শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পারম্পর্য কই? - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পারম্পর্য কই?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষক অভিধাটি মানবসভ্যতার সহযাত্রী। শেখাবেন যিনি, তিনিই শিক্ষক। শেখানোর বিষয়টি আদি থেকেই শুরু। এর শিকড় খোঁজা পরম বিশ্বাসীর কাজ। আমরা তার সন্ধানে যাব না। তবে কেতাবি শিক্ষাই এখানে প্রাধান্য পাবে। গ্রিক সভ্যতা অনেক স্মরণীয় শিক্ষকের নাম জানার সুযোগ আমাদের করে দিয়েছে। প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা কম নয়। তাঁদের আংশিক পরিচয় পেয়ে আমরা শিক্ষক সম্পর্কে অবহিত হই এবং প্রকৃত শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবনত হতে শিখি। এখান থেকেই ‘শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম্’ আপ্তবাক্যটি আজও টিকে আছে। রোববার (১৯ জানুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, আমরা কথায় কথায় বলি, ছাত্ররা আজকাল ‘বেতমিজ’। শ্রদ্ধা-সম্মানের পরিবর্তে চোখ রাঙায়। কথাটিতে কিছুটা বাস্তবতার ছোঁয়া আছে। আছে এ জন্য যে কিছু ‘পালিত’ শিক্ষার্থী নামের তরুণ ক্ষমতাধরের উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য শিক্ষককে হেনস্তা করেছে নিকট অতীতে, এমনকি এখনো। তা ছাড়া পকেটপ্রেম তো আছেই। পক্ষান্তরে তথাকথিত কিছু শিক্ষক কম যান না।

ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এবং পরিচয়ের পরিধি ব্যাপক। এ নিয়ে নতুন করে বলার কী-ই বা আছে। তবে আমাদের দেশে শিক্ষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে ছাত্রদের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য। দেশের ভবিষ্যতের জন্য জ্ঞানের উদ্ভাবক নিঃসন্দেহে নিরাসক্ত শিক্ষকসমাজ। সে জ্ঞান, সুবুদ্ধি বা সত্বুদ্ধিকে কার্যকর করার জন্য তারুণ্যের প্রয়োজন। তাই তারা সামনের কাতারে চলে আসে। পেছনে থাকেন শিক্ষক, অদৃশ্য সঞ্চালক হিসেবে। হায়, তাঁরা কোথায় হারিয়ে গেলেন!

একদা শিক্ষার বিষয়টি সর্বজনীন ছিল না। ক্ষমতাধর সামন্তপ্রধানরা যেভাবে শিক্ষাব্যবস্থা চালু রেখেছিলেন, তাতে সাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল না। ধীরে ধীরে শিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া শুরু হলো। তবে সে শিক্ষা ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’। সময়ের প্রয়োজনে কোন শিক্ষা প্রবর্তন করলে দেশ-জাতি এবং বিশ্বের মানুষ মুক্তমনে জ্ঞান লাভ করে জাগতিক সুবিধা লাভ করবে, তা ভাবা হতো না। মতবাদ বা ইজমকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। এই অচলায়তন ভাঙতে কাজ করেছে ছাত্র-শিক্ষকের সম্মিলিত প্রণোদনা। আমরা তাঁদের কীর্তিকে সম্মান না দিলেও ইতিহাস গোপনে গোপনে তার কাজ করে চলেছে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইচ্ছায় নয়, জনগণের কাম্য যে শিক্ষা মানুষকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তা-ই প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই বাঞ্ছিত রূপ কি আমাদের সামনে অধরাই রয়ে যাবে! ক্ষমতার হাতবদল হলে অবৈধ ক্ষমতাভোগীরা নিজেদের অর্থহীন শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য কিছু মতবাদী ব্যক্তির পরামর্শে শিক্ষানীতি প্রবর্তন করেছে। জনগণের পূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রয়োজনে কাজে আসেনি।

দেশভাগের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় পৌনে ১০০ বছরে মোটা দাগে বেশ কয়েকটি শিক্ষা কমিশন প্রবর্তিত হয়েছে। পাকিস্তানের যুগে ষাটের দশকে শিক্ষার সেসব নীতি নিয়ে গণ-অসন্তোষ দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছে পথে। এতে প্রাণহানি ঘটেছে। পর্যবেক্ষকরা ভাবছেন এতেও জীবনমুখী শিক্ষা কার্যক্রম সহজ পথে পায়নি। পুরনো চিন্তা নতুন মোড়কে চলে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির জবাবদিহি কাউকে করতে হয়নি। আসলে এসবের জবাবদিহি ক্ষমতাধরদের তাত্ক্ষণিক করতে না হলেও মহাকাল কাউকে ছাড় দেয় না। একে উলুখড়ের প্রাণ মনে করলেও এ বিসর্জন নিরর্থক যায় না।

স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে ওলটপালট তো কম হলো না। শিক্ষার্থীরা কোথায় যেন ‘বুঁদ’ হয়ে আছে। শিক্ষার উপরিকাঠামো নিয়ে মাঝেমধ্যে মোসাহেবদের উদয় হয়। কিছু পণ্ডিতাভিমানী ব্যক্তি নতুন নতুন পন্থা প্রবিষ্ট করে ছাত্র-শিক্ষক সবার মাথা খান। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মেধার অপচয় কম হয় না।

তারুণ্য এবং বার্ধক্যের সংঘাত চিরকালই ছিল। অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই বলে সময়কে দোষ দিয়ে কী লাভ? বলা হয় সে রাম নেই, অযোধ্যাও নেই। প্রবাদটি অলীক নয়। কেননা মানুষ অতীতের অনেক কিছুর কথা বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করতে চায়। তাই বলে সব কিছু ভালো ছিল এমন দিব্যি দেবে কে? আমাদের শিক্ষা নিরঙ্কুশ সরলরৈখিক ছিল, তা অবশ্য বলা যাবে না। কিছু শিক্ষা নিয়ে মাতামাতি, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ইত্যাদির বেড়াজালে শিক্ষার্থী কম নাজেহাল হয়নি। শিক্ষার্থীদের শেখার নামে ভেজাল কম ছিল। তবে অবৈধ পন্থা রোধ করা যায়নি। এতে কিছু অসাধু শিক্ষকের ইন্ধন ছিল। এসব ফাঁকফোকর বন্ধ করার পন্থা চলছেই, অথচ সুষ্ঠু জ্ঞান বিতরণের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে না। এ নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক নীরব। শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনেকে ব্যক্তিস্বার্থের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাই নিকট অতীতের মতো জাতীয় শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে আসছেন না। এর মূলে রয়েছে অনৈতিক সম্পদ প্রাপ্তির ওপর প্রলুব্ধ থাকা। তরুণরা হয়তো কিছুটা বিচ্যুত হতে পারে, তাই বলে শিক্ষক! শিক্ষকদের অনেকে এখন নিজের তরক্কির জন্য দুর্বৃত্তদের সহযোগী হচ্ছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হানাহানি হয়নি তা নয়, তবে তা ছিল মতবাদের প্রাধান্য নিয়ে। এখন মতবাদ ঘুমে আচ্ছন্ন। অর্থবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এরা ক্ষমতার পেছনে ছোটে। নীতি-আদর্শ কতটুকু সক্রিয় তা তুলাদণ্ড দিয়ে মাপলেও তার অস্তিত্ব পাওয়া কঠিন। নগদ নারায়ণের জন্য, অর্থাৎ আধিপত্য বজায় রেখে সুখভোগ কত সহজে করা যায়, তা নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী অসুর সাজছে। শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ তাদের নেই। বিবেকী কিছু শিক্ষক-ছাত্র তা নিয়ে উদ্বিগ্ন; কিন্তু জেগে ঘুমানোদের জাগাবে কে? সর্বদা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের নির্লজ্জ প্রবণতা। তাই শিক্ষার কার্যকর পথ তৈরি করতে কয়জন আসছেন! শিক্ষা আন্দোলন দিবস যেন কাগুজে হয়ে গেছে—দিবস উদ্যাপনের ছড়াছড়িতে।

দুঃখ হয়, এখন ছাত্র-শিক্ষকের সুস্থ পারম্পর্যের পরিবর্তে স্বার্থ উদ্ধারের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। প্রকৃত শিক্ষক দৃশ্যপট থেকে প্রায় উধাও। দেশপ্রেমিক মেধাবীরা শিক্ষকতায় এলে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হবে না। 

লেখক : গোলাম কবির, সাবেক শিক্ষক, রাজশাহী কলেজ।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070171356201172