উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি। এখানে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সও চালু আছে। কম খরচে পড়াশোনার জন্য দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে আসে। তবে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকসংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া আরো অনেক সমস্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
বলা হচ্ছে নরসিংদীর শিবপুরের শহীদ আসাদ কলেজের কথা। জানা গেছে, উনসত্তরের গণঅভ্যুথানের নায়ক শিবপুরের কৃতি সন্তান শহীদ আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের (আসাদ) নামে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয় কলেজটি। এর প্রতিষ্ঠাতা শহীদ আসাদের রাজনৈতিক সহকর্মী, পরবর্তী সময়ে শিবপুরের সাবেক সাংসদ এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া। শিবপুরের তৎকালীন কৃষক, শ্রমিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষের শ্রমে-ঘামে একটু একটু করে দাঁড়িয়েছে এই কলেজ। পরে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বর্তমানে কলেজের মোট শিক্ষার্থী ৯ হাজার ৩৬৮। এর মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগে ৩০১ জন, মানবিক বিভাগে ১ হাজার ৭১ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১৪৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি আছে।
আবার এ কলেজে ১১টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু অছে। মাস্টার্স কোর্স চালু আছে ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে। তবে এত শিক্ষার্থীর বিপরীতে আছে ১৬ টি শ্রেণিকক্ষ। সে সঙ্গে আছে শিক্ষক সংকট। মাত্র ৪৪ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে কার্যক্রম।
অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি কলেজ হওয়ায় বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর বিপরীতে কলেজটিতে নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনেও আবাসিক হল ও যাতায়াতের জন্য নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। আবাসিক হল না থাকায় বাইরে থেকে আসা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। কলেজের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় গণপরিবহনে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় দুরের শিক্ষার্থীদের। এই কলেজে বর্তমানে কিশোরগঞ্জের ভৈরব, গাজিপুরের কাপাসিয়া, নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার, নরসিংদীর মনোহরদী, রায়পুরাসহ বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়ছে। তাদের যাতায়াতের জন্য বাস দরকার। এছাড়া কলেজে মিলনায়তন, পরীক্ষার হল ও কমনরুম নেই।
কয়েকজন শিক্ষক বলেন, মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ৫০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০০ জনকে একটি বড় শ্রেণিকক্ষে কোনোরকমে বসার সুযোগ দেওয়া যায়। বিজ্ঞান ভবনের ভেতরে একাধারে অনার্স, ডিগ্রি, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হয়। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে আসে, কিন্তু সবাইকে বসার জায়গা দেওয়া সম্ভব হয় না। সংস্কৃতিচর্চা, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সহায়ক কার্যক্রমও ঠিকমত হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে পাঠদান সম্ভব হয় না। এসব কারণে ফল বিপর্যয় ঘটে। নতুন পদ সৃষ্টি, শূন্যপদ পূরণ, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও আবাসিক হলের ব্যবস্থা করা গেলে এসব সংকট থেকে মু্ক্তি পাওয়া যাবে।
কিশোরগঞ্জ থেকে নিয়মিত কলেজে আসেন ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. নওশেদ। তিনি বলেন, আবাসিক হল না থাকায় বাইরে থেকে আসা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। পরিবহন না থাকায় পাবলিক বাসে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। সঠিক সময়ে পৌঁছানো যায় না। কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. মোহসীন কবির বলেন, ‘জায়গা আছে ২০ জনের, ভর্তি হচ্ছে ১০০ জন। যেহেতু কলেজের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বসার জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না, তাই আসনসংখ্যা কমানোর জন্য আবেদন করা হবে। যাতায়াতের ভোগান্তি এড়াতে দুটো বাস দরকার। আমাদের কলেজে ছাত্র সংসদ নেই, থাকলে সেই তহবিলের জমানো টাকায় একসময় বাস কেনা সম্ভব হতো। শূন্যপদ পূরণ, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও আবাসিক হলের সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আমরা বিভিন্ন দিক থেকে চেষ্টা করছি।
জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘কলেজটির জন্য একটি ছয়তলা ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর নির্মাণকাজ শুরু হবে। কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য দুটি বাস বরাদ্দ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি। তিনি আমাকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।