শিক্ষানীতি কাগজে লেখা কিছু ভালো কথা ছাড়া কিছুই নয় : ড. জাফর ইকবাল - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষানীতি কাগজে লেখা কিছু ভালো কথা ছাড়া কিছুই নয় : ড. জাফর ইকবাল

মুহম্মদ জাফর ইকবাল |

আমি খুব আশাবাদী মানুষ, খুব মন খারাপ করা কোনো ঘটনাও যদি ঘটে, তখনও আমি নিজেকে বোঝাই এটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা, তখনও আমি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে অপেক্ষা করতে পারি। আমি সহজে হতাশ হই না, আশাহত হই না, মনে দুঃখ পাই না। বেশি আশাবাদী হয়ে আমার কোনো ক্ষতি হয়নি- সবচেয়ে বড় কথা যেসব বিষয় নিয়ে আশাবাদী ছিলাম, তার প্রায় সবই সত্যি হয়েছে।

তারপরও সেদিন একটা ছেলের একটা ই-মেইল পড়ে আমার মন খারাপ হয়েছে। ই-মেইলে সে যে বিষয়গুলো লিখেছে তার মাঝে একটিও নতুন কিছু নেই, সবই বহুদিন থেকে জানি। তারপরও সেটা আমার মাথা থেকে সরাতে পারছি না। নাম-পরিচয় গোপন রেখে তার ই-মেইলটি তুলে দিচ্ছি :'আসসালামু আলাইকুম স্যার। কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। আমার শিক্ষাজীবনের কিছু ঘটনা তুলে ধরলাম। আশা করি, এসব ঘটনা শুধু আমার একার না, অনেকেরই :

১. ক্লাস ৫ জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষা পিইসি (এই পরীক্ষার কী প্রয়োজনীয়তা আমি আজও বুঝলাম না)।

২০১৩ সাল প্রশ্ন ফাঁসের স্বর্ণযুগ। পরীক্ষার দু'একদিন আগেই সব প্রশ্ন পাওয়া যায়। সেসব প্রশ্ন পেয়ে অভিভাবকের সহায়তায় সুন্দর করে পরীক্ষা দিয়ে এলাম, কেউ আমাকে একটিবারও বলল না এটা করো না।

২. ক্লাস ৬/৭ আমার জীবনের কাটানো কিছু সুন্দর সময়, এই সময় আমি পড়ালেখা খুবই কম করতাম। যার কারণে আমি এই সময় সাইকেল চালানো শিখি, কোডিং শিখি, কিছু সুন্দর বই পড়ি। কিন্তু আমি ছিলাম ক্লাসের লাস্ট স্টুডেন্ট। এই সময় আমি দেখলাম, অন্য সবাই স্কুলের টিচারের কাছে পড়ে। আমাদের যে গণিত শিক্ষক, তিনি তার কাছে পড়ে সব স্টুডেন্টদের পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন দিয়ে দিতেন। তিনি তার কোচিংয়ে সেই প্রশ্ন সলভ করাতেন, তারা সেই প্রশ্ন টিফিন টাইমে বসে বসে মুখস্থ করত। টিফিন টাইমে পড়ে, ক্লাসে তারা বসে বসে সেই প্রশ্নে পরীক্ষা দিত। যেহেতু আমি তার কাছে পড়তাম না, তাই আমি সেই পরীক্ষায় কখনও উত্তর করতে পারতাম না। কারণ প্রশ্নগুলো ছিল খুবই কঠিন। আমার কাছে কোনো গাইড ছিল না। প্রশ্নগুলো হতো ক্লাস এইটের বই থেকে। তাই পরীক্ষায় আমি ০-এর বেশি পেতাম না (কিন্তু নিজে নিজে অঙ্ক করার ফলে এর উপকার আমি আজ পাচ্ছি)।

৩. ক্লাস এইট জেএসসির পরীক্ষা, এ সময় প্রশ্ন ফাঁস হতো। তবে প্রশ্ন ফাঁসের পদ্ধতি ছিল খুবই অদ্ভুত। পরীক্ষার ২-৩ ঘণ্টা আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়। এ প্রশ্ন দুই ধরনের স্টুডেন্ট নিত। এক. যারা কিছুই পারে না, দুই. পড়ালেখায় ভালো, রোল ১, ২, ৩-রা। যাদের অভিভাবকের কাছে পড়ালেখা সব! এমসিকিউ পরীক্ষায় সব উত্তর পাওয়া যেত, কিন্তু কেউ প্রশ্ন জানত না। সবাই শুধু উত্তরটা জানত; যেমন ১-২-৩-৪-এর আনসার ক-খ-গ। কৃষি শিক্ষা পরীক্ষার দিনে সম্পূর্ণ প্রশ্ন ফাঁস হয়। যেহেতু আমি ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম না, শুধু আমার কাছে প্রশ্ন নাই। সবাই মহাখুশিতে পরীক্ষা দিয়ে এলো, শুধু আমি পেলাম দীর্ঘশ্বাস।

৪. ক্লাস নাইন-টেন শুধু ক্লাসের শিক্ষকদের কাছে না পড়ার কারণে কখনোই ব্যবহারিকে ফুল মার্ক পেতাম না।

৫. এসএসসি পরীক্ষায় স্যাররা বলে দিলেন, কেন্দ্রে গিয়ে কিছু টাকা দিলে ব্যবহারিকে ফুল মার্ক দিয়ে দেয়। সবার অভিভাবক টাকা দিয়ে দিলেন। আমিও দিলাম। (আমি কখনও ভাবতেও পারি না এক শিক্ষকের কথায় আরেক শিক্ষককে ঘুষ দেওয়ার জন্য সবার মা-বাবা ৫০০ টাকা দিতে পারেন)। আমিও পরদিন সেই ৫০০ টাকার একটি নোট স্যারকে দিয়ে দিলাম। স্যার খুশি হয়ে বললেন, তোমার যা মন চায় সেই ব্যবহারিক একটি লিখ। সবাই মিলে গল্প করতে করতে নিচে খাতা রেখে ব্যবহারিক খাতা দেখে তুলে দিলাম। এটাই নাকি স্বাভাবিক! সব কেন্দ্রে নাকি এই হয়! এভাবে সেসব ব্যবহারিক পরীক্ষায় দিয়ে দিলাম। আইসিটি পরীক্ষা না দিয়েও ফুল মার্ক পেয়ে গেলাম। কোনো মৌখিক পরীক্ষা ধরল না। এক শিক্ষকের কথায় অন্য শিক্ষককে একজন ছাত্র যখন ঘুষ দেয়, তখন তা জাতিকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট নয় কি?

৬. এরপরের ঘটনা কলেজে ভর্তি নিয়ে। দেশের এক নম্বর বয়েজ কলেজ (যে কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে টিকতে হয়)। সেই কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। টিকে গেলাম। ভাইভাতে ডাক পড়ল। ভাইভা দিলাম। কিন্তু আমি টিকলাম না। অনেকে বলল, কিছু টাকা কিংবা ওপর থেকে ফোন দিলে ভর্তি হতে পারবা। আমারই এক সহপাঠী পরীক্ষায় না টিকেও সে শুধু ক্ষমতা আর টাকার জোরে সেই কলেজের স্টুডেন্ট। আর আমি পেলাম দীর্ঘশ্বাস।

এই যদি হয় দেশের অবস্থা, তাহলে এই দেশে সাহেদ, সাবরিনা কেন তৈরি হবে না? যখনই মনে হয় আমি শিক্ষককে ঘুষ দিয়ে এসেছি, তখন লজ্জায় কুঁকড়ে যেতে মন চায়। আরও অনেক ঘটনা হয়তো বলার আছে কিন্তু বললাম না। যখন এসব কথা মনে হয় তখনই দীর্ঘশ্বাস ফেলতে মন চায়। আমি নিজে প্রতিজ্ঞা করেছি কখনও আর দুর্নীতি করব না। কিন্তু যখন দেখি সবাই মহাউৎসাহে দুর্নীতি করছে, তখন এই দেশ নিয়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয় আমি একা কীই-বা করতে পারব?

স্যার এই দীর্ঘশ্বাস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? আশা করি উত্তর দেবেন

... শিক্ষার্থী, একাদশ শ্রেণি... (নাম-পরিচয় গোপন রাখবেন)।'

ছেলেটি কী করবে আমার কাছে জানতে চেয়েছে, আমি তাকে বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। এই দেশে লেখাপড়ার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এরকম লাখ লাখ মানুষ রয়েছে, তাদের একজনও কি ছেলেটাকে কিছু বলতে পারবে? পারবে না।

পৃথিবীতে সব সমস্যারই একটা সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়, এই সমস্যাটারও একটা সমাধান বের করা যাবে কিন্তু তার আগে সমস্যাটা যে আছে সেটা মেনে নিতে হবে। আমাদের দেশে আমরা সমস্যা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ভান করি কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু একটা শিশুকে যদি অভিভাবক এবং শিক্ষকরা মিলে বুঝিয়ে দিই অন্যায় করার মাঝে কোনো দোষ নেই, শুধু তাই নয়- তাকে অন্যায় করার কায়দা-কানুন শিখিয়ে দিই, অন্যায় করতে সাহায্য করি তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে? এই দেশে যখন কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে তখন সেটি যে কত বড় একটা ফাঁকা বুলি, সেটা কি কেউ খেয়াল করেছে?

এর ভেতরেও আমি আশাবাদী হওয়ার চেষ্টা করি, কল্পনা করি ছোট একটা শিশু শিক্ষক আর অভিভাবকের অবাধ্য হওয়ার সাহস পায় না, না বুঝেই একটা অন্যায় করে ফেলে। যখন সে বড় হবে, তার নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি হবে, তখন তারা সাহসী হতে শিখবে, সৎ হতে শিখবে। আমাদের শুধু একটা পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে, যেন নতুন প্রজন্ম সেই স্বপ্ন দেখার সুযোগ পায়, সাহস পায়।

শিক্ষা-সংক্রান্ত কিছু দেখলে আমি সেটা জানার চেষ্টা করি। পত্রপত্রিকায় দেখেছি, যেহেতু ২০১০ সালের শিক্ষানীতিটি প্রায় ১০ বছরের পুরোনো, তাই সেটাকে আধুনিকায়ন করার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। খবরটা পড়ে আমি একটুখানি কৌতুক অনুভব করেছি। সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে এই শিক্ষানীতিটা করা হয়েছিল, ঘটনাক্রমে আমিও তার একজন সদস্য ছিলাম। সেই হিসেবে শিক্ষানীতির কিছু কিছু খুঁটিনাটি আমার এখনও মনে আছে। গত ১০ বছর থেকে এই দেশের শিক্ষা কার্যক্রম দেখে দেখে আমি টের পেয়েছি শিক্ষানীতি আসলে কাগজে লেখা কিছু ভালো ভালো কথা ছাড়া আর কিছু নয়। শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর সময় শিক্ষানীতিতে কী লেখা আছে, সেটা কেউ ভুলেও পড়ে দেখে না। বাস্তবতার সঙ্গে এই শিক্ষানীতির কোনো যোগাযোগ নেই। একটা ভালো শিক্ষানীতি মানে বড়জোর কিছু ভালো স্বপ্ন; এ ছাড়া আর কিছু নয়।

আমি একটা উদাহরণ দিই। ক'দিন আগে কোনো একটা সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর শিক্ষানীতিতে পঞ্চম শ্রেণি এবং অষ্টম শ্রেণিতে পিইসি ও জেএসসি এই দুটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল। আসলে সেটি সত্যি নয়, সেই কমিটির পক্ষ থেকে যে শিক্ষানীতিটি অনেক বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিল (এবং আমি সিলেট থাকি বলে সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারিনি) সেই শিক্ষানীতিতে লেখা ছিল :'প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং তৃতীয় থেকে সব শ্রেণিতে অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা চালু থাকবে। পঞ্চম শ্রেণি শেষে সবার জন্য উপজেলা/পৌরসভা/থানা (বড় বড় শহর) পর্যায়ে স্থানীয় সমাজ-কমিটি ও স্থানীয় সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণি শেষে বিভাগভিত্তিক পাবলিক পরীক্ষা হবে। এই পরীক্ষাটি প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা নামে পরিচিত হবে।'

অর্থাৎ আমাদের শিক্ষানীতিতে স্পষ্ট লেখা ছিল, শুধু অষ্টম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা হবে। পঞ্চম শ্রেণিতে মোটেও পাবলিক পরীক্ষা নয়, শুধু স্থানীয় পরীক্ষা। শুধু তাই নয়, যেহেতু প্রাইমারি লেখাপড়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, তাই অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার নাম 'প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা'।

শিক্ষানীতিতে দ্বিতীয় পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণিতে, এভাবে :'দশম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা আঞ্চলিক পর্যায়ে অভিন্ন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে এবং এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি দেওয়া হবে। (বিস্তারিত অধ্যায় ২১)। দ্বাদশ শ্রেণির শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং এর নাম হবে মাধ্যমিক পরীক্ষা।'

অর্থাৎ ২০১০ সালের শিক্ষানীতির প্রস্তাবে মাত্র দুটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল, মোটেও এখন যেভাবে হচ্ছে সে রকম চার-চারটি পাবলিক পরীক্ষা নয়। শিক্ষানীতির কমিটিতে আমরা যারা ছিলাম তাদের নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়নি যে, আমরা বলব স্কুল-কলেজে থাকতে থাকতেই একজন শিক্ষার্থীকে চার-চারটা পাবলিক পরীক্ষা দিতে।

তবে শিক্ষানীতিটি যখন পাস করা হয়, তখন অনেক কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল। কমিটির অন্য সদস্যরা এই পরিবর্তনের কথা জানতেন কিনা আমি জানি না, আমি জানতাম না। একজন অজ্ঞ মানুষের মতো আমি ধরেই নিয়েছিলাম, আমরা যেটা জমা দিয়েছি সেটাই হবে শিক্ষানীতি। যেহেতু দশম শ্রেণির পরীক্ষাটি পাবলিক পরীক্ষা না হয়ে একটা আঞ্চলিক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল; সে জন্য আমরা অষ্টম শ্রেণিতে একটা পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেছিলাম। কিন্তু শিক্ষানীতি পাস করার সময় দশম শ্রেণি এবং অষ্টম শ্রেণি দুটিই পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে থেকে গেল। আমাদের দেশে পরীক্ষাকে সবাই ভালোবাসে। সবার ধারণা, যত বেশি পরীক্ষা তত ভালো লেখাপড়া।

কাজেই শিক্ষানীতি পাস হলো এভাবে :'প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং তৃতীয় থেকে সব শ্রেণিতে ত্রৈমাসিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা চালু থাকবে। উপজেলা-পৌরসভা-থানা (বড় বড় শহর) পর্যায়ে সবার জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অষ্টম শ্রেণি শেষে আপাতত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা নামে একটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং এই পরীক্ষা সংশ্নিষ্ট শিক্ষা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হবে।'

অর্থাৎ পাস করা শিক্ষানীতিতে স্পষ্ট লেখা আছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পরীক্ষা নেই কিন্তু বাস্তবে একেবারে শিশু শ্রেণি থেকে পরীক্ষা শুরু হয়। যত পরীক্ষা, শিশুদের যত কষ্ট সবার তত আনন্দ! আমাদের পরামর্শ ছিল তৃতীয় শ্রেণি থেকে শুধু অর্ধবার্ষিক আর বার্ষিক পরীক্ষা, শিক্ষানীতি পাস করার সময় সেখানে বাড়তি একটা ত্রৈমাসিক পরীক্ষা যুক্ত হলো। সবাই জানে বেশি পরীক্ষা মানে বেশি লেখাপড়া, শিশুদের কষ্ট হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে কে মাথা ঘামায়?

সে জন্য আমি বলছিলাম, শিক্ষানীতি একটা কাগজে লেখা কিছু ভালো ভালো কথা ছাড়া আর কিছু নয়। তাই পাস করা শিক্ষানীতিতে পঞ্চম শ্রেণিতে আঞ্চলিক পরীক্ষার কথা বলা হলেও বাস্তবে পিইসি নামে বিশাল দক্ষযজ্ঞ করে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। তখন অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করার চেষ্টা করা হয়, ছোট ছোট শিশুর জীবনকে বিষাক্ত করে দেওয়া হয়।

আমি মাত্র একটা উদাহরণ দিয়েছি, কিন্তু পুরো শিক্ষানীতি নিয়ে এ রকম আরও অনেক উদাহরণ আছে। যারা কল্পনা করছেন নতুন একটা শিক্ষানীতি করার সঙ্গে সঙ্গে এই দেশের লেখাপড়ার মাঝে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়ে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তারা আসলে বাস্তব জগৎ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। যে শিক্ষানীতি মানতে হয় না এবং মানা না হলে কারও কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না, সেটা পরিবর্তন করে কী লাভ?

এ দেশে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করতে গিয়ে শিশুদের দুর্নীতিতে হাতেখড়ি হয়, যদি তাদের লেখাপড়া করতে না হতো তাহলে সেই শৈশবে তাদের পিঠে 'দুর্নীতিবাজ'-এর সিলটি পড়ত না। সারাজীবন এই অপমানের গল্গানি তাদের বহন করতে হতো না।

তারপরও আমি আশা করে থাকি এই কলুষিত পরিবেশের মাঝেও আমাদের কিছু সোনার টুকরো ছেলেমেয়ে থাকবে, যারা এই ক্লেদাক্ত পরিবেশেও খাঁটি মানুষ হয়ে বড় হবে। যাদের দেখে আমরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখব।

আমার স্বপ্ন দেখার মাঝে কে আমাকে বাধা দেবে?

২ সেপ্টেম্বর ২০২০

লেখক : মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কথাসাহিত্যিক, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053269863128662