শিক্ষার মানোন্নয়নই আমার প্রধান লক্ষ্য: শিক্ষামন্ত্রী - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার মানোন্নয়নই আমার প্রধান লক্ষ্য: শিক্ষামন্ত্রী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক: |

নতুুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষাখাতে গত ১০ বছরে অনেক বড় কাজ হয়েছে। বড় বড় অর্জন রয়েছে। সেইসব অর্জনকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে শিক্ষাখাতের বিষয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, ইশতেহার ধরে ধরে সেগুলো বাস্তবায়নে তিনি কাজ করবেন। ইশতেহার মানে জনগণের সঙ্গে সরকারের চুক্তি। এ ব্যাপারে তিনি শতভাগ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবেন। দৈনিক সমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি শিক্ষা নিয়ে তার পরিকল্পনা ও ভাবনা তুলে ধরেন। আজ সোমবার (২৮ জানুয়ারি) সাক্ষাতকারটি প্রকাশিত হয়। 

নিজ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্সের কথা জানিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির ব্যাপারে যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, এ মন্ত্রণালয়ও তার বাইরে নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে দুর্নীতি আগের চেয়ে কমেছে। তথ্য অধিকার আইন, তথ্য কমিশন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল- এ সবই দুর্নীতি কমানোর অংশ। গণমাধ্যমেরও ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। তাই দুর্নীতি সর্বত্র কমতে বাধ্য। মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালীদের দুর্নীতি দমন কমিশন ডাকবে, আগে এটা কেউ ভাবেননি। এখন দুদক একটা ভয়ের নাম। দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের সুদৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো বিষয়ে অভিযোগ এলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর এখন তিনি মন্ত্রণালয় সংশ্নিষ্ট সব কাজ জেনে ও বুঝে নিচ্ছেন। দায়িত্ব গ্রহণের তিন সপ্তাহের মধ্যে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়টি সামনে এসেছে। নকলমুক্ত, প্রশ্নফাঁসমুক্ত নির্বিঘ্ন পরীক্ষার জন্য করণীয় সবকিছু তারা এরই মধ্যে করেছেন। আশা করছেন, সম্পূর্ণ নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবারের এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে করণীয় অনেক কিছুই রয়েছে। মোটা দাগে শিক্ষার মান উন্নয়নই তার মূল ফোকাস। যত দিন যাবে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, সেগুলো মোকাবেলা করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য আগে জানা দরকার, মানের দিক থেকে আমরা এখন কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছি। সেটা জেনে নিয়ে, তারপর কাঙ্খিত মান অর্জনের করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট সবার মতামত নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার মানের সঙ্গে নানা বিষয় জড়িত। অবকাঠামো, শিক্ষক, কারিকুলামসহ আরও অনেক কিছু। শিক্ষাক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বড় আকারে সারাদেশে হয়েছে ও হচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষকের জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। শিক্ষাক্রম ২০১৪ সালে একবার রিভিউ হয়েছে। এরপরও নানা মতামত আসছে। অনেকে বলছেন, বইয়ের কোথাও কোথাও এটা না থেকে ওটা হলে আরেকটু ভাল হতো। এখন সুযোগ এসেছে সেগুলো দেখার, প্রয়োজন হলে পরিবর্তন করার।

ডা. দীপু মনি বলেন, জাতীয় মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে। গত ১০ বছরে অনেক কাজ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে পরিণত করার চেষ্টা করা হবে। শিক্ষকদের তৈরি করা ডিজিটাল কনটেন্ট সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। ঢাকায় নামি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রখ্যাত কোনো শিক্ষক যা পড়াচ্ছেন, তা যেন অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশের সব শিশুদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এভাবে ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানের দক্ষ শিক্ষকের অভাব কিছুটা পূরণ করা যায়। সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ল্যাবরেটরির যে অভাব রয়েছে, অনলাইনের মাধ্যমেও সে অভাব কিছুটা পূরণ করা যায়। হাতে-কলমে না হলেও শিক্ষার্থীরা দেখে কিছুটা বাস্তব জ্ঞান পাবে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এভাবে অনেক কিছু করা সম্ভব।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে দু'বছর বন্ধ ছিল। এখন তা হতে যাচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে ৩৯ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি বিদ্যালয়েও যোগ্য শিক্ষকের অভাব রয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে যোগ্য শিক্ষকের অভাব দ্রুতই পূরণের চেষ্টা করা হবে।

এক প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি তিনি অবহিত আছেন। স্পষ্টভাষায় বলেন, যেখানে শিক্ষকরা ক্লাসে না পড়িয়ে কোচিংয়ে বা নিজ বাড়িতে অর্থের বিনিময়ে পড়তে যেতে ছাত্রছাত্রীদের বাধ্য করবেন, কোচিংয়ে পড়তে না এলে স্কুলে ওই শিক্ষার্থীকে ফেল করিয়ে দেন, সেই কোচিং কোনোভাবে চলতে দেওয়া যায় না। নিষিদ্ধ নোট-গাইড বইয়ের বিকিকিনি বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এগুলো নিষিদ্ধ আছে। তিনি আশা করেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন আরও উদ্যোগী হবেন, যেন কোনোভাবেই এগুলো চলতে না পারে। অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, ঝুলে থাকা শিক্ষা আইন দ্রুতই প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

দেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রীর সম্মান অর্জন করা ডা. দীপু মনি এদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। এ দুই বিরল সম্মান লাভ করা দীপু মণি চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসন থেকে এ নিয়ে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

দেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষায় মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছি। অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এটা হলে তখন অন্যান্য দেশের অ্যাক্রিডিটেশন প্রসেসে ঢুকতে পারবো। তখন আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মানও বৈশ্বিক মানদন্ডে নির্ণয় করা যাবে।

কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিষয়ে নিজের মত তুলে ধরে ডা. দীপু মনি বলেন, কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে সবার মাইন্ড সেটে পরিবর্তন আনতে হবে। লাখ লাখ মাস্টার্স ডিগ্রি পাস তৈরি করা হবে নাকি কর্মমুখী শিক্ষার দিকে যাওয়া হবে, তা ঠিক করতে হবে। ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার্থী ২০ ভাগে উন্নীত করার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, এ শিক্ষাকে কতটা আকর্ষণীয় করে তোলা যাবে, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করবে। চাকরির বাজারের সঙ্গে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সংযোগ ঘটাতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি একাধারে চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং একজন আইনজীবীও। তিনি আওয়ামী লীগের তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য মরহুম এম.এ. ওয়াদুদের কন্যা তিনি। তার মা রহিমা ওয়াদুদ চার দশক শিক্ষকতা করেছেন। প্রথমবার মন্ত্রীত্ব গ্রহণের আগে দীপু মনি আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন।

তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পর যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স ইউনির্ভাসিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিও অর্জন করেন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

অক্সব্রিজ শিক্ষায় শিক্ষিত সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী তৌফীক নাওয়াজ ডা. দীপু মনির স্বামী। তাদের রয়েছে দুই সন্তান- পুত্র তওকীর রাশাদ নাওয়াজ ও কন্যা তানি দীপাভলী নাওয়াজ। 

 

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067489147186279