বিশ্বের প্রতিটা দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা, টেকনোলজি, চিকিত্সা এবং অন্যান্য দিক দিয়ে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা, টেকনোলজি, চিকিত্সা এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমাদের উন্নতির অগ্রগতি অতুলনীয়। আমার মনে হয় আমরা বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী ও ধৈর্যশীল জাতি যা বিশ্বের আর অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। আমাদের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে যত বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হয় এত জ্ঞান আর বিশ্বের অন্য কাউকে রাখতে হয় না। এত মেধা নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পরও তো ভালো গবেষক আমাদের দেশে তৈরি হয় না। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর মেধাবীদের মেধা কোথায় হারিয়ে যায় এবং তাদের মেধার বিকাশ না হওয়ার সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া বড়ই কঠিন ব্যাপার। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর নতুন নতুন গবেষক বের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না কেন? আমাদের প্রতিটা ক্লাসে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী হয়ে থাকে। এই ৪৫ মিনিটের ভিতরে ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে একজন শিক্ষক একটা চ্যাপ্টার সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়া খুবই অসম্ভব ব্যাপার এবং কোনো স্টুডেন্ট যদি প্রশ্ন করে তাহলে উত্তর দেয়ার সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। যার ফলে স্পষ্ট ধারণা ছাড়াই ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ক্লাস থেকে বের হতে হয়।
আমি এখানে শিক্ষার মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে কিছু সুপারিশ রাখতে চাই যেটা শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেকটাই পরিবর্তন আনতে পারে।
ক. অনার্স এবং মাস্টার্সের ক্লাস ৯০ মিনিট করা যেতে পারে যাতে ক্লাস থেকে সমস্ত বিষয় সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীরা সুস্পষ্ট জ্ঞান নিয়ে যেতে পারে।
খ. সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয়টা ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আর অন্য দিনগুলো শিক্ষার্থীরা পার্টটাইম কাজ করে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে।
গ. উন্নতমানের লাইব্রেরি তৈরি করতে হবে যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বইয়ের ব্যবস্থা ও গবেষণার সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে।
ঘ. লাইব্রেরি সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যেতে পারে যাতে অনেক সময় ধরে লেখাপড়া করতে পারে। এবং যারা পার্টটাইম কাজ করবে তারা সন্ধ্যার পরে এসে রাত বারোটা পর্যন্ত পড়তে পারে।
ঙ. ভর্তি পরীক্ষা ও চাকরির জন্য সাবজেক্টভিত্তিক প্রশ্ন করতে হবে যাতে করে ঐ বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি ধারণা থাকে, যার ফল কাজে লাগিয়ে একজন গবেষক এবং ঐ বিষয় সম্পর্কে বিশ্লেষক হয়ে ওঠে।
চ. শিক্ষকদেরকে গবেষণার প্রতি আরো আন্তরিক হতে হবে এবং যদি কোনো শিক্ষকের গবেষণা না থাকে তাহলে তার প্রমোশন এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে অবহিত রাখা যেতে পারে।
ছ. জাতীয় শিক্ষানীতিতে গবেষণাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে তাহলে আমাদের দেশের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের
যে মেধা তা দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে বিস্ময়কর বাংলাদেশ হিসেবে দাঁড় করাতে পারবো।
আবারো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠবে এবং বিদেশ হতে আমাদের দেশে ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করতে আসবে তা দেশের অর্থনীতিকে অনেক হারে বৃদ্ধি করে থাকবে এবং দেশের নাম দেশ থেকে বিদেশে ছড়িয়ে যাবে।
লেখক:পিএইচ.ডি ক্যান্ডিডেট অ্যান্ড টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, ইনস্টিটিউট অফ পলিটিক্যাল সায়েন্স
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারক্লো, পোল্যান্ড।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক