শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, কোভিড-১৯ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এক ধরনের সংকটে ফেলেছে। প্রতিটি সংকটই সম্ভাবনার নতুন দিক উন্মোচন করে। করোনা মহামারী শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘ই-লার্নিং’ কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য নতুন একটি দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বর্তমান সময়ে ‘ই-লার্নিং’ অত্যন্ত কার্যকর এবং সামনের দিনগুলোতে এটি আরো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের বর্তমান শিক্ষানীতি ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে, সেটাকে যুগোপযোগীকরণ এবং সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষানীতিতে ই লার্নিং কে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।
তিনি আরো জানান, এদেশের মানুষ অত্যন্ত প্রযুক্তি বান্ধব, যার কারণে বিশেষকরে শিক্ষাকার্যক্রমে ই-লার্নিং-এর ব্যবহার বৃদ্ধিতে আমাদের জন্য খুব বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে না। তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে ক্লাসরুমে সরাসরি শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে ‘ই-লার্নিং’ কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে ‘ই-লার্নিং’ কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা রাখবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নানান প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে এবং কোভিড মহামারী মোকাবেলায় এদেশের মানুষ সাহসিকতার পরিচয় দিবে।
তিনি জানান, সামনের দিনগুলোতে কি ধরনের দক্ষ লোকবল প্রয়োজন হবে, তার একটি প্রাক নির্বাচনের মাধ্যমে সে অনুযায়ী আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম, অবকাঠামো এবং শিক্ষকবৃন্দের দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা আরো সম্প্রসারণে মানসিকতা একটি বড় বাধা বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ই-লার্নিং’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আজ এ কথা বলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ইউনেস্কো’র হিসাব অনুযায়ী কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা বিশ্বে ১.৩৭ বিলিয়ন শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, সামাজিক দূরত্ব রক্ষার জন্য প্রথাগত শিক্ষাদান কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ায় নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে ই-লার্নিং নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে এবং ই-লার্নিং কে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতীয় শিক্ষা নীতিতে ‘ই-লানিং পলিসি’ অন্তর্ভূক্তকরণ, সারাদেশে নির্ভরযোগ্য হাই স্পিড ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ভ্যাট ও ট্যাক্স হ্রাসকরণ, ই-লার্নিং-এর বিকাশে এর সঙ্গে যুক্ত স্টার্টআপগুলোকে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া এবং ব্যাংক অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরী।
তিনি বলেন, অবকাঠামো ও ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পিছিয়ে রয়েছে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, শিল্পখাতের চাহিদা অনুযায়ী তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রস্তুত করতে কারিগরি শিক্ষায় আরো বেশি হারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি জানান, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ঙঊঈউ)-এর ভুক্ত দেশগুলোতে কারিগরি শিক্ষায় গড় অংশগ্রহণের হার ৪৫ শতাংশের উপরে, সেখানে বাংলাদেশে ১৫ শতাংশেরও কম। এমতাবস্থায় কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণ এবং আগ্রহ বৃদ্ধি করতে একে সহজলভ্য করা প্রয়োজন বলে, মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি এবং এ ক্ষেত্রে ই-লার্নিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।