শিক্ষার মান এবং মানসিক বৈকল্য - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার মান এবং মানসিক বৈকল্য

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বড় নির্বোধ এবং নির্লিপ্ত সময় পার করছি আমরা। যে সময়ের বুকে দাঁড়িয়ে কেউ বলে না আমার একটা প্রশ্ন আছে কিংবা আমি এটা মানি না বা বিশ্বাস করি না। সকলের ‘তলপেট-তলদেশ’ বিশ্বাস এবং দাসত্বে পূর্ণ। আর তাই হয়ত এই তল্লাটে আর কোন শেখ মুজিব, মুনির চৌধুরী, হুমায়ূন আজাদ জন্মাবেন না। প্রতিবাদহীন সময় এবং মরা স্রোতই তার ইঙ্গিত। তবে প্রশ্ন করার সক্ষমতাই যে সৃষ্টির প্রকৃত তাগিদ সেটাই ভুলতে বসেছে এই সমাজ। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, যদিও পৌরাণিককাল থেকে শুরু করে ইতিহাস সাক্ষী, ‘ক্ষমতাবানরা বা ক্ষমতা প্রভুরা’ কখনই প্রশ্নের উত্থান এবং উত্থাপনকারীকে বরদাস্ত করেন না। আর বর্তমান যেহেতু ইতিহাসেরই ধারাবাহিক প্রবাহ, সে হিসাবেরই এক ফলাফল ‘গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ঘটে যাওয়া ঘটনা। যেখানে শোনা যায় একজন শিক্ষার্থীর প্রশ্ন উত্থানে প্রতাপশালী ভিসির রাজ্য উজাড়ের হুঙ্কার।

তবে এই ক্ষুদ্র অথচ গভীর ঘটনার একটা মৌলিক দৃশ্যপট আছে। তা হলো ওই ভিসি মহোদয় স্পষ্ট করেছেন ‘তিনি’ অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ‘শিক্ষক’ই ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষবিন্দু বা উচ্চবর্ণ। ক্ষমতা কাঠামো তাদের দখলে। কাজেই তাদের অবস্থান, শিক্ষার মান এবং মানসিক বৈকল্য নিয়ে কেউ প্রশ্ন করতে পারবেন না ! তারা অন্যায় করলেও চোখ বুজে থাকতে হবে।

উল্টোদিকে শিক্ষার্থীরা হলেন অধঃস্তন বা নিম্নবর্গ। ‘শিক্ষক’দের দয়া, উচ্ছিষ্ট এবং ভিক্ষাই তাদের টিকে থাকার স্যালাইন। কাজেই তাদের সব সময় থাকতে হবে ‘তটস্থ এবং প্রশ্নহীন জড়বস্তু’ হয়ে। এই হচ্ছে ‘মহামতি শিক্ষকগণের’ ধারণা এবং মানসিক অবস্থা। আর এ কারণেই ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি’ এ ধরনের মৌলিক প্রশ্নকারী একজন শিক্ষার্থীকেও ভিসির হেনস্থার শিকার হতে হয়।

অথচ চারদিকের অসুস্থ প্রতিযোগিতায়ও যে একজন শিক্ষার্থী এখনও প্রশ্ন করতে পারেন এটা নিয়েই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব করার কথা ছিল। শুধু তাই নয়, এই বিষয়টিকে সেলিব্রেট করলেও অবাক হওয়ার কথা ছিল না। পাশাপাশি বাকিরাও যেন প্রশ্ন করতে শেখেন সেজন্য সেই পরিবেশ রচনায় চেষ্টা করতেন। তবে সেটা হতো যদি তারা সুস্থ থাকতেন কিংবা তাদের মাঝে সুস্থ হওয়ার চিন্তা থাকত।

তবে সেই প্রশ্নকারী শিক্ষার্থীর কপালে জুটেছিল বিদঘুটে ‘পুরুষতান্ত্রিক আচরণ’ এবং গালি-গালাজ সমেত আক্রমণ।

বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় লিঙ্গভেদ এবং খুঁটিভেদে এর পরিবেশনার ধরন বদলায়।
 
অনেক নারীকে হতে হয় বিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সাইলেন্ট হেরেম তাবেদারের শিকার। ফলে কখনও কখনও তাদের কেউ কেউ চাকরির সুযোগও পেয়ে যান। যাকে পরবর্তীতে কেউ কেউ অনুসরণও করে। অন্যদিকে পুরুষ প্রার্থীর ক্ষেত্রে বিবেচ্য হয় মেরুদ-হীনতা।

আর এতেই ঘটে যোগ্যদের যথাস্থানের বিচ্যুতি। কারণ ‘জানার একটা অহম আছে’। তাই জানাশোনা বা স্পর্ধার শিক্ষার্থীরা কখনই এই প্রক্রিয়ায় শামিল হন না। তাই এঁদের বেশিরভাগই শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চলে যান অন্যান্য পেশায় বা কেউ কেউ যান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর তাছাড়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘ভিসি’ নির্বাচন করা হয় এক বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক। ফলে ওই শিক্ষকরাই বনে যান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভিসি’। আর তাতেই ঘটে দুর্ঘটনা।

আর তাই এখানে একটি মৌলিক প্রশ্ন এসে যায়। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা হয়েছেন দুর্নীতি ও মেরুদণ্ডহীনতার মাধ্যমে তাদের পেশাদারিত্ব কেমন হবে? এ প্রসঙ্গে আরেক বাস্তবতা হলো নতুন ভূমিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাকেই ‘ভিসি’ হিসেবে নিয়োগ দিতে দেখা গেছে সেই-ই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোখাত থেকে কমিশন বাণিজ্যসহ দুর্নীতি করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি ‘ভিসি নন পিডি’, অর্থাৎ কমিশন খেকো প্রজেক্ট ডিরেক্টর। যাদের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতির তদন্ত চলছে।

অন্যদিকে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) এক সংবাদ মাধ্যমে মতপ্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু, ফারসী, সংস্কৃত ও পালি এ চারটি বিভাগ নাকি প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। আমরা জানি সংস্কৃতি হলো যে কোন জাতির চিন্তাগত আচরণ। সে হিসেবে আমাদের সংস্কৃতি ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান, মিলিয়া বাওলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম’। অর্থাৎ, সকলেরটা বুঝে নিয়ে নিজেদেরটা নিয়ে এগিয়ে চলা।

কাজেই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের এত এত বিভাগ চলছে তার মাঝে হঠাৎ চারটি বিভাগ তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে এটা জানিয়ে ওই বিভাগ এবং তার শিক্ষার্থীদের এভাবে খাটো করার যথার্থ যুক্তিটা কি সেটা তিনি জানেন। তাছাড়া তার প্রতিও একটি মৌলিক প্রশ্ন এসে যায়। গণমাধ্যমে মত প্রকাশের পূর্বে তিনি কি উদ্যোগ বা বুদ্ধিমত্তা দেখিয়েছেন এই চার বিভাগের প্রাসঙ্গিকতা ফিরিয়ে আনতে?

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে প্রাসঙ্গিক বিভাগ বলতে তিনি কি চাকরির বাজার পাওয়া যায় এ ধরনের বিষয়কে বুঝিয়েছেন? যদি তিনি তাই করে থাকেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার শিক্ষকের মূল কাজ তার শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করতে শেখানো, গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা।

পাশাপাশি শুধু এই চার বিভাগ নয়, ‘ভাষা-সংস্কৃতি-সাহিত্য’ সৃজন করে এমন প্রত্যেক বিভাগকেও আরও নজরদারির মাধ্যমে পরিচর্যা করা উচিত। কারণ এই রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্ম সাংস্কৃতিক আত্মশক্তিকে অনুভব করে বাকিদেরও সম্মান-সৃজন করা। সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ববহ পদে থেকে এর চর্চার পরিধি কমানোর পক্ষে মতামত দিয়েছেন। কারণ তিনি হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখেন শুধু পেশায় যাবার একটা স্টেশন হিসেবে।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্নিহিত অর্থ আমাদের বৈশ্বিক জ্ঞানের কথা বলে, চর্চার কথা বলে, গবেষণার কথা বলে, নিজেদের নাগরিক হিসেবে অনুভব করার কথা বলে।

কাজেই মনিব-ভৃত্য কিংবা উর্ধতন বা অধঃস্তন এই চক্র থেকে বেরিয়ে নিশ্চিত করতে হবে নৈতিক গুরু-শিষ্য পরম্পরা। নইলে যে কোন সময় ঘটতে পারে চরম বিপর্যয়। কারণ বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন ‘তোমরা যেখানেই অন্যায় দেখবে সেখানেই চরম আঘাত হানবে’।

হায়দার মোহাম্মদ জিতু : প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046238899230957