পাকিস্তান আমলেও এই দেশে শিক্ষাব্যবস্থা যেমন ছিল, এখনো সেই তুলনায় খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। আমরা কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষার চাইতে এখনো তাত্ত্বিক শিক্ষায় বেশি জোর দিই। যেমন বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর কথা ধরুন, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন যিনি পড়ছেন, তার জ্ঞানটাও তাত্ত্বিক। বাস্তবে এটা প্রয়োগ হচ্ছে না। এই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করা অনেক ছেলেমেয়ে চাকরি পাচ্ছে না। এর কারণ হলো স্কিল ডেভেলপমেন্টের অভাব। এই স্কিলের বিষয়টা এমন না যে যন্ত্রপাতি হাতে কাজ করা জানতে হবে। আপনি যদি ইতিহাসের ছাত্র হন, তবে আপনাকে ইতিহাস লিখতে জানতে হবে। আপনি মনোবিজ্ঞান পড়েছেন, অথচ কাউন্সিলিং জানেন না, তাহলে সেটা বৃথা। সব বিষয়েরই ব্যবহারিক প্রয়োগ আছে, তাত্ত্বিকের পাশাপাশি সেগুলো আয়ত্ত করতে হবে। একেই আমরা বলি স্কিল ডেভলোপমেন্ট বা দক্ষতার উন্নয়ন। রাতারাতি শিক্ষাব্যবস্থা বদলাবে না, তবে এখন ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। স্কিলকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। একটা হলো হার্ড স্কিল, অন্যটা সফট স্কিল। যেমন একজন ব্যক্তি একটা প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। টেলিফোন কীভাবে রিসিভ করতে হবে, অন্যদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হবে সেটা তাকে আয়ত্ত করতে হবে। এটা হার্ড স্কিল। আবার একটা ছেলে খুবই মেধাবী, কিন্তু সে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করে না, নিজেকে গুটিয়ে রাখে, সেটা হলো সফট স্কিলের অভাব। আমরা সম্প্রতি লক্ষ করেছি, রাস্তায় পথচারীদেরকে জোর করেও ফুটপাত ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করানো যাচ্ছে না, এটা সফট স্কিলের অভাব। শিক্ষাব্যবস্থায় সফট স্কিলের বিষয়গুলোতেও জোর দিতে হবে। অন্যদিকে, উন্নত দেশে যিনি প্লাম্বিং বা ইলেকট্রিকের কারিগরি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাকে কেউ ছোট করে দেখে না। অথচ আমাদের দেশে মাস্টার্স পাস কাউকে এই কাজ করতে বললে সে ভাববে এতে তার সামাজিক মর্যাদা খর্ব হবে। এ ধরনের ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সব কাজকেই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি দক্ষতার উন্নয়নই তৈরি করবে কর্মদক্ষ প্রজন্ম, এভাবেই গড়ে উঠবে উন্নত বাংলাদেশ।
লেখক: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব), জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পরিষদ (এনএসডিসি)