প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাসিক শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে থাকে। এই বৃত্তি পাওয়ার শর্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীকে গরিব ঘরের সন্তান হতে হবে, মেধাবী হতে হবে (যার প্রমাণ জিপিএ)। কিন্তু বহু শিক্ষার্থী আছে যারা গরিব ও মেধাবী হয়েও জিপিএর মারপ্যাঁচে বৃত্তি পেতে বঞ্চিত হয়। এর প্রধান কারণ—এক শিক্ষার্থীর একাধিক ব্যাংক থেকে বৃত্তি পাওয়া। সে তার ভালো জিপিএ নিয়ে যে কয়টি ব্যাংকে আবেদন করে তার সবগুলোতে বৃত্তির জন্য মনোনীত হয়।
ফলে তার চেয়ে জিপিএ কম থাকা ছাত্রটা বৃত্তি পায় না। যদিও ব্যাংকগুলোর বৃত্তি ফরমে অন্য কোনো ব্যাংক থেকে বৃত্তি পাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যারা কোনো এক ব্যাংক থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকে তাদের আবেদন করতে নিষেধ করেছে। কিন্তু তারা আবেদন করছে এবং বৃত্তিও পাচ্ছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। আমার জানামতে, এক শিক্ষার্থী দু-তিনটা ব্যাংক থেকে বৃত্তি পায়। আরেক শিক্ষার্থীর বাবা কুয়েত প্রবাসী হওয়ার পরও একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে থাকে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে এই বিষয়ে তথ্যের আদান-প্রদান থাকলে কোনো গরিব ছাত্র এই মহামূল্যবান শিক্ষাবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হতো না। অনেকে পিতার আয়ের সনদ নকল করে আয় কমিয়ে এসব ব্যাংক থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকে। আমি বলতে চাই, বৃত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যদি সরেজমিনে শিক্ষার্থীর পারিবারিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে, তাহলে হয়তো কোনো গরিব শিক্ষার্থী এই শিক্ষাবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। কারণ এলাকার চেয়ারম্যান বা গেজেটেড কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা সনদ যে ঠিক হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই স্বাক্ষর অনায়াসেই নেওয়া যায়। কেউ মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা শিক্ষাবৃত্তি পাবে আর কেউ এক টাকাও পাবে না এমন অসমতা তো হতে পারে না। তাই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, গরিব শিক্ষার্থীদের হতাশামুক্ত জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য শিক্ষাবৃত্তিদানে যথাযথ মূল্যায়ন করুন।
মো. ছারোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক