শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কিছু কথা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কিছু কথা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে বটে, তবে দেশটাতে জনজীবন কি ভালো আছে? উন্নয়নের সুফল কারা ভোগ করছে? এ কথা ঠিক যে কিছু লোকে অনুভব করেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা কায়েম হচ্ছে এবং দেশ খুব ভালো চলছে। কিন্তু সেটা কয়জনে অনুভব করছেন? সোমবার (১৪ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষায় ফল খুব ভালো করছে, সন্দেহ নেই। এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রিও অনেকেই লাভ করছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের গর্ব প্রকাশের অন্ত নেই। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা কি বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভালো? জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের সহায়ক? আমার উপলব্ধি মোটেই ভালো নয়। ভালো করার জন্য নানা পরিবর্তন দরকার—এ কথা কিছু লোক বলছেন। প্রচারমাধ্যম সেগুলোকে অল্প গুরুত্ব দিচ্ছে। চলমান শিক্ষানীতি ও  শিক্ষাব্যবস্থা জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের প্রতিকূল।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতির তিনটি লক্ষ্য থাকা দরকার—

এক. সারা দেশে বিভিন্ন ধারার পেশামূলক শিক্ষার মাধ্যমে বৃহত্তমসংখ্যক যোগ্য, দক্ষ, উৎপাদনক্ষম, স্বদেশপ্রেমিক, উন্নত চরিত্র বলসম্পন্ন কর্মী সৃষ্টি করা;

দুই. শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শক্তিমান, উন্নতিশীল, স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা  ও ভালোভাবে পরিচালনা করার উপযোগী শিক্ষিত লোক তৈরি করা; এবং

তিন. দর্শন, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য, প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রকৃত জ্ঞানী ও সৃষ্টিশীল ব্যক্তিদের আত্মপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা।

বাংলাদেশের চলমান শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা এই তিনটি লক্ষ্যের একটির প্রতিও যত্নবান নয়। প্রথম লক্ষ্য অবহেলিত। দ্বিতীয় লক্ষ্যও অবহেলিত। বাংলাদেশকে বাংলাদেশের জনগণের রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলার ইচ্ছা ও চেষ্টা শাসক শ্রেণিতে খুঁজে পাওয়া যায় না। ছাত্র-তরুণদের মধ্যে যারা মেধাবী, উদ্যোগী, পরিশ্রমী, তারা বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণে আগ্রহী। তৃতীয় লক্ষ্য সম্পূর্ণ অবহেলিত। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা দর্শন, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রকৃত জ্ঞানী ও সৃষ্টিশীল ব্যক্তিদের আত্মপ্রকাশের সম্পূর্ণ প্রতিকূল। বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার পাঁচেক নতুন বই প্রকাশিত হয়। যে ভাষায় রামমোহন, বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার, মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, জগদীশ বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রবীন্দ্রনাথ, শরত্চন্দ্র, রোকেয়া, লুত্ফর রহমান, এস ওয়াজেদ আলি, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ, আবু সয়ীদ আইয়ুব লিখেছেন, সেই ভাষায় আজ যাঁরা লিখছেন তাঁদের মধ্যে কি পূর্ব-সাধকদের গুণাবলির কোনো রেশ খুঁজে পাওয়া যায়? কী তাঁদের উদ্দেশ্য ও প্রচেষ্টা। স্বাধীন বাংলাদেশে গত প্রায় অর্ধ শতাব্দীব্যাপী যাঁদের লেখা, চিন্তা, বক্তৃতা-বিবৃতি সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় হয়েছে তাঁদের মধ্যে আছেন দাউদ হায়দার, তসলিমা নাসরিন, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ ছফা, হুমায়ূন আহমেদ প্রমুখ। নারী ও ধর্ম বিষয়ে আহমদ শরীফের লেখা ও বক্তৃতা-বিবৃতিও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। শওকত ওসমানের ‘শেখের সম্বরা’ জাতীয় লেখা ও বক্তৃতা-বিবৃতি উসকানিমূলক ও জনপ্রিয় হয়েছে। জনপ্রিয় লেখক আরো আছেন। জনপ্রিয় লেখা ও উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা-বিবৃতি দ্বারা স্বাধীন বাংলাদেশে অর্ধশতাব্দী ধরে তরুণদের কী মন তৈরি হয়েছে? ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও ধর্মীয় শক্তির উত্থান খুব দেখা যাচ্ছে। জনপ্রিয় ধারার বাইরে প্রকৃত মূল্যবান কিছু রচিত হয়েছে কি না তা তলিয়ে দেখার কোনো প্রচেষ্টা নেই। এই প্রায় অর্ধ শতাব্দীতে এমন কোনো পত্রিকা জনপ্রিয় হয়নি, যার জাতি গঠন ও রাষ্ট্র গঠনমূলক কোনো ভূমিকা আছে। কোনো সমালোচকও আত্মপ্রকাশ করেননি। যে বুদ্ধিজীবীরা সমাজের অভিভাবকের আসন নিয়ে জাতির পথপ্রদর্শকরূপে কাজ করেছেন, যাঁদের পরিচয় বিশিষ্ট নাগরিক তাঁরা কোনো উন্নত চিন্তা-চেতনার পরিচয় দেননি। স্বাধীন বাংলাদেশে গত প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকায় প্রশংসনীয় কী আছে? বাংলাদেশের প্রায় অর্ধশতাব্দীর ছাত্ররাজনীতিতে ভালো কিছু কি আছে?

চলমান ব্যবস্থায় পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা অত্যন্ত ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করছে। কথিত সৃজনশীল পরীক্ষাপদ্ধতি শিশু-কিশোরদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যেখানে ব্রিটিশ সরকার ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যমে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক অবলম্বনে ও-লেভেল, এ-লেভেল চালাচ্ছে, সেখানে ইংলিশ ভার্সন চালু করার দরকার কী। সরকার বাংলাদেশে জাতি গঠন ও রাষ্ট্র গঠনের বিবেচনা বাদ দিয়ে, রাষ্ট্রভাষা বাংলার বিবেচনা বাদ দিয়ে ইংলিশ ভার্সন চালিয়ে যাচ্ছে। এর কুফল যখন স্পষ্ট হবে, তখন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এক প্রতিকারহীন দুরবস্থায় পড়ে যাবে। সে অবস্থায় বাংলাদেশের দুর্গতির প্রভাবে ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে সেমিস্টার পদ্ধতির নামে যে ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, তাও জাতীয় শিক্ষার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাংলা ভাষা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্ব হারাচ্ছে এবং রাষ্ট্রভাষারূপে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না। রাষ্ট্রভাষা মানে শুধু অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ নয়, আরো অনেক কিছু। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টির ভাষা তো বটেই। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষারূপে প্রতিষ্ঠা করার আগ্রহ শাসক শ্রেণির লোকদের মধ্যে দুর্লভ। তাঁরা  রাজত্ব করতে চান, রাষ্ট্র গঠন চান না। সাম্রাজ্যবাদীরা যে নীতি নিয়ে বৈশ্বিক ব্যাপারগুলো চালায়, তাকে এককথায় বলা যায় ‘আধিপত্য ও নির্ভরশীলতা নীতি’। এই নীতি নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষানীতি পরিচালিত হচ্ছে। এর দ্বারা রাষ্ট্র গঠন, জাতি গঠন অসম্ভব। কার্যত বিশ্বব্যাংক পরিচালনা করছে বিশ্বব্যবস্থা। বিশ্বায়ন সাম্রাজ্যবাদেরই উচ্চতর স্তর। বাংলাদেশ বিশ্বায়ন মেনে নিয়ে অন্ধভাবে চলছে। আত্মগঠনের কোনো  আকাঙ্ক্ষাই নেই।

২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে বাংলাদেশে মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার এক মেগা প্রকল্প কার্যকর করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে যৌথভাবে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। ২০১৮-১৯ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ব্যাপারটি ভেবে দেখার মতো। সারা দেশের শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, অভিভাবক, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা, লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবী সবারই উচিত ব্যাপারটা বুঝে দেখা। আধিপত্য ও নির্ভরশীলতা নীতি নিয়েই কি সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়নের ঘোষণা নিয়ে, কোনো দুরভিসন্ধি হাসিল করার জন্য এগিয়ে এসেছে? তারা তো বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এক খারাপ থেকে নতুন আরেক খারাপের দিকেই নিয়ে যায়! ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের পর থেকে পাকিস্তানকালে এবং বাংলাদেশকালে এ ব্যাপারটিই বারবার দেখা যাচ্ছে! দূরদর্শিতার সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করার এবং বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করার ব্যাপারে সর্বমহলে সচেতনতা ও সতর্কতা দরকার।

২৬ আগস্ট ২০১৮ তারিখের একটি দৈনিক পত্রিকা থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ এখানে উদ্ধৃতি করছি—

“নির্বাচনী বছরে শিক্ষা খাতে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। ‘মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন’ কর্মসূচি নামে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। যৌথভাবে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। কিছু ব্যয় সরকারের বাজেট থেকে বহন করা হবে। এর আগে দেশের শিক্ষা খাতের ইতিহাসে এত বড় প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ২০ হাজার স্কুল, ১০ হাজার মাদরাসা ও এক হাজার কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ ছাত্র এবং তিন লাখ শিক্ষক উপকৃত হবেন বলে দাবি করা হয়েছে।  এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য মাঠপর্যায়ে প্রচুর লোকবল নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। গঠন করা হবে একাধিক বিশেষায়িত কমিটি। শুধু এই কর্মসূচির জন্য পৃথক ‘আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ’ নির্দেশনা জারি করবে সরকার। প্রকল্পটি অর্থমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এই কর্মসূচির আওতায় মাধ্যমিক ও মাদরাসা—উভয় শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান আরো বাড়ানো হবে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতেও জোর দেওয়া হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো থেকে শুরু করে উপবৃত্তি, প্রণোদনা, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহি বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে।”

এই প্রকল্পের অর্থায়ন সম্পর্কে পূর্বোক্ত বিবরণে আরো বলা হয়—

“প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির মূল তিনটি রেজাল্ট-এরিয়া রয়েছে। প্রথমত, এনহান্সড কোয়ালিটি অ্যান্ড রেলেভ্যান্স অব সেকেন্ডারি এডুকেশনের আওতায় কারিকুলাম উন্নয়ন ও শিক্ষাকে শ্রমবাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ে শিখন-শেখানো পদ্ধতি উন্নয়ন। পাঠাভ্যাস উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের  মূল্যায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শিক্ষা কার্যক্রমে আইসিটির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। দ্বিতীয়ত, ইমপ্রুভড অ্যাকসেস অ্যান্ড রিটেনশনের আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি (উপবৃত্তি দেওয়া, অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি) করা হবে। সুযোগবঞ্চিত এলাকায় শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্তির হার বৃদ্ধির (বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা তথা পুরস্কার সচেতনতা বৃদ্ধি, বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা মোকাবেলায় সহায়তা ইত্যাদি) কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। তৃতীয়ত, স্ট্রেংদেনড গভর্ন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিংয়ের আওতায় শিক্ষাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ এবং পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।”

২০১৮ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরের সব পত্রিকায়ই এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বোঝা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষা, মাদরাসা শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদির উন্নয়নের নামে এক মহাযজ্ঞ বাংলাদেশে আরম্ভ হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইউনেসকো, ইউনিসেফ ইত্যাদির সহযোগে এক মহাযজ্ঞ। কী করা হচ্ছে এত টাকা দিয়ে? টাকাটাই বড় কথা নয়, কী ফল হবে টাকা খরচের। ঘোষিত ও অঘোষিত কী কী লক্ষ্য থাকছে এই এলাহি কাণ্ডের পেছনে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর থেকেই দেখছি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অত্যন্ত তৎপর। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কর্মনীতি উপনিবেশগুলোর প্রতি তুলনামূলকভাবে উদার ছিল। কিন্তু ১৯৫০-এর দশকের সূচনা থেকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কর্তৃত্বকালে সাম্রাজ্যবাদী কর্মনীতি অনেক বেশি জটিল, কুটিল, দুর্বল জাতিগুলোর এবং সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। যে এলাহি কাণ্ড বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষা, মাদরাসা শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদি নিয়ে আরম্ভ হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ দেখার লোক কোথায়? বাংলাদেশের যাঁরা শিক্ষাবিশেষজ্ঞ হিসেবে এসব কর্মকাণ্ডে থাকেন, বিশেষজ্ঞ ডক্টর-প্রফেসর—তাঁরা সাধারণত সাম্রাজ্যবাদী একান্ত অনুগত, বাংলাদেশের স্বার্থকে গৌণ মনে করেন। সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনগুলোর বুদ্ধিজীবীরা, এনজিওপতিরা সাধারণত সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থেরই ধারক-বাহক ও রক্ষক। সরকারি প্রশাসকরাও প্রকল্পে জড়িত হয়ে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থেরই অনুকূলে কাজ করেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন ধারার রাষ্ট্রীয়  শিক্ষা নিয়ে যে এলাহি কাণ্ড আরম্ভ হয়েছে, তাকে সামনে নিয়ে এসব কথা আমার মনে জাগছে। প্রচারমাধ্যমের তথ্যের বাইরে আমি কিছুই জানি না। বিষয়টির প্রতি আমি দেশের বিবেকবান ও চিন্তাশীল ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি মাত্র; সরকার কি জাতীয় স্বার্থ, জনস্বার্থ দেখছে? বাংলাদেশে উন্নয়নের যে জোয়ার চলছে, শিক্ষা ক্ষেত্রের এই এলাহি কাণ্ডও সেই জোয়ারেরই অংশ। দেশের জনগণ যখন ঘুমিয়ে আছে, জাতি যখন অনৈক্যের মধ্যে কলহ-কোন্দলে ও হিংসা-প্রতিহিংসায় মত্ত, রাষ্ট্র যখন সব দিক দিয়ে শ্লথ-শিথিল, আর সাম্রাজ্যবাদী সব সংস্থা ও শক্তি যখন বিশ্বায়নের নামে অতি তৎপর, তখন আমাদের রাষ্ট্র, জাতি ও জনজীবনের অনুকূল শিল্পনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠবে কিভাবে? রাষ্ট্র গঠন, জাতি গঠন ও ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্নে সবাই যখন উদাসীন; তখন রাষ্ট্র, জাতি ও জনজীবনের কল্যাণ সাধিত হবে কিভাবে? জনস্বার্থ, জাতীয় স্বার্থ ও জনস্বার্থের দিক দিয়ে দেখলে দেশের চলমান শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আস্থাশীল থাকা কি সম্ভব! উন্নত নতুন ব্যবস্থা নিয় বিবেকবান চিন্তাশীল ব্যক্তিদের চিন্তাভাবনা চাই।

আবুল কাসেম ফজলুল হক : প্রগতিপ্রয়াসী চিন্তাবিদ, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044209957122803