শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হলে অর্ধেক সমস্যার সমাধান হবে - Dainikshiksha

শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হলে অর্ধেক সমস্যার সমাধান হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

'দেশের শিক্ষকদের নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। তবে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন হলে তাদের অর্ধেক সমস্যার সমাধান হবে। তাই এই নীতি বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।'

আলাপকালে এসব কথা বলেন প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ এম এ আউয়াল সিদ্দিকী। দেশের শিক্ষক আন্দোলনে পরিচিত মুখ তিনি। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি-২০১০-এর সদস্য ছিলেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সামনে থেকে বেসরকারি শিক্ষকদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শুক্রবার (২৪ মে) দৈনিক সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাব্বির নেওয়াজ।

বর্তমানে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। নিজের শিক্ষক সংগঠন সম্পর্কে আউয়াল সিদ্দিকী বলেন, ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার আগে তদানীন্তন বঙ্গপ্রদেশে ১৯২১ সালে 'নিখিল বঙ্গ শিক্ষক' নামে বেসরকারি শিক্ষকদের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

ভারত বিভক্তির পর এই শিক্ষক সংগঠন দুটি ভাগ হয়। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানে এর নামকরণ করা হয় 'পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষক সমিতি'। এরপর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অধ্যক্ষ মুহম্মদ কামরুজ্জামান মুজিবনগরে অবস্থানরত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের সংগঠিত করে 'বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি' প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নবপর্যায়ে অধ্যক্ষ মুহম্মদ কামরুজ্জামান এই শিক্ষক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নেতাদের মধ্যে বিশেষ অবদান ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন প্রয়াত সভাপতি অধ্যক্ষ মুহম্মদ কামরুজ্জামান ও প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক হেনা দাস। বর্তমানে এই শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জামান। 

শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে অধ্যক্ষ আউয়াল সিদ্দিকী বলেন, বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ প্রভাষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অযৌক্তিক অনুপাত প্রথা রয়েছে। এতে শিক্ষকরা পদোন্নতিবঞ্চিত হন। এ ছাড়াও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের মধ্যকার বেতন-ভাতা বৈষম্য, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের উচ্চতর বেতন-টাইম স্কেলপ্রাপ্তিতে সরকারি স্থগিতাদেশ, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য পেনশন চালু না করা, সরকারি বিধি মোতাবেক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত না করা, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো যুগোপযোগী না করা, শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের উদ্যোগ না নেওয়া, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত না করাসহ আরও অনেক সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম যে ছয়টি সমস্যার কথা বলেছি, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা একান্ত প্রয়োজন।

এসব সমস্যা সমাধানে তাদের শিক্ষক সংগঠনের নেওয়া উদ্যোগ ও কর্মসূচি এবং এর সমাধান সম্পর্কে প্রবীণ এই শিক্ষক নেতা বলেন, তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, শিক্ষক-কর্মচারী মহাসমাবেশ, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকসহ নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তাদের কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। এগুলো হলো- ১. বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ প্রভাষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনুপাত প্রথা বাতিল করা; ২. বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেলের অনুরূপ করা; ৩. বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের উচ্চতর বেতন-টাইম স্কেলপ্রাপ্তির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ প্রভাষকদের চাকরি ৮ বছর পূর্তিতে বেতন গ্রেড ৯ থেকে ৭ গ্রেডে এবং পরবর্তী ৬ বছরপূর্তিতে বেতন গ্রেড ৭ থেকে ৬ গ্রেডে করা।

একই সঙ্গে বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি ৮ বছরপূর্তিতে উচ্চতর বেতন গ্রেড-টাইম স্কেল এবং পরবর্তী ৬ বছরপূর্তিতে সপ্তম গ্রেড-টাইম স্কেলে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া; ৪. শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা প্রদানের পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ পেনশন চালু করা; ৫. সরকারি বিধি মোতাবেক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা; ৬. পাঠদান ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো দ্রুত যুগোপযোগী করা; ৭. সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করা এবং ৮. জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা হোক। 

টাঙ্গাইলে জন্ম নেওয়া এম এ আউয়াল সিদ্দিকী দীর্ঘদিন রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। শিক্ষকতা পেশায় চার দশকের বেশি সময় নিয়োজিত তিনি। দেশের শিক্ষক আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরে এই শিক্ষক নেতা বলেন, শিক্ষক সমাজ সুদূর অতীত থেকে আজ পর্যন্ত ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে বিভিন্নভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।

কখনও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন, কখনও ক্লাস বর্জনসহ রাজপথের আন্দোলন। আন্দোলন কখনও সফল হয়েছে, কখনও আংশিক সফল হয়েছে, কখনও সফল হয়নি। আবার কখনও আন্দোলন অনিবার্য কারণে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তবে দাবি আদায়ের আন্দোলন থেকে কখনও একেবারে সরে আসেনি। এখনও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চলমান আছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব সরকার। শিক্ষকদের বেশ কয়েকটি দাবি সরকার ইতিমধ্যে পূরণও করেছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাই। তিনি বলেন, এর বাইরে সরকারকে আরও কিছু কাজ করতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষাদানের জন্য যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

এ ছাড়া শিক্ষানুরাগী, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা এবং ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ করা, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ ও জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035829544067383