শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যথাযথ পদক্ষেপ কাম্য - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ ব্যয়ে অনিয়মশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যথাযথ পদক্ষেপ কাম্য

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

উচ্চশিক্ষা যে ক্রমে ব্যবসায় পরিণত, তার নির্মম চিত্র পাওয়া যায় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের মাধ্যমে। সুবিধামতো নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বেতন, সেশন ফি আদায় ইত্যাদি অভিযোগ বারবার তাদের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। পরিস্থিতির হাল ধরতে ও দুর্নীতি রুখতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাবদ প্রাপ্ত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের শূন্য পদ পূরণবিষয়ক বাধ্যবাধকতা জুড়ে দিলেও অনিয়মের লাগাম টানা যেন কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। নিয়মের ফাঁকফোকর গলিয়ে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছেন সংশ্লিষ্টরা, যার অন্যতম উদাহরণ ইউজিসির তাগাদা সত্ত্বেও ৮৫ শতাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ের হিসাব প্রদান না করে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, প্রায় তিন দশক আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সূচনা কার্যক্রমটি স্বাভাবিকভাবেই দেশের শিক্ষাঙ্গনে স্বস্তির সুবাতাস হয়ে আসে। কেননা ইউরোপের প্রথিতযশা অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ কিংবা আমেরিকার হার্ভার্ড, প্রিন্সটন ও কলম্বিয়া সবই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। যুগের পর যুগ ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার মান অটুট রাখতে সমর্থ হলেও আমাদের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকে কীভাবে বাণিজ্যিক ফায়দা লাভের উপায় করে ফেলছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। আইন এড়িয়ে ব্যয়ের হিসাব প্রদান না করা তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মকেই তুলে ধরে।

শিক্ষার মতো মৌলিক ও স্পর্শকাতর বিষয় ঘিরে এমনতর কর্মকাণ্ড জাতির শিরদাঁড়াকেই ভঙ্গুর করে দেয়। পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। অনিয়মের উল্লেখ রয়েছে খোদ ইউজিসির তদন্তেও, তাই বিষয়টি হেলাফেলার নয়। অভিযোগ রয়েছে, অনিয়মের তথ্য প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হারিয়ে যায় কিংবা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পরও মন্ত্রণালয় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আমরা অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা আশা করি। বলার অপেক্ষা রাখে না, বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক কিংবা ট্রাস্টি ক্ষমতাবান বা প্রভাবশালীদের কাছের লোক। মূলত ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে তারা শিক্ষার নামে ফায়দা লুটছেন, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পরিলক্ষিত। প্রতি বছর লাখো শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে বের হওয়ার পরও চাকরি পাচ্ছেন না। দেশে বেকারত্বের হার ক্রমবর্ধমান। এদিকে বিভিন্ন শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে চাহিদা থাকলেও দক্ষ কর্মী আনতে হচ্ছে বিদেশ থেকে। সত্যিকারের মেধাবী জনগোষ্ঠী তৈরির বদলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যতদিন সনদনির্ভর শিক্ষা প্রদানের মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে না পারবে, ততদিন যোগ্য ও দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি হবে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২ অনুযায়ী পরিচালনার সূচনালগ্নে বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রারের মতো সর্বোচ্চ পদগুলোয় নিয়োগ দিয়েছে, যা গোড়ায় গলদের অনুরূপ। পরবর্তী সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ (সংশোধনীসহ)-এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন আনা হলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই আইনের সব শর্ত পূরণ করতে পারছে না। তহবিল আত্মসাৎ, আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেয়া ও ট্রাস্টি সদস্যদের আর্থিক অনিয়মের মতো ঘটনা তাদের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। নামে-বেনামে ট্রাস্টিদের সুবিধাভোগের বিষয়গুলো নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়সংশ্লিষ্টদের অনিময়, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতা রুখতে ইউজিসির সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় ভূমিকা কাম্য। তা না হলে সনদ ও ভর্তি বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎ, কর ফাঁকি ও অবৈধ নিয়োগে নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের পাশাপাশি ইউজিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টিও বিবেচ্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একের পর এক অনিয়ম গুণগত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ক্রমে চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধি করছে। আইনের বাইরে গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে হিসাব ও এর নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালায়, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার বিকল্প নেই।

দেশে মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৪টি, কার্যক্রম চলছে ৯৫টির। স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে মাত্র ১৩টি। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত নয়। এমন অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও তদন্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আর্থিক ও প্রশাসনিক সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত ও সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা চাই।১০টি শুল্কমুক্ত বন্দর চালুর পরিকল্পনা ব্রিটেনের।
 

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065288543701172