বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় সাধারণ ছাত্রদের নিহত হওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ। তিনি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের হত্যার অধিকার তাদেরকে কে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
হারুন অর রশিদ এমপি বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র ছাত্র আববার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার দায় ছাত্রলীগ এড়াতে পারে না।
আবরার হত্যার অভিযোগপত্র দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আবরার হত্যার ঘটনায় দ্রুত অভিযোগপত্র হয়েছে। একজন মেধাবী ছাত্র নিহত হলেন। পাশাপাশি ২৫ মেধাবী ছাত্রের জীবনে বিপদ ঘটে গেল। এই ঘটনার দায় কি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন এড়াতে পাবে?
ছাত্রলীগের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের হত্যার এ অধিকার তাদের কে দিয়েছে। দেশের উচ্চশিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। এর থেকে কীভাবে ফিরতে পারি—এটা নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে ৫ অক্টোবর বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ।
এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলিট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই ২৫ জনের মধ্যে ১১ জন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। বাকি ১৪ জনের বিরুদ্ধে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
চার্জশিটে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন—মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতাসিম ফুয়াদ, অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশররফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অমিত সাহা, মাজেদুল ইসলাম, মুজাহিদুর রহমান, তাবাখারুল ইসলাম তানভীর, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. জিসান, আকাশ হোসেন, শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মো. মোর্শেদ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, মুনতাসির আল জেমি, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না মোশতুবা রাফি এবং এস এম মাহমুদ সেতু।
এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন জিসান, তানিম, মোরশেদ, মোশতুবা রাফি। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।