চরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধকতাগুলো : কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা - দৈনিকশিক্ষা

চরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধকতাগুলো : কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আয়েশা নামে একটি মেয়েকে দিয়ে শুরু করছি। সে মানিকগঞ্জের যমুনাবিধৌত দৌলতপুর উপজেলার ৫৮ নম্বর চরকাটারি ডাক্তারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুলের নাম শুনলেই বোঝা যায় যে এর অবস্থান প্রত্যন্ত চর এলাকায়। স্কুলটিসহ এর আশপাশের এলাকা নদী ভাঙনের শিকার। এ কারণেই স্কুলটি সরিয়ে পাশের চরে নিয়ে রাখা হয়েছে। যাওয়া-আসা কষ্টকর বিধায় শিক্ষকরা সেখানে যেতে অনিচ্ছুক। তাই তাদের সুবিধামতো ‘পড়ালেখার কাজ’ পরিচালনার জন্য পাশের উপজেলা নাগরপুরের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের একটি বাড়িতে কিছু চেয়ার-বেঞ্চ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও নাগরপুর টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত। ভাঙনের শিকার ছাত্রী আয়েশার পরিবার অবশ্য এই গ্রামেই আশ্রয় নিয়েছে। তাই তাকে স্কুলে হাজিরা দিতে তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে ‘একটু দূরে অবস্থান করা’ বাকি শিক্ষার্থীদের বর্ষার পানিকাদা মাড়িয়ে স্কুলে হাজিরা দেয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন সন্ধ্যা রানী সাহা।

আমি এই (দৌলতপুর) উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছিলাম ১৮ জানুয়ারি ২০১৮। তৃণমূল পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা হিসাবে স্কুল পরিদর্শন আমার স¦াভাবিক কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে। আর স্কুলটি যদি এহেন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে তাহলে তো সেটাকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়। এ কারণেই আমি গত ১ আগস্ট ২০১৯ ওই স্কুল পরিদর্শনে যাই। এলাকাটি বেশ দুর্গম। প্রথমে নৌকায় বেশ খানিকটা পথ, তারপর পানি-কাদার মধ্যে হেঁটে এক কিলোমিটার পার হয়ে স্কুলের বর্তমান ঠিকানায় (যেখানে চেয়ার-বেঞ্চ সাজিয়ে রাখা হয়েছে) পৌঁছে যাই বেলা দশটা নাগাদ। গিয়ে দেখি তখনও শিক্ষকদের কেউ আসেননি। প্রধান শিক্ষককে ফোন করে জানতে পারি যে তিনি অফিসিয়াল কাজে ইতোমধ্যেই উপজেলায় গিয়েছেন। তিনজন সহকারী শিক্ষকের একজন নৈমিত্তিক ছুটিতে, একজনের বাচ্চার ডায়েরিয়া বিধায় আসতে দেরি করছেন। আরেকজন হঠাৎ করেই অসুস্থ বোধ করায় তিনিও দেরি করছেন। উল্লেখ্য, এ তিনজনই মহিলা শিক্ষক। তাদের পুরুষ সহযোগী একজন আছেন; তিনিও নেই। কেন নেই তা প্রধান শিক্ষক মহোদয় জানাতে পারেননি। আমি তখনও উঠোনে দাঁড়িয়ে। বাড়ির মহিলাদের কিছুটা হতচকিত মনে হলো। তারা আমার সামনেই শিক্ষকদের নানা গুণগান শুরু করে দিলেন। অথচ স্কুলের সময় চলে যাচ্ছে। ছাত্র একজনও আসেনি এবং কোনো শিক্ষার্থীই আসে বলে মনে হয়নি। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘিœত হচ্ছে। মহিলারা অন্য আলাপে সরব হলেও এ বিষয়ে তাদের কোনোপ্রকার মাথাব্যথা নেই। আর তখনই মনে হয় যে, চরাঞ্চলের মানুষরা শিক্ষার ব্যাপারে এখনও তেমনটি আগ্রহী নয়। বা আমরা তাদের শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হইনি। বিষয়টি আমাদের সবার জন্য লজ্জাকর। অথচ সরকারের তো প্রচেষ্টা অন্ত নেই।

মহিলাদের কাছে আমি জানতে চাইÑ গতকাল শিক্ষকরা এসেছিলেন কিনা। তারা জবাব দিলেন একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়েÑ শিক্ষকরা দৈনিক আসেন। তবে একজন শিক্ষকের কথা নির্দিষ্ট করে বললেন যে, তিনি অনেক দিন পর গতকাল এসেছিলেন। উল্লেখ্য, সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে তিনিই একমাত্র পুরুষ শিক্ষক। স্কুলের কাগজপত্র ওই বাসাতেই তালাবদ্ধ করে রাখা। বিষয়টি আমার আগে থেকেই জানা ছিল। আমি হাজিরা খাতা আনতে বলায় তারা চাবি নেই বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। জোরাজুরি করার পর চাবি হাতে পাই। শিক্ষকদের হাজিরা খাতা চেক করি। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে উক্ত সহকারী শিক্ষক (মহিলারা যার রেফারেন্স দিয়েছিলেন) ১৪ জুলাই ২০১৯ থেকে ৩০ জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত স্কুলে গরহাজির ছিলেন এবং ৩১ জুলাই ২০১৯ তারিখে হাজির হয়ে একই কলম দিয়ে একই সময়ে একইভাবে স্বাক্ষর করে রেখেছেন। এরপর তার ব্যবহৃত পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা যাচাই করি। একই সময় ধরে (১৪ জুলাই ২০১৯ থেকে ৩১ জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত) কোনো হাজিরা ডাকা (জড়ষষ পধষষ) হয়নি। অর্থাৎ প্রমাণ হয়ে গেলো যে, উক্ত সহকারী শিক্ষক একটা লম্বা সময় ধরে স্কুলে আসেননি। দফতরি-কাম-প্রহরীর কাছ থেকে এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য নিয়ে বেলা ১১টায় স্কুল ত্যাগ করি। এ ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ২ জুলাই ওই সহকারী শিক্ষক সাহেবের সঙ্গে আমার দেখা হয় উপজেলা চত্বরে। তাকে হাজিরার ব্যাপারে জিগ্যেস করতেই তিনি আমার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেনÑ ‘আমি একদিনের জন্যও স্কুলে গরহাজির ছিলাম না। যদি প্রমাণিত হয় যে আমি গরহাজির ছিলাম তা হলে চাকরি ছেড়ে দেব।’ তার এ কথায় মনে হলো যে তিনি স্থানীয়ভাবে বেশ প্রভাবশালী এবং একটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। অতঃপর নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভাষায় তাকে আমি শুনিয়ে দেইÑ ‘এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েই মোহাম্মদ আশরাফুল আলম ও নাসিমা খানম আজ সরকারের উপসিচব পদে আসীন। নিশ্চয়ই তারা আরও উপরে যাবেন। আপনাদের চেষ্টায় হয়তো আয়শাও একদিন দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে। অথচ সেদিকে আপনাদের নজর কম।’

যাই হোক, আমার মনে হয়েছে হাতের কাছে অবস্থান করলেও আয়েশাকে স্কুলে হাজির করানোর কোনো প্রচেষ্টা নেই। যিনি হাজিরা নেবেন তিনিই একনাগাড়ে গরহাজির। আবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। অথচ তার চাকরির বয়স এক বছরও হয়নি। প্রসঙ্গত একটি কথা না বললেই নয়, মিডিয়ার কল্যাণে জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের কাইয়ু-সিরাতাকি বলে প্রায় পরিত্যক্ত একটি রেলস্টেশনের কথা পৃথিবীব্যাপী চাউর হয়ে গেছে। সেই স্টেশনের নিয়মিত যাত্রী ছিল মাত্র একজনÑ কাছেরই কোনো হাইস্কুলের ছাত্রী। জাপানি রেল কর্তৃপক্ষ জানতো বিষয়টি। অর্থনৈতিক লোকসানের কথা চিন্তা করে ট্রেনটি বন্ধ করে দিতে পারতো কিন্তু তা করেনি। তাদের কাছে রেলের লোকসানের চেয়ে জাপানি মানবসম্পদ উন্নয়ন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই জাপান দেশটি অর্থনৈতিক ও মানবিক বিচারে উন্নতির চরম শিখরে। অন্যদিকে আমরা আয়েশাদের স্কুলে হাজিরা দেয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারি না, বা দেয়ার মানসিকতা রাখি না।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের মূলকথা ছিলÑ একটি বৈষম্যহীন-শোষণহীন উন্নত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল, উৎপাদনমুখী ও দেশপ্রেমিক জনসমষ্টি সৃষ্টিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঠিক নির্দেশনা প্রদান। অথচ এ অনন্য সুযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক যদি বিনা অনুমতিতে দিনের পর দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন বা শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে কেমন লাগে! উল্লেখ্য, এ ধরনের শিক্ষকরা পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ায় ওস্তাদ। এরা নিজেদের বিশেষ স্বার্থসিদ্ধির প্রয়োজনে দু-একজন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত সর্বোচ্চ প্রতিনিধির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলাফেরা করেন। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় কাজকর্মে বেশি ব্যস্ত থাকেন। পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীদের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনে অবিরত বাধার সৃষ্টি করে থাকেন।

দৌলতপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়েনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি (৫টি) যমুনা নদীর বুকজুড়ে বিস্তৃত। অধিকাংশ মানুষ বর্গায় জমি চাষ, মাছধরা, পশুপালন, কৃষিজমিতে দিনমজুরি, ঘোড়ার গাড়িতে পণ্য পরিবহন, ছোটখাটো ব্যবসা ইত্যাদি নির্ভর। যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও সেকেলে। যমুনা নদী খুবই ভাঙনপ্রবণ বিধায় উপজেলার ওই পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষদের জীবনযাপনও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে চর এলাকায় স্কুল আছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষকরাই সেখানে থাকতে পছন্দ করেন না। তাদের অনেকেই দৌলতপুর, মানিকগঞ্জ, এমনকি সাভার বা ঢাকায়ও অবস্থান করেন। যার ফলে এত দূর থেকে দুর্গম এলাকা পাড়ি দিয়ে সময়মতো স্কুলে হাজিরা দেয়া কঠিন। বিষয়টি প্রথমেই আমার নজরে আসে। উত্তরণের উপায় হিসেবে আমি ঠিক সকাল ৯টায় স্কুল পরিদর্শন করতে শুরু করি। চেষ্টা ছিল কারও বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মোটিভেশনের মাধ্যমে তাদের সময়মতো আগমন ও প্রস্থান নিশ্চিত করা। যাই হোক বিষয়টি শুরু থেকেই উপজেলার (মেয়াদোত্তীর্ণ) শিক্ষক সমিতির কর্তা ব্যক্তিদের (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) ভালো লাগেনি। এসব কর্তাব্যক্তিরা ক্লাস না করে উপজেলায় এসে কেবল সাধারণ শিক্ষক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও অফিস সহকারীদের ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে ব্যস্ত। সভা সমিতিতে তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ মাঝে মধ্যে দৃষ্টিকটু পর্যায়ে চলে যায়। এ কাজে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও তারা কম চেষ্টা করেন না। একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মাসিক সমন্বয় সভায় উক্ত সমিতির প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হলো যে ‘টিই-ও সাব’ (উপজেলা শিক্ষা অফিসার) সকাল ১০টার আগে কোনো স্কুল ভিজিট করতে পারবেন না। এতে সাধারণ শিক্ষকরা কিছুটা মুষড়ে পড়েন। কারণ তাদের ভিতরেই প্রকৃত শিক্ষক সত্ত্বাটি কমবেশি বিরাজমান। আর মোটিভেশন পেলে তো কথাই নেই।

নেতৃত্ব প্রদানকারী উক্ত শিক্ষকদের স্বাভাবিক নৈতিকতাবিরোধী ক্রিয়াকলাপও শিশুদের জন্য অনুকরণ-উপযোগী নয়। তারা মাঝে মধ্যে নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা যে এগুলো বুঝে না এমন নয়। এ ধরনের ঘটনাগুলো পরবর্তীতে তাদের জীবনে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। তারা শৃঙ্খলাভঙ্গকারী কিছু কিছু অনুজ-শিক্ষকদের জন্য অনুসরণীয়ও বটে। কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকা আর অননুকরণীয় কাজগুলোই তাদের একমাত্র অপরাধ নয়। স্কুলের ফলাফল ভালো দেখানোর ব্যাপারে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে থাকে বলে অনেকের অভিযোগ আছে। অর্থাৎ সুষ্ঠু মানবসম্পদ যাতে গড়ে না উঠতে পারে, সে ব্যাপারে তারা তৎপর।

নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় এরা উপজেলা শিক্ষাপ্রশাসনকে প্রায়ই নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ একজন শিক্ষক নেতাকে গত ৩০ জুন ২০১৯ তারিখে স্কুলে অনুপস্থিত পেয়ে মার্ক করে রাখি। একই দিনে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটের পরে শিক্ষা অফিসে এসে তিনি আমার সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যাক-ডেটে (২৯ জুন ২০১৯) নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করিয়ে নেন। আরেক শিক্ষক-নেতা মঞ্জুরিবিহীন ছুটির আবেদন স্কুলে রেখে দিনের পর দিন স্কুলে গরহাজির থাকেন। এদের দেখাদেখিই বোধ হয় কোনো কোনো জুনিয়র শিক্ষক স্কুলে হাজিরা দেয়া থেকে বিরত থাকেন। কেউ কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের দোহাই দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় হয়তো বিষয়টি জানেনই না। তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধি বিধায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসাবে বিষয়টি আমার যাচাই করার সুযোগ থাকে না। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সরকারি কর্মচারীরা হচ্ছেন জনগণের সেবক। সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘সব সময় জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ কিন্তু দুঃখের বিষয় সংবিধানের এ কথাগুলো আমাদের সমাজের এ ধরনের শিক্ষক নেতারা আদৌ মাথায় রাখেন কিনা সন্দেহ।

চরাঞ্চলের অভিজ্ঞতা আমার কাছে নতুন নয়। আমি সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলায় (উপজেলার পুরোটাই যমুনা নদীর ভাঙাগড়া প্রবণ চর এলাকা ব্যাপী) ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত প্রায় নয় বছর এবং চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীর চরে ২০০৬ থেকে ২০১০ পর্যন্ত প্রায় চার বছর সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোসহ সব বিদ্যালয়ের উন্নয়নে বিগত দেড় বছর নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলাম কিন্তু অচলায়তনের দেয়াল বুঝি ভাঙা গেল না। যোগদানের পর থেকেই নানামুখী চক্রান্তের মোকাবেলা করতে বেশি সময় গেল। এর মধ্যে মেহেরপুরের গাঙনি উপজেলায় আমাকে একবার বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে আগের জায়গায়ই পুনর্বহাল করেন। সম্প্রতি আবারও বদলি করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে। অতএব আমার আর চরের আয়েশাদের নিয়ে ভাববার সুযোগ নেই। তবুও বলতে হয়Ñ আয়েশা একজন শিশু এবং ভবিষ্যতের নারী। আমাদের দেশে শিশু এবং নারীরাই সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার। এ বিষয়ে শিক্ষকদেরই বেশি মনোযোগ দিতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত ‘টেকসই উন্নয়ন’ এর জন্য যে ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্কের এসডিজি সূচক এবং ড্যাশবোর্ডের রিপোর্ট-২০১৭ অনুযায়ী মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের আটটি লক্ষ্য দারুণভাবে পূরণ করা গেলেও এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার ১০টিতেই লালকার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে থাকা লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে এসডিজি নম্বর ৪ হলো মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ। এ কাজে সংশ্লিষ্টদের বিশেষত তথাকথিত শিক্ষকদের উদাসীনতাকে টেকসই উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত বলে মনে করি।

সন্ধ্যা রানী সাহা : উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0096530914306641