শিক্ষার্থী পাঠানো বন্ধের হুমকি শ্রীলঙ্কার - দৈনিকশিক্ষা

সরকারের জরিমানার টাকার ভার শিক্ষার্থীদের ওপরশিক্ষার্থী পাঠানো বন্ধের হুমকি শ্রীলঙ্কার

নূর মোহাম্মদ |

বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার্থী পাঠানো বন্ধের হুমকি দিয়েছে শ্রীলঙ্কান হাইকমিশন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ কড়া বার্তা দেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার। চট্টগ্রামে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ইউএসটিসি) শ্রীলংকান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোর্সের বাইরে অতিরিক্ত ৭২ হাজার টাকা আদায় করার অভিযোগ আসে হাইকমিশনে। পরে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ইউজিসিতে অভিযোগ নিয়ে আসেন হাইকমিশনার। 

বিষয়টি এখন সরকারের উচ্চ মহলে পৌঁছেছে। গত বছর অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তিকে কেন্দ্র করে একই ধরনের জটিলতা তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে সমাধান হয়। সেখানে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর দায়ে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় ইউএসটিসিকে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ জরিমানার টাকা দেয়ার কথা থাকলেও ইন্টার্নশিপের নামে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

বিষয়টি স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, একটা জটিলতার প্রেক্ষিতে এ ধরনের সমস্যা হয়েছে। আমরা গত সোমবার বসে তা সমাধান করেছি। আগেই আমি ইউএসটিসিকে সতর্ক করে দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের সনদ না দিলে কমিশন ইউএসটিসিতে শিক্ষার্থী না পাঠানোর গণবিজ্ঞপ্তি দেবে।  

সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রীলংকার হাইকমিশনার ক্রিসান্তে ডি সিলভা গত সোমবার কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে দুই শতাধিক শ্রীলংকান শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এর মধ্যে ইউএসটিসিতে সবেচেয়ে বেশি। সম্প্রতি ইউএসটিসি শ্রীলংকান শিক্ষার্থীদের মূল সনদ দিচ্ছে না। কোর্স ফি’র বাইরে অতিরিক্ত ৭২ হাজার টাকা না দেয়ায় তাদের মূল সনদ আটকে রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের জানানোর পরও সুরাহা হয়নি। এদিকে এসব শিক্ষার্থী শ্রীলংকায় বিভিন্ন মেডিক্যালে ইন্টার্নশিপ শুরু করছেন। মেডিকেল কর্তৃপক্ষ মূল সনদগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে চাইলে তারা দিতে পারছেন না। এ কারণে এ শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

শ্রীলংকা হাইকমিশনার তার চিঠিতে আরো বলছেন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে এ জটিলতার বিষয়টি আমাদের জানায়। এরপর বিষয়টি আমরা সরকারের একাধিক দপ্তরকে জানানোর পরও তা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসির সচিব ড. মো. খালেদকে চিঠি দিয়ে অবগত করে সাক্ষাতের সময় চান। এরপর গত ১০ই সেপ্টেম্বর ইউজিসির চেয়ারম্যান হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আলোচনা করেন।

সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিএমডিসি’র প্রতিনিধি, ইউজিসি ও ইউএসটিসি’র ভিসিসহ অন্য  কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়াকে আগামী ২০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মূল সনদ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ না মানলে ইউএসটিসিতে বিদেশি শিক্ষার্থী না পাঠাতে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে বলে জানানো হয় ইউজিসির পক্ষ থেকে। 

প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, শ্রীলংকার হাইকমিশনারকে এ সমস্যাটি অতিদ্রুত সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছি। একই সঙ্গে ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষকে শ্রীলংকার শিক্ষার্থীদের আগামী ২০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মূল সনদ দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, শ্রীলংকাও শিক্ষার্থী পাঠানো বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে। এটা আমরা সাধারণভাবে নিইনি। 

ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রফেসর আখতার হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা র্স্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করেছি। ইউজিসির চেয়ারম্যান একটি আলটিমেটাম দিয়েছেন। এর মধ্যে সনদ দিয়ে দিবে। না হয় পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি কত জটিল হলে হাইকমিশনার নিজেই চিঠি নিয়ে এসেছেন। এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিষয়। সুতরাং হালকা ভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইউএসটিসির ভিসি ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, যেখানে একাডেমিক শিক্ষা নেয়া হয় সেখানে ইন্টার্নশিপ করার নিয়ম আছে। কিন্তু শ্রীলংকান শিক্ষার্থীরা সেটি করতে চাচ্ছে না। এর আগে আমি বিভিন্ন ব্যাচে ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা দিয়েছি। বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে আমরা তাদের সনদ দিতে সম্মত হয়েছি।   

শিক্ষার্থীরা জানান, গত জানুয়ারি মাসে এমবিসিএস ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর গত ২৯শে মে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ইউএসটিসি ২০১৭ সাল পর্যন্ত মূল সনদের জন্য ৪৫০০ টাকা দেয়ার নিয়ম থাকলেও চলতি বছর জুন মাসের বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সেটি ৭২ হাজার টাকায় নির্ধারণ করে। আগে ইন্টার্নশিপ করার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও চলতি বছর থেকে তা বাধ্যতামূলক করা হয়। গত বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১০ কোটি টাকা জরিমানা টাকার ইন্টার্নশিপের নামে আদায় করা হচ্ছে। 

ইউজিসির তথ্য মতে, ইউএসটিসিতে ১৪টি দেশের মোট ২৪৮৩ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এর মধ্যে ছাত্র ১২১৬ জন এবং ছাত্রী ১২৬৭ জন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রীলংকার সবচেয়ে বেশি। এ দেশের মোট শিক্ষার্থী ১১১৫ জন। এরপর নেপালের ৭৬৬ জন, ভারতের ৪৬৪ জন, ভুটানের ৫৮ জন, মালদ্বীপের ৩৩ জন, পাকিস্তানের ২২ জন, মালয়েশিয়ার ৩ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৪ জন, নরওয়ের ১ জন, সৌদি আরবের ৪ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ২ জন, জর্ডানের ১ জন, মিশরের ১ জন এবং অস্ট্রেলিয়ার ১ জন। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ৭৪৬ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। 

জানা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষে বিধিবহির্ভূতভাবে মেডিকেল ও ডেন্টাল কোর্সে নির্ধারিত আসনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর দায়ে গত বছর ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমবিবিএস কোর্সের প্রতি ব্যাচে ৭৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি থাকলেও ইউএসটিসি পাঁচটি ব্যাচে তিন থেকে চার গুণ বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ২৫তম ব্যাচে প্রায় ২০০ বিদেশিসহ ৪১২ জন, ২৬তম ব্যাচে ১৫২ বিদেশিসহ ৪১৬ জন, ২৭তম ব্যাচে বিদেশিসহ ১৩১ জনসহ ২৮০ জন, ২৮তম ব্যাচে বিদেশিসহ ৯৭ জন এবং ২৯তম ব্যাচে মোট ১৫৩ শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। 

নির্দিষ্ট কোটার বাইরে কয়েকগুণ বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও এসব শিক্ষার্থীকে দেয়া হয়নি বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন। বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনের দাবিতে গত বছর ১১ই জানুয়ারি থেকে ইউএসটিসির এমবিবিএস কোর্সের পাঁচ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। এ আন্দোলনে ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপালসহ প্রায় ১৪টি দেশের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রায় দেড় মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এরপর দুই দফা তারিখ দিয়েও ২৫ ও ২৬তম ব্যাচের ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া হয়নি। এরপর গত বছর ৪ঠা ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের সব ধরনের চিকিৎসাসেবাও বন্ধ করে দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

 

সৌজন্যে: মানবজমিন

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073320865631104