শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে বাধাগ্রস্ত ২ ডজন প্রকল্প - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে বাধাগ্রস্ত ২ ডজন প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রকৌশলী, কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারদের দ্বন্দ্বে স্থবির হয়ে পরছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)। প্রধান প্রকৌশলীর (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সঙ্গে অধীন্থ কর্মকর্তাদের নানামুখী বিরোধ, প্রকৌশলী বদলি করতে ঠিকাদারদের তৎপরতা এবং পেশাধার ঠিকাদাররা বিল না পাওয়ায় চার মাস ধরে স্থবিরতা বিরাজ করছে ইইডি’তে। দু’ডজন প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ইইডি’র শীর্ষ কর্তার স্বেচ্ছাচারিতায় বিরক্ত ঠিকাদাররা; বদলির হুমকি দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে কমিশন বাণিজ্যের সিন্ডিকেট। বিল ছাড়করণে অহেতুক হয়রানির কারণে অনেক ঠিকাদার কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের মন্থর গতির কারণে বিপাকে পরেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। প্রধান প্রকৌশলীর সহযোগিতা না পেয়ে প্রকল্পের পরিচালকরা (পিডি) মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ ব্যাপারে ইইডি’র প্রধান প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বুলবুল আখতার কিছুদিন আগে বলেন, ‘ঢাকায় কয়েকটি কাজে সমস্যা হচ্ছে। অন্য অঞ্চল ও বিভাগেও কিছু কিছু সমস্যা হচ্ছে। সে জন্য সব নির্বাহী প্রকৌশলীকে পর্যায়ক্রমে ঢাকায় আসতে বলা হচ্ছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’ তবে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও প্রকৌশলী বদলি নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এটি মোট খাতওয়ারি বাজেটের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা খাতওয়ারি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইইডি’র নিজস্ব প্রকল্প ১৫টি এবং মাউশি’র ১০টি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব প্রকল্পের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সংস্থাটি।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভেঙ্গে পড়ছে ইইডি’র প্রশসনিক শৃঙ্খলা। এক বছরেরও অধিক সময় ধরে পরিচালকের পদ শূন্য রয়েছে। গত ৮ আগস্ট সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানজালার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ শেষ হয়। এরপর কিছুদিন প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব পালন করেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বুলবুল আখতার। তাকে গত ১১ নভেম্বর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেয়া হয়; একইসঙ্গে প্রধান প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন দেয়া হয়। এরপর তিনি আওয়ামী লীগপন্থি এক ডজন প্রকৌশলীকে বদলির তালিকা তৈরি করেন; যার প্রভাবে বিশৃঙ্খলা এখন চরমে।

প্রধান কার্যালয় থেকে মাঠ পর্যায় কোথাও চেইন অব কমান্ড নেই, যে যার মতো চলছেন। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নও মুখ থুবড়ে পড়েছে, সময় মতো ফান্ড রিলিজ (ছাড়) হচ্ছে না; ঠিকাদাররা বিল পাচ্ছে না; এতে থমকে যাচ্ছে উন্নয়ন কাজ। মাঠ পর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলীরা বদলির ভয়ে ফান্ড রিলিজে বিলম্ব নিয়ে মুখ খুলছেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরগুলোর মেরামত কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না, অনেক কাজ মাঝপথে থেমে রয়েছে; মাউশি ও অন্য দপ্তর প্রধানদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন থাকা সত্ত্বেও একই ঠিকাদারকে একাধিক কাজ দেয়া, ঠিকাদারদের কার্যাদেশ পাওয়া থেকে শুরু করে সিএস পাস করানো পর্যন্ত পদে পদে ঘুষ আবশ্যক করার ফলে নির্মাণ কাজেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আবার শীর্ষ কর্তার পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসমতা সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয়ে কোন কোন প্রকৌশলী কাজের ভারে প্রায় ভারাক্রান্ত; আবার কাউকে কাউকে কোন কাজের দায়িত্বই দেয়া হচ্ছে না। তারা বেকার সময় অতিবাহিত করছেন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ সম্প্রতি তাদের কাজ পিডব্লিউডি বা অন্য কোন সংস্থাকে দিয়ে করানোর প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরে শিক্ষা প্রকল্পগুলোর অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্য পূরণ হবে কী না-এ নিয়ে সন্দিহান মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার কর্মকর্তারা। মাউশি ও মন্ত্রণালয়ের দু’জন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইইডি’র প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গলদ দেখা দিচ্ছে। শীর্ষ কর্মকর্তা কারণে-অকারণে অধীন্থ কর্মকর্তাদের ধমক দিচ্ছেন, রুঢ় আচরণ করছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পরছে উন্নয়ন কাজে। কাজের আগ্রহ হারাচ্ছেন অধীনন্থ কর্মকর্তারা। পেশাদার ঠিকাদাররা সময়মতো বিল পাচ্ছেন না। আবার প্রভাবশালী ঠিকাদারদের একটি পক্ষ ইইডি’কে ঢেলে সাজাতে মরিয়া চেষ্টায় লিপ্ত। এই পক্ষের সঙ্গে ইইডি’র নীতি-নির্ধারকদের একাধিক গোপন বৈঠকও হয়েছে। এ ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পরেছে সংস্থাটিতে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে ১২টি লিফ্ট কেনার জন্য ১৩ জন কর্মকর্তাকে ওই দেশে ভ্রমণে পাঠানোর একটি প্রস্তাব এবং নিজ সংস্থার এক ডজন কর্মকর্তাকে বদলির প্রস্তাব নিয়ে গত সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে দেখা করেন প্রধান প্রকৌশলী বুলবুল আখতার। অপ্রয়োজনীয় এই প্রস্তাব দেখে ক্ষুব্ধ হন মন্ত্রী। তিনি ধমকও দেন। মন্ত্রী বলেন, ‘১২টি লিফ্ট কিনতে এতো কর্মকর্তাকে বিদেশে পাঠাতে হবে কেন? সরকারি অর্থে আনন্দ ভ্রমণ করা চলবে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন বিতর্কিত প্রকৌশলী মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদ ভাগাতে চান। কয়েকজন বিতর্কিত ঠিকাদারের তদবিরে ইতোমধ্যে বিএনপিপন্থি একজন প্রকৌশলী ইইডি’র প্রধান কার্যালয়ে পদায়ন পেয়েছেন। বরিশাল থেকে আরেক প্রকৌশলী ঢাকায় পদায়ন চান, যার বিরুদ্ধে কক্সবাজারে কর্মরত থাকার সময় বিস্তর অভিযোগ ছিল। ইইডি’র চট্রগ্রাম অফিসের একজন প্রভাবশালী প্রকৌশলীকেও সরাতে চান ইইডি’র প্রধান কর্তা। প্রধান কার্যালয়ের আরও দু’জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও দু’জন নির্র্বাহী প্রকৌশলীকেও সরানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে, যারা আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত। তাদের সরিয়ে অসাধু ও বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের প্রকৌশলীদের ঢাকায় পদায়নের চেষ্টা-তদবির চলছে। নওগাঁ জেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় কমিশন ভাগাভাগি নিয়ে ঠিকাদারদের মার খাওয়া আরেক প্রকৌশলীকে কয়েকটি বড় প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়ার চেষ্টা চলছে। আগামী ৭ জানুয়ারি অবসরে যাচ্ছেন এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, যার অধীনে রয়েছে ‘তিন হাজার বেসরকারি হাইস্কুলের একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে অর্থের প্রতিযোগিতা।

ইইডি’র এসব তৎপরতায় বিরক্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ‘বছরের শেষ সময়ে কোন কারণ ছাড়াই দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বদলি করা হলে বড় কাজগুলো ঝুঁলে যেতে পারে। বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ অব্যয়িত থেকে যেতে পারে।’

ইইডি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় শিক্ষা ভবনে (২য় ব্লক (৯ম তলা), ১৬, আবদুল গণি রোড) অবস্থিত। ইইডি’র অধীনে সারাদেশে ৩৮টি জোনাল অফিস রয়েছে। প্রতিটি জোনে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038418769836426