করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করেছে। স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, করোনা মহামারীর মধ্যে এবার বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়েই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের উপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে। এবারের যে পরিস্থিতি, কোনো পরীক্ষা নয়। এবার কোনো বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। তবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণের জন্য ৩০ কর্মদিবসে শেষ করা যায় এমন একটি পাঠক্রম তৈরি করছে এনসিটিবি। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, এ পাঠক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একটি করে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। সেই অ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি চিহ্নিত করে পরবর্তী ক্লাসে তা পূরণ করার চেষ্টা করা হবে। অবশ্য শিক্ষার্থীদের পরের ক্লাসে ওঠার ক্ষেত্রে অ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়নের কোনো প্রভাব যে থাকবে না, তা স্পষ্ট করে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, এ মূল্যায়ন শুধু বোঝার জন্য যে শিক্ষার্থীদের কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে। দুর্বলতাগুলো পরের ক্লাসে কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করা হবে। নভেম্বরেও যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না, সেই আভাসও দিয়েছেন মন্ত্রী। বলেছেন, যখন মনে হবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই বা খুবই সামান্য ঝুঁকি আছে, ঝুঁকিটুকু নেয়া সম্ভব, তখন খোলা হতে পারে।
তবে সেটি কবে হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। আগামী জানুয়ারিতে স্কুল খোলা সম্ভব না হলেও সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো ও শিক্ষাবর্ষ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। করোনার কারণে এ বছর প্রায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। এ কারণেই মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের উপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার।
করোনার এই সময়ে শিক্ষা নিয়ে সুপরিকল্পিত কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না। অনেকেই ভাবছেন, জীবন বাঁচানোর কার্যক্রম যেখানে পর্যাপ্ত নয়, সেখানে শিক্ষা নিয়ে কথা বলা কতটা স্বাভাবিক। কিন্তু শিক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে জীবন বাঁচানোর জন্যই। শিক্ষাকে অবহেলা করে আমরা আগামীর করোনামুক্ত পৃথিবীতে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাব না। সুতরাং শিক্ষা নিয়ে আমাদের সুষ্ঠু ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা অত্যাবশ্যক।
জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হলেও প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের ‘লার্নিং গ্যাপ’ তৈরি হয়েছে। তাদের বর্তমান শ্রেণির সিলেবাস শেষ না করে উপরের ক্লাসে তুলে দিলে তারা ওই ক্লাসের সিলেবাস বুঝতে পারবে কিনা, সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
অটোপ্রমোশন-অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষা সংকট উত্তরণের সঠিক সমাধান নয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ঐকিক নিয়ম না শিখিয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ওই বিষয়ে উচ্চতর কোনো গণিতের সমাধান করতে দিলে শিক্ষার্থীর পক্ষে তা করা সম্ভব হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি সেমিস্টার, ইয়ারের ওপর নির্ভর করে পরের সেমিস্টারের সিলেবাস তৈরি হয়। ভিত্তি দুর্বল রেখে শিক্ষার্থীরা যদি উপরের শ্রেণিতে যায়, তাহলে তার ফল হবে ভয়াবহ।
এটি শিক্ষার গুণগত মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনিবার্যভাবে সেশনজটে পড়বে। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষ করতে না পারলে চাকরির প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। মাঝে অনলাইন এডুকেশনের নামে অর্থের অপচয় হয়েছে।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যদি এ সিলেবাস শেষ করতে পারে তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার যে সিলেবাস আছে তা বুঝতে শিক্ষার্থীদের গলদঘর্ম পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।
অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে কখনও প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষার্থীকে দেয়া সম্ভব নয়। দেশে অফিস-আদালত, গণপরিবহন চালু হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে দ্রুততম সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে। সময়ের শূন্যস্থান নয়, শেখার শূন্যস্থান দূর করতে হবে।
লেখক : আর কে চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা