শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর। প্রথমে নিজ বাড়ি এবং তারপর থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে শিশুর মানবিক আচরণ গঠনের চর্চাকেন্দ্র। এখান থেকেই দেশপ্রেমের সুপ্ত বীজ জাগরিত হয়। ব্যক্তির আদর্শ ও চেতনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই খুব ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। শিশু বুঝতে শেখে, পরিবার ও দেশের প্রতিও তার দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের জীবনের একটি বড় সময় আমরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পার করি। তাই সেখান থেকেই মূল্যবোধ জাগরণের শিক্ষা পাই। দেশকে ভালোবাসার প্রেরণা পাই।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই জাতীয় সঙ্গীত বাধ্যতামূলকভাবে গাইতে হবে এবং শপথ নিতে হবে। শপথের প্রতিটি বাক্যে দেশের প্রতি, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ পাবে। শিশুরা যদি একসঙ্গে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গায়, একসঙ্গে শপথবাক্য পাঠ করে, একসঙ্গে জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানায়- সেটা হয়ে ওঠে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।
যদি প্রতিদিন এসব করা বাধ্যতামূলক নাও হতো, তাহলেও মনে হয় এটা প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চর্চা করানো উচিত। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই প্রতিদিন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী জাতীয় সঙ্গীত সঠিকভাবে গাইতেও পারে না। অনেকেই অর্ধেক অংশ জানে। অথচ জাতীয় সঙ্গীত হল একটি দেশের ভালোবাসার প্রকাশ।
বিশ্বকাপ ফুটবল বা ক্রিকেট চলাকালীন খেলা শুরু হওয়ার আগে যখন দু’দল মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজ দেশের পতাকা নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গায়, তখন গ্যালারির সবাই তাদের সঙ্গে সুর মেলায়। তখন যে অনুভূতি তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। দেশকে ভালোবাসার শিক্ষা পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে।
কিন্তু আমাদের দেশে অনেকটা অলসতার কারণেই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত নিয়মিত চর্চা করা হয় না। যেহেতু প্রতিনিয়ত মনিটর করার কেউ থাকে না, তাই এতে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু এটা শুধু নিয়মভঙ্গজনিত অন্যায় নয়, ছাত্রছাত্রীদের দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা থেকে দূরে রাখা আরও বড় ধরনের অন্যায়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশের স্বাধীনতা এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষাস্তর থেকেই দেশপ্রেমের বীজ রোপণ করতে হবে। তাই প্রতিটি বিদ্যালয়ে নিয়মিত সমাবেশ করাতে হবে। আর এ কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত মনিটর করতে হবে। বিদ্যালয়ে ক্লাস ঠিকমতো হচ্ছে কিনা বা কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা, এটা যদি জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়, তাহলে স্কুলে নিয়মিতভাবে জাতীয় সঙ্গীত বা শপথ পাঠ হয় কিনা সেটাই বা মনিটর করা যাবে না কেন? এটা করতে হবে।
দেশের স্বার্থে এ মহৎ কাজটি সঠিকভাবে সম্পাদন করতে হবে। এই ১৫-২০ মিনিট সময় যদি ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে দাঁড় করানো যায়, তাহলে সারা দেশের মানুষের মধ্যে এক সময় একসঙ্গে দেশের পক্ষে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হবে। এগিয়ে যাবে দেশ। তাই নিজ দায়িত্বেই শিক্ষকদের প্রতিদিনের সমাবেশের ওপর জোর দিতে হবে।