের ঘাটতি দূর হবে।
ভাল প্রতিষ্ঠান, খারাপ প্রতিষ্ঠানের প্রচলিত ধারণা থাকবে না।
সবার জন্য শিক্ষা, নারী শিক্ষা, কর্মমুখী বা কারিগরি শিক্ষা সব ক্ষেত্রে প্রভুত উন্নতি সাধিত হবে।
ক্রমশ একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা সহজ হবে।
মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে সহজতর এবং দ্রুত।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068440437316895