শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতির হিসাব হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা পাবে নতুন বই - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতির হিসাব হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা পাবে নতুন বই

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে কাঁচা ঘরবাড়ি ব্যাপকভাবে বিধ্বস্ত হওয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বইপত্রও নষ্ট হয়েছে। ভারী বর্ষণে ভিজে গেছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশের সব বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এতে বেশ বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। তবে আশার কথা, বইপত্র নষ্ট হওয়া ছাত্রছাত্রীদের তাৎক্ষণিক বই দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাফার স্টকে কিছু বই রাখা হয় এ কারণেই। সংশ্নিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকেই এসব বই সংগ্রহ করতে পারবেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা সাংবাদিকদের বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দৈব-দুর্বিপাকের কথা চিন্তা করেই সরকার প্রতি বছর মোট বইয়ের পাঁচ শতাংশ অতিরিক্ত ছাপিয়ে মজুদ রাখে। এ বছরও মোট ৩৫ কোটি বইয়ের বাফার স্টক আছে। এসব বই জেলা পর্যায়েই মজুদ আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা থেকে তাকে একসেট বই দিয়ে দেওয়া হবে। এসব বই বিতরণে কোনো আলাদা অনুমোদন লাগে না বিধায় সময়ক্ষেপণ হবে না। চেয়ারম্যান বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে যত শিক্ষার্থীই ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন, বই চাইলে প্রত্যেককেই নতুন বই দেওয়া যাবে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ শুরু করেছে সরকার। শিক্ষা এবং  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ জন্য পৃথক উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের (রুটিন) দায়িত্বে থাকা ড. অরুণা বিশ্বাস সোমবার বলেন, ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) বলা হয়েছে। তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাদের কাছ থেকে আমরা সার্বিক চিত্র পেয়ে যাব। এরপর সেগুলো মেরামত ও সংস্কার করার নির্দেশ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সামনে বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষা রয়েছে। সেটি মাথায় রেখেই দ্রুত সংস্কার করা হবে।

তবে, ক্ষতিগ্রস্থ স্কুল-কলেজের হিসেবে প্রকৌশলীরা সব সময় ফাঁকি দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যত বেশি মেরামত ততবেশি বরাদ্দ, ততবেশি টাকা। এমন কথা শিক্ষাখাতের সবার মুখে মুখে। 

মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা নিজ নিজ উপজেলার তথ্য দেবেন। বিশেষ করে ১৪টি জেলার শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে তারা ক্ষয়ক্ষতির বিশদ প্রতিবেদন চেয়েছেন। জেলাগুলো হলো- চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, বুলবুলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পেলে সেগুলোর সংস্কারে এলজিইডিকে বলা হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদীর বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানাতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, উপকূলীয় এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির সার্বিক চিত্র এখনও পাওয়া যায়নি। প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বেশ কিছু বিদ্যালয়ের কাঁচা ঘর থাকা অংশটুকু ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। টিনের চাল উড়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিদ্যালয়ের ওপর গাছপালা উপড়ে পড়েছে। তবে পাকা ভবনগুলোর ক্ষয়ক্ষতি ততটা নয়।

ডিপিইর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার উপপরিচালক নুরুল আলম বলেন, 'বুলবুলে'র ক্ষতির পুরো চিত্র এখনও তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের তিন শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদ ও দেয়াল ভেঙে পড়া, বেড়া উড়ে যাওয়া, মাটির তৈরি ঘর ভেঙে পড়া, ক্লাসরুমের ভেতরে পানি ঢুকে পড়া ও মেঝের ক্ষতিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও জানান, সাধারণত যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলীয় এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য কোনো দুর্যোগে এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা দ্রুত মেরামত ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডিপিই সেভাবেই কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো মেরামত করতে ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এলজিইডির আওতায় ম্যানেজিং কমিটির তত্ত্বাবধানে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

দৈনিক শিক্ষার বরিশাল প্রতিনিধি তন্ময় তপু জানান, বরিশালে ঘুর্নিঝড় বুলবুলের আঘাতে ৬০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৫০টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আংশিক ক্ষতি হয়েছে এবং ১০টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও কয়েক হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।  সোমবার (১১ নভেম্বর) বরিশাল জেলা প্রশাসন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

আরও জানা যায়, বরিশালের ৬৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিলো ১ লক্ষ ২০ হাজার। এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়। বরিশালে রোপা উফশী আমন ধান ১ লক্ষ হেক্টর, খেসারী ডাল ২ হাজার হেক্টর, সবজি ৪ হাজার হেক্টর ফসলী জমির ক্ষতি হয়েছে। 

এছাড়াও ৩ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়েছে এবং সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ৫০ টি ঘরের। বাঁধের ক্ষতি হয়েছে ২২ কিলোমিটার, ১ লক্ষ ছোট বড় গাছের আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের ফলে মৎস্য ঘের ও পুকুর ৪৩৫টির ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে ১২০ কিলোমিটার।

 

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034728050231934