বদলি ও পদায়ন নিয়ে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে থাকা কর্মকর্তাদের বদলি না করা, অনিয়মে অভিযুক্তদের পদায়ন করা এবং সিনিয়রদের ডিঙিয়ে জুনিয়রদের বড় পদে পদায়নের কারণেই এ অসন্তোষ। এ নিয়ে তারা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এর প্রতিকার চাইবেন বলে একাধিক শিক্ষক নেতা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে বিভিন্ন পদে ৬ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত রয়েছেন অন্তত ৬০ জন কর্মকর্তা। নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তারা লোভনীয় পদগুলোতে থাকছেন। এ কারণে এসব পদে পরিবর্তন চাইছিল শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। কিন্তু নতুন মন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর গত ২৪ মার্চ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৮ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয় এবং এসব পদে নতুন করে পদায়নও দেয়া হয়। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা এ বদলি ও পদায়ন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে একই পদে ও প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন তাদের বদলি করা হয়নি, তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এছাড়া যারা নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এবং অপেক্ষাকৃত জুনিয়র তাদেরই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়ন করা হয়েছে।
শিক্ষা ক্যাডারে বদলি ও পদায়ন নিয়ে যে অনিয়মের খবর পাওয়া গেল তা সার্বিক অর্থেই অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’ এ আপ্তবাক্যটি সবারই জানা। কিন্তু সেই মেরুদন্ড সোজা রাখার দায়িত্ব যে শিক্ষকদের, তাদের মেরুদন্ডই যদি অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাঁকা করে দেয়া হয় তবে রাষ্ট্রের জন্য এর চেয়ে হতাশাজনক আর কী হতে পারে!
ব্রিটিশ আমলে সরকারি চাকরিতে বদলির নিয়মটি এ জন্যই চালু করা হয়েছিল যে, এক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করলে দুর্নীতির চক্র তৈরি করার সুযোগ থাকে। সরকারি চাকরিতে এখনও বদলির নিয়মটি প্রচলিত আছে। তবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকায় থেকে যাচ্ছেন কিংবা সিনিয়রকে ডিঙিয়ে অল্প সময়ে পদায়ন নিয়ে নিচ্ছেন। ফলে দুর্নীতির শেকড় বিস্তৃত হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, ‘শিক্ষা ভবন’ খ্যাত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে ফ্রি-স্টাইলে! রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ভবনটি ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। এতে করে শিক্ষা প্রশাসনে হতাশা ও নৈরাজ্য বাড়ছে।
আমরা অবশ্যই এ অবস্থার পরিবর্তন চাই এবং শিক্ষা ভবনে একটি সুশৃঙ্খল এবং নিয়মতান্ত্রিক পদায়ন ব্যবস্থা দেখতে চাই। এক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে নানামুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দও অনেকাংশে বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এসব কর্মকান্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষটিই যদি এভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত থাকে, তাহলে সে লক্ষ্য অর্জন আদৌ সম্ভব হবে কি? সঙ্গতকারণেই সরকারের উচিত এ ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেয়া। শিক্ষা ভবনকে অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সর্বোপরি, নিয়োগ, পদায়ন এবং বদলির ক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে সুস্থ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখলে শিক্ষা প্রশাসনের পুঞ্জীভূত অসন্তোষ কাটবে।
সৌজন্যে: দৈনিক সংবাদ